০০. লেখকের নিবেদন / উৎসর্গ

সাগরময় ঘোষ

লেখকের নিবেদন

এই গ্রন্থের লেখাগুলি জলসা পত্রিকায় ১৩৬৫-র কার্তিক থেকে ১৩৬৮-র বৈশাখ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। কোন ইতিহাস, কোন তথ্য বা কোন তত্ত্ব প্রকাশের বাসনা নিয়ে এ-লেখা নয়, যে-কাহিনী যখন যেমন মনে এসেছে লিখে গিয়েছি। এ-লেখার পিছনে কোন প্রস্তুতি ছিল না, তাই সন তারিখ কণ্টকিত ইতিহাসের ধারা রক্ষার কোন প্রয়াস এতে নেই। যে-ভাবে পত্রিকায় লেখাগুলি পর পর প্রকাশিত হয়েছে সেই পারম্পর্যই গ্রন্থে রক্ষিত হল।

সম্পাদকের বৈঠকে লেখার পিছনে একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তা পাঠকদের কাছে আগেই কবুল করতে চাই কৈফিয়তের দাবি থেকে রেহাই পাবার জন্যে।

একদিন আড্ডায় বসে গল্পগুজব করছি, এমন সময় ক্ষিতীশ সরকার এসে বললেন–একটা মাসিক পত্রিকা বার করছি, আপনার সাহায্য চাই।

নতুন পত্রিকা প্রকাশের শুভ সংবাদে আমার উৎসাহ কারও চেয়ে কম। নয়। ক্ষিতীশবাবু আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁর প্রয়োজনে আমি যদি কোন কাজে লাগতে পারি সেটা তো আমার পক্ষে সৌভাগ্যের কথা। পরামর্শ আর উপদেশের মামুলী কথায় না গিয়ে বললাম—লেখক যোগাড় করে দেবার কথা বলছেন তো?

না। সে-কাজ আমি নিজেই করব।

উত্তর শুনে আমি একেবারে হাঁ হয়ে গেছি। এবারে সত্যিই গম্ভীর হয়ে ভাবতে লাগলাম তাহলে কোন কাজে লাগতে পারি।

আমাকে চিন্তাম্বিত দেখে ক্ষিতীশবাবু বললেন–আমার পত্রিকায় আপনার লেখা চাই এবং প্রতিমাসে নিয়মিত লেখা চাই।

চমকে উঠলাম। আমার লেখা, তদুপরি প্রতিমাসে! ক্ষিতীশবাবু বোধ হয় আমাকে নিয়ে পরিহাস করছেন। আমি লেখক নই, কস্মিনকালে লেখার অভ্যাসও আমার নেই। লেখকদের লেখা খুঁজে বেড়ানোই আমার নেশা ও পেশা, নিজের লেখার কথা কোনদিন চিন্তাই করি নি। ক্ষিতীশবাবু ছাড়বার পাত্র নন। বললেন–সাহিত্যিকদের সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাই আপনি লিখুন। সে-লেখাই আমি আপনার কাছ থেকে চাই।

কী কুক্ষণেই ক্ষিতীশবাবুর কথায় রাজী হয়েছিলাম। দীর্ঘ বাইশ বছর দেশ পত্রিকা সম্পাদনা কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত। সেই সুবাদে লেখকদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা বহুকালের, প্রবীণ ও তরুণ লেখকদের মেহ প্রীতি ও ভালবাসা পেয়ে আমি ধন্য।

সাহিত্যিকদের জীবনের অনেক কাহিনীর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে জড়িত, অনেক কাহিনী আড্ডায় বন্ধুদের মুখে শোনা। সে-কাহিনী যে আমাকে লিখতে হবে তা ঘুণাক্ষরেও আমার মনে কোনদিন স্থান পায় নি। লেখা আদায়ের জন্য যে-অস্ত্র আমি এতকাল অন্যের উপর প্রয়োগ করে এসেছি, সেই অস্ত্রই যে বুমেরাং হয়ে আমার উপরেই এমন মর্মান্তিকরূপে ফিরে আসবে তা কি কখনও ভেবেছিলাম? নাছোড়বান্দা ক্ষিতীশবাবুর নিত্য কড়া তাগাদার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবার জন্যে সেসব কাহিনী একের পর এক লিখে গিয়েছি, তিনি তা চোখকানবুঙ্গে জলসায় মাসের পর মাস ছেপে আমাকে লেখক বানিয়ে দিলেন।

ত্রিবেণীর প্রকাশক ও আমার একান্ত শুভানুধ্যায়ী কানাই দা হঠাৎ এসে বললেন—জলসা পত্রিকায় তোমার যে-সব লেখা বেরোচ্ছে আমি তা বই করে ছাপব। এই নাও কন্টাক্ট ফর্ম, সই কর।

কানাইদার হুকুম চিরকালই আমার শিরোধার্য। পরের লেখা নিয়ে যার কারবার তাকে নিজের লেখার ফাঁসে এই প্রথম গলা দিতে হল। সংকোচ ও শঙ্কার সঙ্গে কম্পিত হস্তে স্বাক্ষর করে দিলাম। তিনি আমাকে গ্রন্থকার বানালেন।

সুতরাং সম্পাদকের বৈঠকের চুটকি গাল-গল্প লিখে যদি কোন অপরাধ করে থাকি তার সম্পূর্ণ দায় ও দায়িত্ব জলসা-সম্পাদক ও ত্রিবেণী-প্রকাশকের। লেখক ও গ্রন্থকার হতে পেরেছি, সেইটুকুই আমার লাভ।

সাগরময় ঘোষ

———–

উৎসর্গ

দেশ পত্রিকার সম্পাদক, আমার শুভানুধ্যায়ী, শ্ৰীঅশোককুমার সরকার-এর করকমলে।

অধ্যায় ১ / ২৪

সকল অধ্যায়

১. ০০. লেখকের নিবেদন / উৎসর্গ
২. ০১. আজ বাইশ বছর ধরে
৩. ০২. শনিবারের বৈকালিক বৈঠক
৪. ০৩. আবার আপনাদের সেই গল্পতে
৫. ০৪. বিকেল বেলায় আমার দপ্তরে
৬. ০৫. শনিবারের আড্ডায় কথা উঠল
৭. ০৬. সাহিত্যিকদের মধ্যে কে কেমন
৮. ০৭. আমাদের বৈঠকের গাল্পিক কথা
৯. ০৮. আমাদের শনিবাসরীয় বৈঠকে
১০. ০৯. সম্পাদকের দপ্তর থেকে
১১. ১০. শারদীয়া সংখ্যা পত্রিকা
১২. ১১. পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত গল্প
১৩. ১২. শনিবার বিকেলে দপ্তরে বসে
১৪. ১৩. এতদিন ধরে আমাদের বৈঠকে
১৫. ১৪. পাঠকের দরবারে আসামীর মত
১৬. ১৫. ভারতবর্ষ-সম্পাদক জলধর সেন
১৭. ১৬. শনিবার দিন দপ্তরে এসেছি
১৮. ১৭. শরৎ চট্টোপাধ্যায়কে শরৎ চট্টোপাধ্যায় বলে ভুল
১৯. ১৮. একই নামে দুই লেখকের আবির্ভাবের পরিণাম
২০. ১৯. একই নামের দুই লেখক
২১. ২০. শনিবার বিকেলে ধুনি জ্বালিয়ে বসে আছি
২২. ২১. জগদীশ গুপ্তর কথা
২৩. ২২. আমরা যে-যুগে জন্মেছি
২৪. ২৩. সুবোধ ঘোষের থিরবিজুরী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন