Chapter Index

    একটি লোকের পর পর এত ছেলে জন্মাতে লাগল যে তার যত বন্ধুবান্ধব ছিল সবাই একটি একটি করে তার ছেলেদের ধর্মবাবা হবার পর বন্ধু ফুরিয়ে গেল। যখন তার আরও একটি ছেলে জন্মালো সে ভেবেই পেল না এবার কাকে ধরবে!

    একদিন রাত্রে চিন্তান্বিত হয়ে যখন সে ঘুমিয়ে পড়ল সে এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখল। স্বপ্ন দেখল কে যেন তাকে বলছে— কাল সকালে বেরিয়ে প্রথমেই যাকে দেখবে তাকেই তোমার ছেলের ধর্মবাবা হতে বলবে। ঘুম ভেঙে উঠে সে ঠিক করল স্বপ্নে যে আদেশ পেয়েছে তা-ই করবে। তাড়াতাড়ি পোশাক পরে সে বেরিয়ে গেল। দরজা পেরতেই একজন অচেনা লোকের সঙ্গে তার দেখা। সে বলল— আপনি আমার ছেলের ধর্মবাবা হবেন?

    অচেনা লোকটি সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তার হাতে একটা গেলাস দিয়ে বললে— এটি একটি অতি আশ্চর্য গেলাস। এতে যে জলই ভরবে, সেই জলের গুণে রুগীর রোগ ভালো হয়ে যাবে। কিছু না, শুধু দেখো যমরাজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন— রুগীর মাথার কাছে না পায়ের কাছে? যদি দেখ যম মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন তাহলে জল খাইয়ে দিও, রুগী দেখতে দেখতে ভালো হয়ে উঠবে। যদি দেখ যম পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন তাহলে বুঝবে যে রুগী মরবেই—জল খাইয়েও কিছু হবে না।

    অচেনা লোকটি তারপর তার ছেলের ধর্মবাবা হতে রাজি হল।

    এদিকে লোকটি সেই আশ্চর্য গেলাসের গুণে প্রচুর নাম প্রচুর টাকা করে ফেলল। গেলাসের জলের আশ্চর্য রোগ সারাবার ক্ষমতা, তা ছাড়া গেলাস হাতে থাকলে আগে থেকেই সে বলে দিতে পারত রুগী বাঁচবে না মরবে। চারিদিকে তার খ্যাতি ছড়াতে ছড়াতে শেষে রাজার কানে উঠল। রাজা তাকে ডেকে পাঠালেন। রাজার এক ছেলের খুব অসুখ। এই আশ্চর্য ডাক্তার রাজপুত্রের ঘরে ঢুকেই দেখলেন যম মাথার কাছে দাঁড়িয়ে। তখন তাকে গেলাসের জল খাইয়ে সারিয়ে তুলতে আর কতক্ষণ? এরপর রাজা আবার তাকে ডেকে পাঠালেন। সেবারেও ওই একই ব্যাপারে। কিন্তু তিন বারের বার যখন ডাক্তার এলেন, তিনি দেখলেন এবার যমরাজ ছেলের পায়ের কাছে বসে রয়েছেন। তিনি বুঝলেন এ ছেলে আর বাঁচবে না। রাজাকে তাই বলে তিনি চলে গেলেন। ছেলে মারা গেল।

    এর কিছুদিন পরে ডাক্তারের কৌতূহল হল দেখতে কোথায় তাঁর ছেলের ধর্মবাবা যিনি তাঁকে এমন আশ্চর্য গুণ-ওয়ালা গেলাস দিয়েছেন তিনি থাকেন, কেমনই বা আছেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাড়িতে পৌঁছে ডাক্তার চমকে উঠলেন। বাড়ির সিঁড়ির প্রথম ধাপে একটা ঝাঁটা আর একটা ন্যাতা পরস্পর ঝগড়া করছে আর ভীষণ মারামারি করছে।

    ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন— বাড়ির কর্তা কোথায়?

    ঝাঁটা বলল— এক ধাপ উপরে।

    ডাক্তার দ্বিতীয় ধাপে উঠে দেখলেন, এক গাদা কাটা আঙুল পড়ে রয়েছে।

    তিনি আবার জিজ্ঞেস কলেন— কর্তা কোথায়?

    একটা কাটা আঙুল বললে— এক ধাপ উপরে।

    তৃতীয় ধাপে দেখা গেল স্তূপাকার মানুষের কাটা মাথা। তারা ডাক্তারকে আর এক ধাপ উপরে দেখিয়ে দিল।

    চতুর্থ ধাপে একটা গরম কড়াইয়ে একটি মাছ চিড়বিড় করে নিজেই নিজেকে ভাজছে।

    মাছ বলল— আর এক ধাপ উপরে যান।

    পঞ্চম ধাপে পৌঁছে ডাক্তার দেখলেন ঘরে যাবার একটা দরজা রয়েছে। দরজার গায়ে চাবির ফুটো; তার মধ্যে চোখ দিয়ে দেখতে পেলেন ধর্মবাবা বসে আছেন। কিন্তু কি আশ্চর্য, তাঁর মাথায় যে প্রকাণ্ড দুই শিং! ডাক্তার ঘরে ঢুকতেই শিং-ওয়ালা ধর্মবাবা তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে বিছানায় ঢুকেই নিজের উপর চাদর চাপা দিয়ে দিল।

    ডাক্তার তখন বললেন— এরকম অতি অদ্ভুত বাড়ি আমি তো কখনও দেখিনি মশাই— এর মানে কি? বাড়িতে ঢোকবার সিঁড়িতে কত রকমের বিচিত্র ভয়াবহ জিনিস। সবাই বলে, এক ধাপ করে উপরে যাও। তারপর যখন এই ঘরের দরজার সামনে এসে পৌঁছলুম, চাবির ফুটো দিয়ে উঁকি মেরে দেখি মাথায় এক জোড়া শিং নিয়ে আপনি বসে আছেন!

    এখন, শিং থাকে কার? মাথায় শিং থাকে স্বয়ং শয়তানের!

    যেই না ঐ কথা বলা অমনি ধৰ্মবাবা বজ্রের মতো গলায় ধমকে উঠলেন— কখ্‌খনো না! মিথ্যে কথা!

    সেই শুনে ডাক্তার ভয়ে ছুটে পালাতে গেলেন। কিন্তু তারপর যে কি হল কেউ জানে না। কারণ সেই ডাক্তারকে আর কেউ কোনোদিন দেখেনি।

    টীকা