যাঃ বাব্বা
শৈলেন ঘোষ দ্বারাসে অনেকদিন আগের কথা। হঠাৎ একদিন মা দুগ্গার সিংগির মাথায় ভূত চাপল। ভূত! কী ব্যাপার? সে মনস্থির করল, স্বগ্গ থেকে লাফ মেরে একাই একদিন মর্তভ্রমণে যাবে। পৃথিবীর হালচালটা সে একবার নিজের চোখে একা একা দেখে আসবে।
তা যেমন ভাবা, তেমন কাজ। জ্যান্ত হয়ে তো তার কোনোদিন মর্তে আসা হয়ে ওঠেনি। কেমন করে হবে। যখনই এসেছে মা দুগ্গাকে পিঠে নিয়ে মাটির ঢেলা হয়ে, অসুরের সঙ্গে মারামারি করতে করতে। তার সঙ্গে আবার মা দুগ্গার ছেলে-মেয়েরা। সবই পুতুল। তা, বলতে কী, পুতুল সেজে মর্তে আসতে কি মন সায় দেয় একজন এমন জবরদস্ত সিংগির। তাই, এবার সিংগিমামা, কাউকে কিছু না বলে একাই মারল একটা বাজখাঁই লাফ। ধপাস করে পড়ল গিয়ে পৃথিবীর একটা মাঠের ধারে। পুকুরপাড়ে। ঘুপসি মেরে বসে রইল।
বসে-বসে সিংগিমশাই ড্যাবড্যাব করে এধার-ওধার দেখতে লাগল। তারপর ভাবল, দুর, এ কোথায় এলুম রে! না জনমনিষ্যি, না কিছু। কেউ ডাকেও না, কেউ হাঁকেও না। আমি হেন দুগ্গার সিংগি আমাকে কেউ গ্রাহ্যই করছে না! পৃথিবীর মানুষগুলো তো ভারি অসভ্য একটুও সৌজন্যবোধ নেই। এতখানি আকাশ- পথ পেরিয়ে আসছি খিদে-তেষ্টা পেয়েছে কি না সেটাও তো জিজ্ঞেস করবে! এদিকে যখন মাটির পুতুল হয়ে সিংগি সেজে দুগ্গামায়ের সঙ্গে আসে, তখন খাতিরের ঠেলায় চক্ষু চড়কগাছ। এটা খাওয়াচ্ছে, ওটা পরাচ্ছে, সবসময় একেবারে তটস্থ। এই বুঝি পানের থেকে চুন খসল। এই বুঝি দুগ্গামা রাগ করে বসলেন।
‘কে হ্যাঁ?’
চমকে উঠল সিংগিমামা। তার পেছনে কে যেন ঘ্যাং করে হেঁকে উঠল।
সিংগিমশাই চমকে উঠেই পেছনে মুখ ঘুরিয়েছে। দেখে অবাক। যা: চ্চলে! এ কে রে! এমন বিদঘুটে জীব সিংগিমশাই কখনো তো স্বপ্নে দেখেনি। এদেরই কি মর্তের মানুষ বলে!
সিংগির কথা শুনে কার না হাসি পায়! এটা একটা ব্যাং। ব্যাংটাকে মানুষ ভেবে বসেছে হাঁদা সিংগিটা। সিংগিমশাই তাকে দেখে, তাই গলাটা বেশ গম্ভীর করে বলল, ‘দেখতে পাচ্ছিস না, আমি মা দুগ্গার সিংগি।’
ব্যাংটা অমনি সঙ্গে সঙ্গে খেঁকিয়ে উঠে বললে, ‘যা: দুগ্গার সিংগি, না আর কিছু! যা যা, আর ধিঙ্গিপনা করতে হবে না। পায়ে এমন দেব লেংগি, যে টেংরি ভেঙে লেংড়ি হয়ে খুঁড়িয়ে বেড়াবি।’ বলে ব্যাং ধমক মারল, ‘হ্যাঁ, মা দুগ্গার সিংগি! ফাজলামি করার জায়গা পায়নি।’ বলেই ব্যাংটা সামনের পুকুরটায় একটা গোঁত মেরে ডুব দিয়ে পালিয়ে গেল।
আর মা দুগ্গার সিংগি খানিক জুলজুল করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে থমকে গেল। তারপর নিজের মনেই অবাক স্বরে বলে উঠল, ‘যা: বাব্বা!’