পেটফট সিং
শৈলেন ঘোষ দ্বারাহঠাৎ ঝড় উঠল। উফ, ঝড় মানে কী, যাকে বলে তান্ডব। অনেকক্ষণ ধরেই আকাশ মুখ গোমড়া করে কোমর বাঁধছিল। বোঝাই যাচ্ছিল একটা কিছু অঘটন ঘটাবে মেঘেঢাকা আকাশ। শেষমেশ হলও তা-ই। দিগবিদিক একেবারে ধুলোয় ঝাপসা করে সে কী দাপাদাপি ঝড়ের! তার ওপর সে যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তাহলে বুঝতেই তো পারছ তার মূর্তিটা কী ভয়ংকর! এধার-ওধার-সেধার একেবারে তছনছ করে ছাড়বে। অন্য কিছু নয়, একবার ওই ধুম্ব গাছগুলোর দিকে তাকাও! দেখো, তাদের কী অবস্থা। এই বুঝি ডাল মটকায়, না হয় উপড়ে গড়ায়। গাছের বাসায় ছানা আগলে মা-পাখিরা ভয়ে কেমন সিঁটিয়ে আছে। গাছের ঝরে-পড়া পাতাগুলোর কান্ড দেখো, ঘূর্ণির তোড়ে লাট্টুর মতো বেদম ঘুরছে আর উড়ছে। আর কোত্থেকে যে উড়িয়ে আনছে কারো জামা, প্যান্টB, কাপড়, এমনকী নোংরা-ছেঁড়া-ন্যাতা-কানি পর্যন্ত। চাই কী, তাজা বাদামের ঠোঙা যেমন, তেমনই উড়ছে শুকনো ফুলের মালা। ওই দেখো, একটা সাদা ধবধবে কাগজের টুকরো কোত্থেকে উড়ে এসে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এ বাবা! অমন ফুটফুটে কাগজটার কী দশা! তবে রাস্তার ওপর এমনি করে আর খানিক গড়াগড়ি খেলেই ঝকঝকে কাগজের ফুটফুটনি বেরিয়ে যাবে। তার ওপর যদি বৃষ্টি নামে তাহলে তো আর কথাই নেই। জলে-কাদায় সাদা কাগজের কী যে অবস্থা হবে সে তো বুঝতেই পারছ।
এ কী কান্ড! বলতে-বলতেই যে বিদ্যুৎ চমকাল! তারপরেই বুক-কাঁপানো শব্দ তুলে কোথায় যেন বাজ পড়ল। ভয়ে বুক যেমন কাঁপে, শব্দে কানও যেন ফাটে! মনে হচ্ছে, এই বুঝি আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল!
না তো, বৃষ্টি তো নামল না। দস্যি ঝড়ও যেন বাজের ধমক খেয়ে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কী অদ্ভুতুড়ে কান্ড!
সত্যিই অদ্ভুতুড়ে! বৃষ্টি তো পড়লই না, ঝড়ও শান্ত হয়ে গেল। তবে ঝড়ের দাপটে রাস্তাঘাটের যা অবস্থা হয়েছে তা কহতব্য নয়! চারদিকে এটা-ওটা পড়ে একেবারে ছই-ছত্রাকার। ওই দেখো, সেই সাদা কাগজটাও পড়ে আছে ওই ছত্রাকারে। আমি ভাবি বুঝি কাগজটা ঝড়ের তোড়ে উড়েই গেছে। আশ্চর্য কী, কাগজটা আগেও যা দেখেছি এখনও ঠিক তা-ই দেখছি। ধবধব করছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, কাগজটা যেন একটু শক্তপোক্ত। মোটাও। কাছে গিয়ে কে দেখবে বাবা! চারদিকে যা নোংরা!
আরে বাবা, হাত দেবার লোকের কি অভাব আছে? ওই দেখো, যিনি হাত দেবার তিনি এসে পড়েছেন। তিনি মানুষটা কে বলো তো? ওই তো, চিনতে পারছ না? পিঠে বস্তা নিয়ে রাস্তায় কাগজ কুড়োচ্ছে?
ও হ্যাঁ, হ্যাঁ ওই ছেলেটার কথা বলছ? ওকে তো আমি রোজ দেখি। শুধু কাগজ কেন, ছেলেটা ঝড়তি-পড়তি যা পায়, কুড়িয়ে-বাড়িয়ে বস্তায় ভরে। তারপরে কী করে জানি না।
এ বাবা, এই সোজা কথাটা জানো না? তাহলে খুলে বলি তোমায়।
ছেলেটা যেখানে থাকে সেটা একঢাB বস্তি। সেই বস্তিতে ওদের ঝুপড়ি। সেই ঝুপড়িতে মা ছাড়া ছেলেটার আর কেউ থাকে না। আর কেউ নেই তো থাকবেটা কে! সেখানে মায়ে-ছেলে মিলে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে বস্তায় যা ভরেছে, সব বার করবে। তারপর সেগুলো সাফসুতরো করে যেখানে যেটি বিক্রি হয়, সেখানে সেটি বেচে আসবে। বেচে আসবে মায়ে-ছেলে দুজনে মিলে। মা সঙ্গে না থাকলে, ওই তো ছেলে, ওইটুকু, খদ্দের ঠিক ঠকিয়ে দেবে। মায়ের কাছে ছেলে ওইটুকু হলেও, ছেলের একটু তো বয়েস হয়েছে। তা প্রায় এগারো-বারো হবে। তবে এ-ও বলি, ওকে ঠকানো অত সহজ নয়। পাকা ওস্তাদ। এই বয়েসেই বেচা-কেনার ঘাঁতঘোঁত সব জানে।
সে তো ঠিক আছে। এখন যা করছে সেটা তো শেষ হোক। রাস্তার ওপর ঝড়ে উড়ে আসা ওর দরকারি জিনিসগুলো, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে বস্তা তো ভরতি হোক। তার পরে তো কোনটি কোথায় বেচা হবে তা ঠিক করা।
তবে আজ কিন্তু ছেলেটার ভারি মজা। বেশি খাটতে হবে না। কেন-না, ঝড়ের তোড়ে কত কী যে উড়ে এসে এখানে ছড়িয়ে পড়েছে, বেছে তুলতে পারলেই বস্তা ভরতি। এপাড়া-ওপাড়া ঘুরতে হবে না। টপাটপ তোলো আর বস্তায় ভরো।
ওমা, টপাটপ তুলতে গিয়ে হঠাৎ কী দেখে ছেলেটা থমকে গেল! এ তো সেই ধবধবে সাদা কাগজটা দেখেই ছেলেটা থমকে গেছে দেখছি। কেন কী আছে কাগজটায়, যে থমকে তাকায়! পলক তাকিয়েই প্যান্টে হাত মুছে নিল, যেন ময়লা না-লাগে। তুলে নিল কাগজটা। তারপর বস্তায় না পুরে ছেঁড়া জামার নীচে বুকে ঢুকিয়ে রাখল। কাগজ বুকের ভেতরে রেখে মনে মনে কী যে মতলব আঁটল, অন্য কে আর জানবে সে-কথা!
অবশ্য কী মতলব আঁটল আমি একটু আন্দাজ করতে পারছি। ছেলেটা কি একটু একটু লেখাপড়া করে? হয়তো করে। হয়তো কিছু একটা লিখবে ওই কাগজটায়। লিখে হয় তো হিসেব রাখবে। নাকি অঙ্ক কষবে! ও বুঝতে পেরেছি, হিসেবই রাখবে। কত কী বেচল, কত পয়সা পেল। হ্যাঁ, এইটাই হবে নিশ্চয়ই।
ভালো কথা, আগে যা বলেছি তা-ই হল। দেখতে দেখতে বস্তা ভরতি হয়ে গেল। তড়িঘড়ি পা চালিয়ে হাঁটা দিল ঘরের দিকে। পৌঁছেও গেল নিশ্চিন্তে।
ঘরে পৌঁছোতেই মা জিজ্ঞেস করলেন— ‘ঝড়ের পাল্লায় পড়িসনি তো বাবা?’
সাত-সতেরো ভরতি বস্তাটা নামাতে নামাতে ছেলে উত্তর দিল, ‘পড়িনি আবার!’ আমি অবশ্য একটা মিষ্টির দোকানের আনাচে দাঁড়িয়ে পড়েছিলুম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলুম, দোকানে সাজানো মিষ্টির বহর। বাব্বা, কতরকমের মিষ্টি! নলেন গুড়ের সন্দেশ, জয়নগরের মোয়া, রসগোল্লা। আরও কতরকমের যে মিষ্টি—আমি নামই জানি না।
মা কিছুই বললেন না। ছেলের মুখের দিকে খানিক থমকে তাকিয়ে হয়তো মনে মনে কিছু ভাবলেন। তা, সেই মনের কথা, যার মন সে ছাড়া আর কে জানছে বলো?
সে যাই হোক, তবে, এখনই ছেলেটা তার ঝড়তি-পড়তি মালভরতি বস্তা খালি করল না। রোজকার মতো টেনে একপাশে সরিয়ে রাখল। এখন একটু গা এলিয়ে জিরিয়ে নেওয়ার সময়। পরে, পেটে কিছু দেওয়া। যতই হোক, সেই কোন সকালে বেরিয়েছে। কত মেহনত করে তবে বস্তা ভরতি করেছে। খিদে পায় না মানুষের? তবে, বিছানায় গড়িয়ে নেওয়ার আগে জামাটা তো খুলতে হয়! তার সঙ্গে জামার নীচে বুকে রাখা সেই কাগজটাও বার করতে হয়। হ্যাঁ, কাগজটা বার করল সে। তারপর কাগজটার এপিঠ দেখে ওপিঠটা যেই উলটেছে, দেখে কী, সেই পিঠে ফানুসের মতো পেটফোলা একটা অদ্ভুত দেখতে মানুষের ছবি। যতটা ফোলা পেট, ঠিক ততটাই বিটকেল তার মাথাটা। কুতকুতে দুটো চোখ। গলা যেন আসকে পিঠে। তেমনই বেঁটেখাটো পা-জোড়া। সবটা মিলিয়ে গোটা মানুষটা যেন একটা পিপে। কানদুটো দেখো, একদম গাধার মতো।
ছবিটা দেখে কে না হেসে থাকতে পারে! ছেলেটা হো-হো করে এখন হেসে উঠল যে তাই শুনে মা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন ছেলের কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হল রে? অমন করে হেসে উঠলি কেন?’
তবু হাসি থামে না ছেলের। হাসতে হাসতে হাত বাড়িয়ে ছবিটা মায়ের হাতে তুলে দিল। ছবি দেখে মা-ও হেসে ফেললেন। মা-ও হাসছেন, ছেলেও হাসছে। বেদম হাসির তোড়টা একটু থিতোলে ছেলে বলল, ‘মা, ছবিটা যদি রঙিন হত, তাহলে আরও মজাদার দেখতে হত, তাই না?
মা উত্তর দিলেন, ‘ঠিক বলেছিস। কিন্তু তুই তো রঙিন করতে পারিস।’
ছেলে উত্তর দিল, ‘আমি কি পারব? পারলেও রং পাব কোথায়?’
মা বললেন, ‘কেন রে, সেদিন তো রাস্তায় একবাক্স রং কুড়িয়ে পেয়েছিস। যত্ন করে রেখে দিয়েছিস তো ঘরের কুলুঙ্গিতে!’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক তো বটে! দেখেছ একদম ভুলে গেছি।’ বলতে বলতে ছেলে ঘরের কুলুঙ্গি হাতড়ে ঝটপট সেই রঙের বাক্সটা বার করল। বোঝাই যাচ্ছে, মোম রং। কচিকাঁচারা প্রথমে এই রঙেই ছবি রাঙাতে শেখে।
এই ফাঁকেই মা একবাটি মুড়ি এনে ছেলেকে দিয়ে বললেন, ‘খেয়ে নে।’
এখন ছেলে একগাল করে মুড়ি খায়, আর ছবিতে পছন্দমতো রং বোলায়। মাথাটা যদি কুচকুচে কালো করে, তো মুখটা ফিকে হলদে। চোখদুটো নীল-নীল। কান দুটো পাটকিলে। আর গায়ের ছোট্ট ফতুয়াটা করে সোনালি। হাফ-প্যান্টটা বাদামি। প্যান্ট আর ফতুয়ার মধ্যিখানে উঁকি মারছেন যিনি, সেই নাদা পেটটি করে লাল টুকটুকে। আরিব্বাস! যা দেখতে লাগছে না, একেবারে গোবর-গণেশ! হবেই তো, ছেলেটা তো কোনোদিন ছবি আঁকেনি। তাই যা মনে হয়েছে, সেই রং ছবিতে বুলিয়ে একটা তেলেভাজা মার্কা ছবি বানিয়ে ফেলেছে। তবুও, এই ছবির তো একটা নাম থাকা উচিত। কী নাম দেওয়া যায়? ছেলেটা ভাবতে বসল। একটু ভেবে চেঁচিয়ে উঠল, ‘মশাই-এর নাম দিলুম, ‘পেটফট সিং’।’
বাহ বাহ, নামটা তো বেড়ে হয়েছে। ছবিটার সঙ্গে একেবারে মানিয়ে গেছে। ও হ্যাঁ, এতক্ষণ তো ছেলেটার নামই বলা হয়নি। সে-ও ভারি মজার নাম—‘ডুগডুগি।’ এতক্ষণ বলতে ভুলেই গেছি।
ছবি দেখে আর ছবির নাম শুনে মা বললেন, ‘বেশ তো হল। এবার কী হবে?’
ছেলে জিজ্ঞেস করল, ‘কীসের কী হবার কথা বলছ মা?’
‘অমন একটা মজাদার রং-বাহারি ছবি কাউকে দেখাবি না?’
ছেলে উত্তর দিল, ‘ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখব। যে আসবে সে-ই দেখবে।’
মা আর ছেলে দুজনেই খুশিতে উছলে ঘরের একটা বেশ মানানসই জায়গায় ছবিটা টাঙিয়ে রাখল, যাতে কেউ ঘরে ঢুকলেই তার নজরে পড়ে। যাই বলো আর তাই বলো ছবিটা বেড়ে দেখতে হয়েছে কিন্তু! যে দেখছে সে-ই হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
সে তো হল, আর কত হাসবে, এবার হাসি থামাও! পরের দিনের জন্যে তৈরি হও! আবার তো বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে রাস্তায়। বস্তা ভরতি করতে হবে এটা-ওটা কুড়িয়ে কুড়িয়ে।
তো, পরের দিন হল কী, ছেলেটা এটা-ওটা কুড়োতে কুড়োতে একটা টিনের কৌটো দেখতে পেল রাস্তায় পড়ে আছে। দেখতে পেয়েই সেটা বস্তায় পুরে ফেলল। একবার নেড়েও দেখল না কৌটোটার ভেতর কিছু আছে কি না। আপন মনেই এগিয়ে চলল, এটা-ওটা কুড়োতে কুড়োতে। ও বাবা! আবার গুনগুন করে গানও গাওয়া হচ্ছে! তাতে কী হয়েছে, গুনগুন করে গান গাওয়াটা তো দোষের নয়। তুমি চানের ঘরেও দেখবে মানুষে গুনগুন করছে। কেউ রান্না করতে করতে গুনগুন করছে। এমনকী বাজার থেকে ইলিশমাছ কিনে আনন্দে গুনগুন করে বাড়ি ফিরছে। এমনটা তো হামেশাই হচ্ছে।
ঠিক আছে, ওকথা ছাড়ান দাও। শোনো অন্য একটা কান্ড। কী হয়েছে জানো? ওই যে কৌটোটা, যেটা হাতের কাছে পেয়েই ছেলেটা বস্তায় পুরেছে, বাড়িতে বস্তা ঢেলে অন্য হেঁজিপেঁজি কুড়োনো এটা-ওটার সঙ্গে কৌটোটা যখন বেরিয়ে পড়ল, সেটা দেখে মা-ও যেমন চমকে উঠেছেন, ছেলেটাও তেমনি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে! আরিব্বাস! কী সুন্দর কৌটোটা! কৌটোটার গায়ে কী সুন্দর নকশা কাটা। কখনো মনে হচ্ছে টিনের, আবার কখনো মনে হচ্ছে টিন না, অন্য কিছু। রুপোর নাকি? অবশ্য কৌটোটা খুলে দেখা গেল ভেতরটা ফক্কা, কিচ্ছু নেই। মা বললেন, ‘থাক এটা। বেচতে হবে না। আমার কাছে রাখি।’ ছেলে মায়ের কথায় সায় দিয়ে বলল, ‘ঠিক বলেছ, এমন একটা নকশা-কাটা দামি জিনিস পাঁচজনকে দেখানোর মতো। এমন জিনিস বেচতে আছে!’
তা, সেই চোখ-ঝলমলে কৌটোটা বেশ ভালো করে ঝেড়েমুছে, খুব যত্ন করে, নিজের কাছে রেখে দিলেন মা। আর যেগুলো বাজারে বেচে দেবার মতো, ছেলের সঙ্গে সেগুলো বেচতে চললেন।
বেচেবুচে বাজার থেকে ফিরতে রোজই বেলা হয়, আজও হল। ফিরতে ফিরতে মা মনে মনে ঠিক করলেন, আজকে যা রোজগার হল, সেই রোজগারের পয়সা রাখবেন ওই কুড়িয়ে পাওয়া কৌটোতে। সে আর এমনকী! ক-টা তো খুচরো টাকা। তবু তো এখানে-ওখানে রাখার চেয়ে একটা নিরাপদ জায়গায় থাকবে। রাখলেনও তা-ই। কিন্তু কৌটোর অর্ধেকও ভরতি হল না। সে তো জানা কথাই। অবশ্য এক-একদিন একটু বেশি টাকা পাওয়া যায়। তা-ও সে তো কালেভদ্রে। এর জন্যে কোনো খেদ নেই মায়ের। দুটো তো প্রাণী। খেয়ে-পরে চলে তো যায়। তবে, মায়ের মন তো। ছেলের জন্যে একটু কষ্ট হয় বই কী! আহা, ছেলেটাকে কী বর্ষা, কী গ্রীষ্ম, রোদে-জলে রাস্তার জঞ্জাল ঘেঁটে পয়সা রোজগার করতে হয়। ভারি ইচ্ছে, ইশকুলে পড়বে। এমন নয় যে সে পড়াশোনা করে না। ওরই মধ্যে পয়সা জমিয়ে বই কিনে যেটুকু পারে, নিজে নিজেই পড়ে। তাও ভালো, নিজের নামটা তো সই করতে পারে। এমনকী, কুড়িয়ে পাওয়া সেই ছেঁড়াখোঁড়া-রামায়ণটার পাতায় চোখ বুলিয়ে মাকে থমকে থমকে পড়ে শোনাতেও পারে। এটা কম কথা নয়।
ওমা, পরের দিনে সে এক আজব কান্ড!
কেন? কী কান্ড হল আবার?
সেই কৌটো খুলে টাকা বার করতে গিয়ে মায়ের তো চক্ষু ছানাবড়া! মা তো কৌটোটায় রেখেছিলেন ওই ক-টা টাকা। হয়েছে কী আজ কৌটোটা খুলতে এ যে দেখি কৌটোয় টাকা উপচে পড়ছে! এত টাকা এল কোথা থেকে! মা ভয়ে থমকে ছেলেকে ডাকলেন। ছেলে এল। দেখল। দেখেশুনে সে-ও থ! মায়ে-ছেলেতে গুনতে বসল টাকা। বাবা, এ যে অনেক! একসঙ্গে এতগুলো টাকা কোনোদিন মা-ও দেখেনি, ছেলে-ও না। তবে কি ওই কৌটোটা জাদু কৌটো! হলেও হতে পারে। তা যদি হয়, তবে পরের দিনও তো দেখতে হয় কৌটো ভরে কি না।
সুতরাং, পরের দিন কৌটোটা খালি করে, সেদিনের বিক্রির সব ক-টা টাকা কৌটোয় রেখে মা আর ছেলে রাতে ঘুমোতে গেল। তা, গেলে কী হবে। চোখে ঘুম কি আসে! দুজনায় উদগ্রীব হয়ে রাত কাটাল।
ওমা! ঠিক তা-ই। আবার কৌটো ভরতি। আর মনে কোনো ধন্দ থাকার কথা নয়। এটা নিশ্চয়ই জাদু কৌটো! দেখেশুনে ছেলে তো থরথর করে কাঁপতে লাগল। এ কাঁপুনি আনন্দে, না আতঙ্কে কে জানে। মায়েরও চেখে-মুখে যেন ঘোর লেগে গেছে। এই আজব ঘটনাটা যে পাড়া-পড়শিদের বলবেন তারও উপায় নেই। লোভী মানুষের তো আর অভাব নেই। একবার জানতে পারলেই হয়, ঠিক হাতিয়ে নেবে।
আরে বাবা, এ কী মজা! এ যে দেখি কৌটো খালিই হয় না! তুমি এটা-ওটা কেনার জন্যে হয়তো অর্ধেক টাকা কৌটো থেকে নিলে, খানিক পরেই দেখলে, কৌটো যে-কে সেই, আবার টাকায় উপছে পড়ছে!
ছেলে এবার মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘মা, আর কি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এটা-ওটা কুড়োনোর দরকার আছে?’ এমন ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, ঘরের দেওয়ালে ওই যে টিকটিকিটা পোকা ধরার জন্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বোধহয় তারও কানে ঢুকল না।
মা-ও তেমনি চুপিসাড়ে উত্তর দিলেন ‘না, আর কী দরকার?’
এবার ছেলে বলল, ‘তাহলে এখন আমি ইশকুলে তো ভরতি হতে পারি?’
মা বললেন, ‘আর ক-টা দিন সবুর করো। হুট করে কিছু করতে গেলে লোকের চোখ টাটাবে। কেউ একবার সন্দেহ করলেই সর্বনাশ। লোকে তো ভাবতেই পারে, রাস্তার ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে-বেচে পেটভরে খাবার জোটে না যার, সে নতুন নতুন বই কিনে ইশকুলে যায় কেমন করে? না, বাবা, এখনই বাড়াবাড়ি কিছু না করাই ভালো।’
মায়ের কথাই সই। আর ক-টা দিন সবুর করাই ভালো। সত্যিই তো ঝট করে বেশি জাঁক দেখালে, হিংসুটে লোকের তো আর অভাব নেই। গায়ের জ্বালায় ঠিক পেছনে লাগবে। কী দরকার বাবা! তার চেয়ে আর ক-টা দিন অপেক্ষা করতে তো আর কোনো দোষ নেই।
‘ঠিকই তো। ন্যায্য কথা। তার ওপর যখন-তখন ইশকুলে ভরতি হব বললেই তো আর হওয়া যায় না। ভরতির সময় হলে তবে তো!’
‘থাক বাবা সে-সব কথা। তার চেয়ে এখন দেখো আকাশের চেহারাটা। মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে। চারদিকে যেন আঁধার নেমেছে। বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে! আকাশ দেখলে ভয় করছে। একচোট যা হবে না!’
ওই দেখো, বলতে-না-বলতেই শুরু হয়ে গেছে। মা আর ছেলে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করার জন্যে হই-হই ছোটাছুটি লাগিয়ে দিলেন। এদিকে হয়েছে কী, ফাঁকতালে রাস্তার একটা কুকুরছানা জলে ভিজে একশা হয়ে, মায়ের ঘরে ঢুকে পড়েছে। ঢুকে, নি:সাড়ে তক্তপোশের নীচে গা-ঢাকা দিয়ে জুলজুল করে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, আর হাঁপাচ্ছে। মা আর ছেলে কিছু জানতেই পারল না। ওমা দেখো, ছানাটা তক্তপোশের নীচে ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে পড়ল নাকি! কে জানে।
এদিকে তো আর এক কান্ড! সেই যে বিকেল থেকে বৃষ্টি নামল, এখনও পর্যন্ত থামবার নাম নেই। তা হয়ে গেল অনেকক্ষণ। রাস্তার দিকে চেয়ে দেখো, জল জমে থইথই। দেখে মনে হচ্ছে আর খানিকক্ষণ হলে নির্ঘাত কোমর ডুববে। রক্ষে এই, মা-ছেলের ঘরটা একটু উঁচুতে। নইলে এখনই জল ঢুকে পড়ত ঘরে। তবে, আর খানিকক্ষণ মেঘের দাপাদাপি চললে আর দেখতে হবে না, রাস্তার জল হুড়হুড় করে ঘরে ঢুকে পড়বে। তখন বুঝবে বিপদ কাকে বলে! তার ওপর সন্ধেও হয় হয়। মা আর ছেলে দুজনেই ভয়ে সিঁটিয়ে ভাবতে লাগল তেমন বিপদ যদি সত্যি হয়, তখন কী হবে?
যাক বাবা, হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল! মনে হচ্ছে, বৃষ্টির দম ফুরিয়েছে। মনে হচ্ছে, ঝমঝমানির তোড়ও ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসছে। উফ, এতক্ষণে দুরন্ত মেঘের আশা মিটল! সত্যিই তো, বৃষ্টির দস্যিপনায় ঘর ভেসে গেলে কী ভয়ংকর বিপদ হত বলো! কিছু না হোক, পেটে তো দুটো দিতে হবে! যাক, এখন নিশ্চিন্ত। সময়মতো খাওয়াও হল, তক্তপোশে বিছানাও পাতা হল। বিছানায় শুয়ে মা আর ছেলে যেমন রোজ আজব-কৌটোর কথা নিয়ে অবাক-স্বরে গল্প করে, আজও তেমন গল্প হল। তার পরে দুজনার চোখ ঘুমে জড়িয়ে এল। এরপরেই হল এক মজার কান্ড!
কী কান্ড হল?
হল কী, সেই যে পুঁচকে কুকুরছানাটা এতক্ষণ তক্তপোশের নীচে ঘুমোচ্ছিল, এবার তার ঘুম ভাঙল। এখন তো গভীর রাত। ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। সেই অন্ধকারে পুঁচকে ছানাটা তক্তপোশের নীচ থেকে বেরিয়ে খাবার খুঁজতে লাগল। খাবার আর পাবে কোথায়! অগত্যা, মা আর ছেলে খেয়ে-দেয়ে যে থালা দুটো ঘরের এককোণে সরিয়ে রেখেছিল, ছানাটা সেই দুটোই চাটতে লাগল। তারপর কী মনে হল কে জানে, মারল লাফ। উঠে পড়ল তক্তপোশে। অকাতরে ঘুমোচ্ছেন মা আর ছেলে। তাদের মধ্যিখানে গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল।
বাব্বা, কী দুঃসাহস দেখেছ! দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ল সেই বিছানায়!
তার পরে?
তার পরে ঘটল সেই মজার ঘটনা। কী, না ঘুমোতে ঘুমোতে যেই মা পাশ ফিরেছেন, তাঁর হাত পড়ে গেছে কুকুরছানাটার গায়ে। ছানাটার ঘুম ভেঙে গেছে। আচমকা ডেকে উঠেছে, কিঁউ-উ!
‘বাপ রে’, বলে মা তড়বড়িয়ে উঠে পড়েছেন! ভয়ে-ময়ে ডাক দিয়েছেন ছেলেকে! ‘কী হল’, বলে ছেলেও পড়িমরি করে উঠে পড়েছে!
মা চিৎকার করে উঠলেন, ‘বিছানায় কুকুরছানা।’
কুকুরছানা কি তখন বিছানায় আছে! মেরেছে লাফ! দিয়েছে ছুট!
ছেলেও অন্ধকারে লাফ মেরে ধরতে গেছে ছানাটাকে! ছানা পালায়। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? ঘরের দরজা তো বন্ধ। তারপরে মা-ছেলে দুজনে ছানাটাকে ধরার জন্যে অন্ধকারে হাঁকপাঁক শুরু হয়ে যায়।
অবশ্যি শেষপর্যন্ত ছেলের হাতে ধরা পড়ে গেল পুঁচকেটা। ছেলে সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ছুড়ে দিল রাস্তায়। আহা রে, ছানাটার নিশ্চয়ই লেগেছে! সে আর কে দেখছে? দরজা বন্ধ করে ছেলে শুয়ে পড়ল। মা-ও শুলেন। গজগজ করতে লাগলেন, ‘জ্বালাতন!’
ছেলে জিজ্ঞেস করল, ‘ছানাটা কখন ঘরে ঢুকল বলো তো?’
মা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘কে জানে! হয়তো যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, তখনই ঢুকে পড়েছে। আশ্চর্য, একটু ভয়ডর নেই! সটান বিছানায় উঠে আমাদের মধ্যিখানে ঘুমোচ্ছে!’
আর তো বকাবকি করে কোনো লাভ নেই। যা হবার সে তো হয়েই গেছে! মধ্যিখান থেকে অমন আরামের ঘুমটাই মাটি হয়ে গেল। অবশ্য সে আর কতক্ষণের জন্যে! চোখে তো ঘুম জড়িয়েই আছে। বিছানায় খানিক এপাশ-ওপাশ করলেই আবার পৌঁছে যাবে ঘুমের দেশে। তবে, এটাও তো সত্যি, গরিবের পয়সার ভাবনায় মন যদি ছটফট করে, তবে চোখে ঘুম কি আসে!
যাক বাবা, মা আর ছেলের মনে এখন তো সে ভাবনা নেই। এখন কৌটো খুললেই পয়সা। সকালবেলায় ঘুম ভাঙলেই মা আর ছেলের প্রথম কাজই তো কৌটো খুলে পয়সা দেখা। কাল রাতে ঘুমের মাঝখানে কুকুরছানার জ্বালায় ছেলেটার ঘুমটা তেমন জমেনি। তাই, সকালে ঘুমটা ভাঙতে একটু দেরিই হয়ে গেল। অবশ্যি মা সকাল সকাল যেমন ওঠেন তেমনই উঠেছেন। ছেলের ঘুম ভাঙতে প্রথমেই মায়ের মুখটাই ওর চোখে পড়েছে। মায়ের মুখে আজ হাসি নেই কেন? কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আছেন মা! ছেলে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে মা?’
মা উত্তর দিলেন, ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে!’
‘কেন, কী হয়েছে?’
‘কৌটোতে একটাও পয়সা নেই, ফাঁকা!’
ছেলে অস্থির হয়ে বলে উঠল, ‘কী বলছ তুমি? কে নিল? দেখি তো’, বলে ছেলে, যেখানে রাখা ছিল কৌটোটা সেখানে ধড়ফড় করে ছুটে গেল বিছানা ছেড়ে। কৌটোটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে, তাই তো বটে! কৌটো শূন্য! মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থমকে গেল ছেলে। তারপর নিরাশ হয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, ‘সব আশা মিথ্যে হয়ে গেল। আমার নতুন বই কেনা হবে না। ইশকুলেও যাওয়া হবে না। সারাজীবন আমায় রাস্তায় জঞ্জাল ঘাঁটতে হবে!’
মায়ের চোখ ছলছল।
ছেলের মন ভেঙে খানখান। আবার বস্তা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। আবার আদাড়-বাদাড় ঘেঁটে ঘেঁটে ছাইভস্ম যা জুটল বস্তায় পুরল। তা রাক্ষসের মতো পেটমোটা বস্তাটা ভরতি করতে হবে তো! তবেই না দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জুটবে!
দেখেছ, আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ছেলেটা আনমনে কোথায় চলে এসেছে! এখনও বস্তার অর্ধেক ভরতি হয়নি। ভালো লাগছে না। দুপুর হয়ে গেল। ঠাঠা করছে রোদ। অন্যদিন হলে এতক্ষণে বস্তা ভরতি করে, কখন বাড়ি ফিরে যেত। আজ ক্লান্তিতে হাঁপিয়ে পড়ছে। সামনেই দেখা যাচ্ছে একটা বটগাছ। ছায়া ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছায়ার নীচে একটু বসলে হয়। হ্যাঁ, বসল। পাশে রাখা বস্তাটা মাথায় দিয়ে শুয়েও পড়ল। ওমা! তারপর কোন ফাঁকে চোখ বুজে এল তন্দ্রায়। ঘুমিয়ে পড়ল।
কতক্ষণ এমনি করে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে কে জানে! হঠাৎ যখন ঘুম ভেঙে যায়, দেখে কী, দুপুরের সেই ঠাঠা রোদের এখন তো আর তেমন ঝাঁঝ নেই! তবে কি বিকেল হয়ে গেছে! কী কান্ড! মা নিশ্চয়ই ভেবে ভেবে এখন তাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন। ছি: ছি:!
তড়বড়িয়ে উঠে পড়ল ছেলেটা। উঠেই চমকে গেছে! এ কী! তার কোলের কাছে এ কে তাকে জড়িয়ে আছে? এ যে দেখি, একটা কুকুরছানা! এই ছানাটাই তো কাল তাদের ঘরে ঢুকে বিছানায় ঘুমোচ্ছিল! তাইতো! তা ছানাটা এখানে এল কোথা থেকে! দূর হ! ছেলেটা রেগেমেগে ছানাটাকে খামচে ধরার জন্যে হাত বাড়াল। কিন্তু খামচে ধরতে পারল না। থমকে গেল তার হাত। কেঁপে উঠল তার মন। কী হল হঠাৎ? রাগে কটমট চোখদুটো তার নিমেষে কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল।
আহা! দেখো, দেখো, কুকুরছানাটা কেমন করুণ চোখে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে! সে চোখ দেখলেই যেন মনে হয়, সে বলছে, ‘আমায় মেরো না। আমার কেউ নেই।’
ছেলেটা ক্ষণেক থমকে চেয়ে থাকে ছানাটার মুখের দিকে। তারপর চকিতে কুকুরছানাটাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটার বুক উথলে তখন ভালোবাসা উছলে পড়েছে। ইস, কাল সে কী নিষ্ঠুরের মতো এই ছানাটাকে ঘর থেকে ছুড়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল! এ কাজ তো পিশাচরাই করে! সে কি তবে একটা দয়া-মায়াহীন পিশাচ! না, না, এমন কাজ সে আর কোনোদিনই করবে না। এক্ষুনি সে আধ-ভরতি বস্তাটা পিঠে ফেলে, আর কুকুরছানাটাকে বুকে জড়িয়ে মায়ের কাছে ছুটবে। মাকে গিয়ে বলবে, ‘মাগো, সবহারা এই কুকুরছানাটা আমার কুড়োনো ভালোবাসা। কাল রাতে আমি এই কুকুরছানাটাকেই ঘর থেকে ছুড়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলুম। দেখো কেমন করুণ চোখে দেখছে তোমাকে!’
হ্যাঁ, এতসব কথা ভাবতে ভাবতেই সে ফিরে এসেছিল মায়ের কাছে কুকুরছানাটাকে বুকে নিয়ে। মা-ও তাকে তুলে নিয়েছিলেন নিজের কোলে আদর করে। তাজ্জব কান্ড কী, তার পরেই ঘটল সেই জাদুর খেলা। ছেলেটা কী মনে করে আবার সেই কৌটোটা খুলেছে। হতাশায় অস্থির হয়েই খুলেছিল। ওমা! তারপরেই চক্ষু চড়কগাছ! দেখে কী, কৌটো তো টাকায় ভরতি হয়ে আছে। কী ব্যাপার! আনন্দে চিৎকার করে মাকে ডাক দেয়। মা-ও ছুটে এসে দেখে থ! মা আর ছেলের মুখে হাসি তখন উপছে পড়ছে! কে জানে, কুকুরছানাটাও মায়ের কোলে উঠে হাসছিল কি না!
হ্যাঁ, কুকুরছানাটা মা আর ছেলের আদরে একটু একটু বড়ো হচ্ছে। ছেলেটাও এখন নতুন বই ব্যাগে নিয়ে ইশকুলে যাচ্ছে। আর দেখো, সেই রঙিন ‘পেটফট সিং’ ছবিটার দিকে মা আর ছেলের যখনই চোখ পড়ে যাচ্ছে, তখনই মনে হচ্ছে যেন ছবিটা ঠোঁট টিপে হাসছে। তবে কি এত কান্ডের পান্ডা ওই ‘পেটফট সিং’ ছবিটা? তাই সে মুচকি মুচকি হাসছে? তা-ই হবে হয়তো।