সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ
    বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;
    সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে
    নির্জনতা আছে।
    এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা
    সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।
    কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে;
    তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়।
    আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রের ঘুরে প্রাণ
    পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো
    ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু,
    দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত
    ভাই বোন বন্ধু পরিজন পড়ে আছে;
    পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
    মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।
    কেবলি জাহাজ এসে আমাদের বন্দরের রোদে
    দেখেছি ফসল নিয়ে উপনীত হয়;
    সেই শস্য অগণন মানুষের শব;
    শব থেকে উৎসারিত স্বর্ণের বিস্ময়
    আমাদের পিতা বুদ্ধ কনফুশিয়াসের মতো আমাদেরও প্রাণ
    মূক করে রাখে; তবু চারিদকে রক্তক্লান্ত কাজের আহ্বান।
    সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে — এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
    সে অনেক শতাব্দীর মানষীর কাজ:
    এ বাতাস কী পরম সূর্যকরোজ্জ্বল;–
    প্রায় তত দূর ভালো মানবসমাজ
    আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে
    গড়ে দেব আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে।
    মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসছি,
    না এলেই ভালো হত অনুভব করে;
    এসে যে গভীরতর লাভ হল সে সব বুঝেছি
    শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে;
    দেখেছি যা হল হবে মানুষের যা হবার নয়–
    শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়।

    টীকা