উড়ুক্কু ভূত

    সেদিন দুপুরবেলা ঝড় উঠেছিল—সাঁই-সাঁই-পাঁই-পাঁই করে। আর অমনি ঝড়ের ঝাপটায় বাগানে একটা ভূত ঢুকে পড়েছে। উরি বাবা—কী চেহারা ভূতটার। ড্যাবরা-ড্যাবরা চোখ, থ্যাবড়া-থ্যাবড়া নাক আর ফিনফিনে ফুরফুর। হাত নেই পা নেই, ধড়কাটা নড়া-ছটকানো ভূত। দাঁত ছরকুট্টে বাগানে ঢুকে হাওয়ায় ছুটছে।

    প্রথম ভূতটাকে দেখতে পেয়েছিল কাক-ছানাটা। ঝড়ের সময় নিমগাছের বাসায় সে ঘাপটি মেরে বসেছিল। এমন সময় ভূতটা কোত্থেকে এসে একেবারে ওর ঘাড়ে। কাক বাছাধন ক্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ করে কেঁদে ওঠার আগেই ভূতটা তার ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে একেবারে পেয়ারাগাছের ফোকরে। পেয়ারাগাছে একটা কাঠবিড়ালি, ডাল জড়িয়ে ঝড়ের হাওয়ায় দোল খাচ্ছিল। ধড়কাটা ভূতটা যেই-না কাঠবিড়ালিটার মুখের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, অমনি কাঠবিড়ালিটা ‘ও মাগো জলজ্যান্ত ভূত গো’—বলেই ডাল থেকে ছিটকে একেবারে অজ্ঞান হয়ে মাটির ওপর লটকে পড়ল।

    ঝড়ের তেজ বাড়ল, আবার ভূত ছুটল। পেয়ারাগাছ থেকে আমড়াগাছে। আমড়াগাছে মামদোবাজি লাগিয়ে দিলে। দিনের আলোয় হুতুমমুখো প্যাঁচাটা বাঁ-চোখের পর্দা ফেলে, ডান চোখটা খুলে ঝড়ের গুলতানবাজি দেখছিল। ফস করে ভূতটা তার মাথায় একটা ‘টোকা’ মারতেই, -‘কে র‌্যা?’- বলে গম্ভীর চালে ধমকে উঠেছে। ধমকে উঠে যেই-না বাঁ চোখ খুলে ডান চোখ বুজেছে, আবার ডান চোখ বুজিয়ে বাঁ চোখ খুলেছে, ব্যাস, অমনি সোনার-চাঁদের পিলে শুকিয়ে পাঁপড়ভাজা হয়ে গেছে। দু-চোখ আর একসঙ্গে চাইতে হল না। গলায় ঢোঁক গিলতে গিলতে কঁক করে দম আটকে বেচারা স্বর্গে গেলেন।

    আবার ছুট। ঝড় ছোটে, ঝড়ের সঙ্গে ভূত ছোটে, ভূতকে দেখে ইঁদুর ছোটে, ইঁদুরকে দেখে ব্যাং ছোটে, ব্যাংকে দেখে ফড়িং ছোটে, ফড়িংকে দেখে চড়াই ছোটে, শালিক ছোটে। ছুটতে ছুটতে ভূতটা গিয়ে পড়ল বেগুনগাছের কাঁটায়। বেগুনগাছের কচিপাতায় দোল খেতে খেতে একটা গুটিপোকা কুটকুট করে পাতা খাচ্ছিল। ভূতটাকে দেখে গ্রাহ্যি নেই! খাচ্ছে তো খাচ্ছেই। আপন মনে খাচ্ছে। ভূতটা কচিপাতার ওপর উড়ে বসল। গুটিপোকাটা অমনি সঙ্গে সঙ্গে এদিক থেকে ওদিকে ঘুরে বসল। মনে মনে গুটিপোকাটা বললে ‘ছাই, ভূত না আর কিছু।’

    ওমা! অমনি ঝড় গেল থেমে। ঝমঝম করে বৃষ্টি এল। আর সেই সৃষ্টিছাড়া ভূতটা জলের তোড়ে ব্যাস! ফ্যাঁস! ভূতের চেহারাটা জলের তোড়ে ভিজে—ফাঁক। ভূতের চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে দরদর করে বেরিয়ে এল জলে গোলা রং। রং ফুরোলে, মনে হল কাকুর খবরের কাগজের যেন একটা ছেঁড়া পাতা। সেই ছেঁড়া পাতায় কে যেন ভূতের ছবি এঁকেছে! খবরের কাগজ মার্কা আচ্ছা গোলমেলে ভূত তো এটা!

    টীকা