জীবিত হে নক্ষত্র সময়, ডানা
জয় গোস্বামী দ্বারাজীবিত হে নক্ষত্র সময়, ডানা
যদি আমার ঠাণ্ডা না লাগত, যদি কম্প দিয়ে না আসতজ্বরযদি আমার নাক দিয়ে গড়িয়ে না পড়ত গরম কাঁচাঘিলু
যদি আমার মাথার মধ্যে ধীরে ধীরে না জমে উঠততেলকোটি কোটি বছরের জমানো তেল আমার মাথার মধ্যেটগবগ ক’রে না ফুটত যদি
যদি আমার ব্রহ্মতালু ফুটো ক’রে না ঢুকতকয়েকশ’ পাইপযদি আমার শীর্ষ থেকে আকাশে ছিটকে না উঠতরক্ত মেশানো বীর্য
যদি আমার হৃৎ, অখণ্ড হৃৎপিণ্ড আমার যদি নিজে থেকেইকড়কড় শব্দে দুভাগ হয়ে না যেত দুই অন্ধকার অলিন্দেযদি রাতের বেলায় তার মধ্যে নেমে না পড়তমহিলারা আর স্ত্রীলোকেরা
আর যদি সেখানে খুঁজে না পেত কয়লার স্তরযদি তারা শাবল গাঁইতি আর বেলচা নিয়েঠংঠঙাস্ ক’রে না ভাঙত রাশি রাশি কয়লানা কামড়াত যদি রাশি রাশি কয়লানা গিলত যদি
যদি দেবদূত বা তাঁর সুপুত্র নিজে এসে আমাকে না বলতেনপিনাকী, সেই প্যাগোডার মতো মেয়েছেলেটা কোথায় রে, সেই যেতুই চা আনতে যাচ্ছিলি আমি হাত বোলাচ্ছিলাম আরআমি চা আনতে যাচ্ছিলাম তুই হাত বোলাচ্ছিলি
যদি খনিগর্ভ থেকে দলবেঁধে উঠে না আসত বিশাল বক্ষঅন্ধকার রমণীরা, যদি বুকে করাঘাত করতে করতেহি হি ক’রে না কাঁদত তারা, হাউ হাউ ক’রে না হাসত যদিআর সেই শব্দে শব্দে কুয়ো আর ডোবা আর পায়খানার ট্যাঙ্কিরভেতর থেকে যদি হিল হিল ক’রে না বেরিয়ে আসতকবেকার বস্তাবন্দী গুম-করা সব দোমড়া মোচড়া শরীর, তাদেরসন্তানদের শরীর
যদি আমি যে-কোনো দেয়ালেই ভালোভাবে মূত্রাঘাতকরতে পারতাম সকল লোকের মতোআলোয়, আঁধারে চলতে পারতাম যদি সকল লোকের মতোআমিও হতাম আর্নিং মেম্বর, যদি বেশ আমারও থাকতোবৈধ অবৈধ নানান সব সম্পর্ক, যদি বেশ আমারও থাকতোসংগ্রামী চেতনা, কিংবা আপোষহীনমনোভাব কিংবা ‘এও বলা যায় মা, তোমার কী মহিমা’
যদি একদিন ভোরবেলা আমার একটি হাত রূপান্তরিত না হতগন্ধরাজের একটি শাখায়, আর কবিতাপাগল মেয়েটির কপালেএকগুচ্ছ পাতা, কেবল একগুচ্ছ পাতা ছুঁইয়ে দিয়ে যদিনা বলতাম: না মামণি, বাড়ি যাও, আমি নয়, অন্য কেউঅন্য কেউ, সে তোমার ভাল বন্ধু হবে
যদি আমি না ঘুমাতাম বাজারের মধ্যে রাত্রিবেলার নিঃঝুমবাজারের মধ্যে কপিপাতার স্তূপের নীচে না ঘুমতাম যদি ষাঁড়েরনাদি আর পচা আনাজতরকারি মাঝখানে ইসমাইলের বঁটিরছায়ায় বরফদেওয়া মাছের ঝুড়ির মধ্যে ঘুমতাম যদিমাছ হয়ে
যদি বেশ আমারও কে-জি হত ৪৭ টাকা পরদিন সকালে,যদি আমাকে লা’ইন দিয়ে কিনে নিয়ে যেতেন বড়বাবু মেজবাবুন-বাবু ফুলবাবু, যদি কিনতেন বালতি ব্যাগ ও চাকর সহববকাট বৌদি, যদি দারুণ ভাল রান্নাঘরে দারুণ যত্নেরান্না হতাম আমি আর আমার মুড়োটা চুরি করেপালাত পাশের বাড়ির পাজির পাঝাড়া বেড়াল
যদি হঠাৎ একদিন অর্ধেক রাতে জেগে ওঠে আমি না বুঝতাম যে আমিঅযোনিসম্ভূতযদি না বুঝতাম যে কাব্যদেবীর স্ত্রীঅঙ্গ থেকে নয়, তাঁরইস্পাত নির্মিত জন্মদ্বার থেকে নয়, আমি বেরিয়েছি তাঁরপায়ুবিবর থেকে
বেরিয়েছি আর ছিটকে পড়েছি একখণ্ড নিটোল মলের ন্যায়ছিটকে পড়েছি যশঃপ্রার্থনার ধবধবে শাদা কমোডেটলটল করছি স্বচ্ছ জলেওডোনিল, ওডোনিল
যদি আমি এই আমি না হয়ে হতাম অন্য একটি পুরুষআর ভালবাসতাম সেই মেয়েটিকে যে আগুনের মধ্যেবমি করেছিল শ্বশুরবাড়ির ভাতযদি আমি এই আমি না হয়ে হতাম একটি মেয়েআর ভালবাসতাম সেই ছেলেটিকে যাকে ছিন্ন ভিন্ন করেছিলএকদল ক্রুদ্ধ সমকামী
যদি আমি বখে না যেতাম, ও শঙ্খবাবু, শ্রীচরণেষু শঙ্খবাবু,সাহিত্য সাহিত্য করে যদি চিরকাল না লাফাতামঅল্প বয়েস থেকেই যদি উচ্ছন্নে না যেতাম আপনার কবিতা পড়ে,যদি আমি নাচতে পারতাম তাসা-র সঙ্গে, সিটি মারতে পারতামযদি আমি ব্যাঞ্জো বাজাতেও শিখতাম অন্ততচটরপটর বাজাতেও শিখতাম যদি
যদি চটরপটর বাজিয়ে বাজিয়ে ট্রেনের কামরা থেকে কামরায়গান গাইতাম আর পয়সা তুলতাম যদি অনায়াসেই চলে যেতামএদেশ থেকে সেদেশ একজন চমৎকার ভিখিরি হিশেবে নাম করতাম, উঃভিখিরিদেরও কী ভাল স্বাস্থ্য হয়, যদি আমি গাইতে পারতামরাত তিনটের গান
রাত তিনটের গান: অ্যাকাডেমি বা নেতাজি ইনডোরের নয়রবীন্দ্রসদন বা কলামন্দিরের নয়যদি গাইতে পারতাম বাগনান আর বেলঘরিয়া স্টেশনেরধুলিয়া আর পলাশপুর স্টেশনের ভুবনগড় আরকাঁচরাপাড়া স্টেশনের রাত তিনটের গান
যদি আমার গান হত শীত তাড়ানোর জন্য, যদি আমার গান হতশীত তাড়ানোর জন্য ভিখিরিদের সমবেত হস্তমৈথুনের উল্লাসযে-মিলন তারা কখনো পায়নি কল্পনা করেনি স্বপ্নেও, যদিআমার গান হত সেই মিলনের সমস্ত সম্ভব অসম্ভব চূড়া, যদি হতধাপে ধাপে স্বর্গ, অর্গ্যাজ্ম্স্বর্গ, অর্গ্যাজ্ম্স্বর্গঅগ্যাজ্ম্
স্বর্গ, স্বর্গের রাস্তা, স্বর্গের রাস্তায় যদি শেষরাত্রে আমাদের তাঁবুর পর তাঁবু মাড়িয়ে না যেত ট্যাঙ্কযদি ঘুমন্ত আর স্বপ্নাতুর অবস্থায় স্বর্গের রাস্তায় আমাদের তাঁবুর পর তাঁবু মাড়িয়ে না যেত ট্যাঙ্কযদি চুম্বনরত অবস্থায়, ওঃ যদি চুম্বন শেষ করার আগেই আমাদের তাঁবুর পর তাঁবু মাড়িয়ে না যেত ট্যাঙ্কযদি সাঁজোয়ার চাকায় চাকায় পিষে না যেত যদিএকসঙ্গে মিশে না যেত আমার কিশোর দেহ তোমার কিশোরী শরীরআর সেই মুহূর্ত থেকে, হে জীবিত নক্ষত্রসময়, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই
যদি আগুনের মধ্যে আমরা না জন্মাতামযদি না মেঘের দিকে উঠিয়ে দিতাম আমাদের শীষ
যদি হাওয়া আমাদের নাম ধরে না ডাকতযদি আমাদের চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে আদর না করত বর্ষাযদি আমরা ডুব না দিতাম সমুদ্রে যদি ঘোড়াসুদ্ধু লাফিয়েঘোড়াসুন্ধু লাফিয়ে যদি আমরা পাহাড় থেকে ঘোড়াসুদ্ধু লাফিয়ে
মাটিতে পড়ার বদলে হুউশ করে চাঁদের দিকে উড়ে না যেতামযদি আমরা আকাশ থেকে না দেখতাম মগডালের ছুটন্ত কাঠবেড়াল
যদি আমাদের হাত না হত, পা না হতযদি আমাদের নাম না হত ঘূর্ণিহাওয়া আর জলোচ্ছ্বাসযদি আমাদের নাম না হত বৃষ্টি আর ধানযদি আমরা না হতাম দীপঙ্কর সংযম স্বপ্নময়না হতাম তিস্তা শর্মিষ্ঠা বৈশাখী
যদি আমরা নিজের মধ্যে না রাখতাম অশ্রু আর আলোযদি আমরা শরীরের মধ্যে একই সঙ্গে বইতে না পারতাম মৃত্তিকা আর বীজতোমার ডিম, ও বুনো কোকিল, যদি তোমার ডিমতোমার ডিম বুকে করে যদি না আমি আগ্নেয়গিরির গহ্বর থেকে ভেসে উঠতাম চূড়ায়
যদি সেই জ্বালামুখের দুই কিনারে দুই পা রেখে না দাঁড়াতামআর আকাশ ভরে উৎক্ষিপ্ত ছাতার মতভস্মমেঘ সরিয়েযদি তারার হাতে আমি তুলে না দিতাম তোমার শিশুতাহলে,তাহলে, বলো, তাহলে, তাহলে
কী হত তোমার আর কী হত আমারকী হত আলোর গতি, কী হত পদার্থপ্রাণ কী হত সমুদ্রশূন্যে শতাব্দী শতাব্দীব্যাপী ডানা