Chapter Index

    একটি ছিল ছোট্ট মেয়ে—তার বাবা মা দুজনেই মারা গিয়েছিলেন। মেয়েটি এতই গরীব যে তার থাকবার কোনো ঘর ছিল না। শেষে তার সব গেল, শুধু রইল গায়ের কাপড়টুকু আর রইল এক টুকরো রুটি। দয়া করে কে যেন রুটিটুকু তার হাতে তুলে দিয়েছিল। মেয়েটি ছিল বড় ভালো, বড় ধার্মিক। সবাই যখন তাকে ত্যাগ করল, সে কি আর করে, ভগবানের উপর আস্থা রেখে যে দিকে দু-চোখ যায় বেরিয়ে পড়ল।

    কিছুদূর যেতেই এক গরীবের সঙ্গে তার দেখা। সে বললে—আমার বড় খিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দাও।

    মেয়েটি তার রুটিটা বাড়িয়ে দিয়ে বললে—আর তো কিছু নেই। ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে এইটুকুই গ্রহণ কর। বলে রুটিটি তার হাতে দিয়ে সে এগিয়ে চললো।

    তারপর একটি ছেলে এল। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললে—আমার মাথায় এত শীত করছে, মাথা ঢাকবার জন্যে একটা কিছু দাও না!

    মেয়েটি তার মাথা-ঢাকা খুলে ছেলেটির মাথাতে পরিয়ে দিল।

    তারপর আরও কিছু দূর যেতে আর একটি শিশুর সঙ্গে দেখা। তার গায়ে কোনো কোট নেই—শীতে প্রায় জমে গেছে।

    মেয়েটি নিজের কোট খুলে তার গায়ে পরিয়ে দিল।

    আর কিছু দূর গিয়ে একজন তার ফ্রক চাইলো। মেয়েটি সেটিও দিয়ে দিল।

    শেষে যখন সে বনের মধ্যে এসে পৌঁছল তখন অন্ধকার হয়ে আসছে। সেই সময় আর একটি শিশু এসে তার কাছ থেকে তার জামাটা চাইল।

    মেয়েটি ভাবল—অন্ধকার তো হয়েই গেছে, কে আর আমায় খালি গায়ে দেখবে—জামাটা দিয়েই দি। ভেবে নিজের গা থেকে জামা খুলে ছেলের গায়ে পরিয়ে দিল।

    এই ভাবে যখন রিক্ত হয়ে সে বনের মধ্যে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ আকাশ থেকে কতকগুলি তারা ঝরে পড়ল। মেয়েটি দেখে তারা নয় তো, একমুঠো টাকা, আর সেই সঙ্গে মসৃণ কাপড়ের একটা নতুন পোষাক। মেয়েটির চারিদিকে টাকা ঝরে ঝরে পড়তে লাগল। সে সবগুলি টাকা সংগ্রহ করে গ্রামে ফিরে গেল। তারপর সারা জীবন তার আর কোনোদিন কোনো অভাব হয়নি।

    টীকা