(প্রশ্নবোধক, ভক্তিমূলক ও বিভিন্ন ধরনের তথ্যমূলক, বিরহ, বিচ্ছেদ গান ও কারবালার কাহিনীসহ বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত)
.
ঘুমান্ত শিশুর ডাক
ঘুমান্ত শিশুর ওরে,
দু’আঁখি বন্ধ করে, আর কত ঘুম পার?
নিঝুম রাতের অন্ধকারে, নীরব হয়ে থাকবে ঘরে,
ঘুমান্ত শিশু ওরে।
কেটেছে আঁধার আভাস, পেয়েছে আলোর প্রকাশ
হাসছে আকাশ পূর্বান্তরে, ফুটন্ত ফুলের সুবাস
সুসময়ে বয় সুবাতাস, করেছে উদাস,
ভুবন জুড়ে মুগ্ধ করে, ঘুমন্ত শিশু ওরে।
পাখিগণ মেলেছে ডানা, দিচ্ছে হানা… উঁকি দিয়ে ঝুঁকি মেরে,
সুমধুর কোকিল পাখি মেলেছে আঁখি,
ডাকছে কারে উচ্চসুরে, উদাস করে—
ঘুমন্ত শিশু ওরে।
পূর্ব দিকে উঠেছে শশী, অর্ধরাশি পূর্ণ হাসি
রক্তরাঙা রূপটি ধরে, হেসে উঠে হাসনাহেনা,
আঁখির কোণে আবর্জনা, দু’হস্তে দে মুছে, না যাক না সরে—
ঘুমন্ত শিশু ওরে।
জানালার উঁকি মেরে, নবীন সূর্য ডাকছে তোরে,
রাতের আঁধার মুক্ত করে, জাগিয়ে তোল আপনারে
ছোট্ট তোরা দল বেঁধে, দল পাবে তোর বুকেতে বল
শিশির শীতল লাগলে ভোরে, ঘুমন্ত শিশু ওরে।
মোঃ রজ্জব আলী দেওয়ান
তাং ১২/১০/৬৯ ইং, ২৫শে আশ্বিন ১৩৭৬ বাংলা
১ নং গান: হামদ-নাত
করিয়াদ আমার দরবারে তোমার, করিও কবুল
তুমি বিশ্বজগৎ পতি, অকূলেরও কূল ॥ঐ
অনন্ত অসীম ও তুমি, জীবনের জীবন অন্তর্যামী,
তোমাকে পুজিতে স্বামী, হয়েছি আকুল,
করিও কবুল ॥ ঐ
তোমার প্রিয় নূর মোহাম্মদ, দেখায়ে দিয়েছেন যে পথ,
সজ্ঞানে করেছি শপথ, তুমি আদিমূল,
করিও কবুল ॥ ঐ
পিতা-মাতা গুরুজনে, সদা যেন শান্ত মনে
সেবি তারে সযতনে, পেতে চরণ ধুল,
করিও কবুল ॥ ঐ
তোমার অভিশাপ রয়েছে যথায়, সে পথেও নিও না আমায়,
যে পথে মিলিবে তোমায়, হইনে যেন বাতুল,
করিও কবুল ॥ ঐ
রজ্জব অতি গুনাহগার, দোযখ-বেহেস্ত চাইনে তোমার,
পেলে শুধু তোমার দীদার, হয়ে যাই মশগুল,
করিও কবুল ॥ ঐ
২ নং গান: প্রশ্নবোধক গান
দেশ, কাল, পাত্র তত্ত্ব
গুরু, আমি দেশের খবর জানতে চাই,
কোথায় ছিলাম, কোথায় আইলেম, আবার যেন কোথায় যাই? ॥ঐ
ছিলেম যখন নিরাকার, না ছিল মোর আকার-সাকার,
করেছিলাম কী বা আহার, কী খেয়ে জীবন বাঁচাই?
এই সংসারে আকার নাই যার, স্থিতি কি সে জানা দরকার
করিতে সেই দেশের বিচার, ভাবিতে আর কূল না পাই! ॥ঐ
যথা হস্ত-পদ নাইক আমার, ছিলেম আমি কার অধিকার?
যখন না ছিল মোর দুটি আঁখি, মাতৃগর্ভে যাইয়ে থাকি,
মা জননীর ইঞ্জিন ঘরে, নিরাকারকে আকার করে,
কে উঠায়ে দিল মোরে? জীবদেহ করলেন তৈয়ার,
তাতে করেছে কী কারিগরী, রজ্জব কয়, তালাশ করি,
কোথায় আছে সেই মিস্তরি, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াই।
কী সন্ধানে নিলে ঠাঁই, চলাফেরা হয় কী প্রকার?
সঙ্গী কে ছিল আমার? কেমনে সে রাস্তা দেখি? ॥ঐ
৩ নং গান: উপদেশ-জবাব গান
দেশ, কাল, পাত্র
পিতার মূলে ছিলে রে মন, নিরাকার,
নীর অর্থ জেনে নেও পানি,
কে বলে তার নাই আকার? ॥ঐ
ছিলে যখন নিরাকার, আদ্যশক্তি ছিল আহার,
সেই শক্তি গুণে মুক্তি পেতে, হয়েছে মায়ের দরকার,
তথায় হস্ত-পদ নাইক তোমার, সদায় সে পিতার অধিকার
শক্তি সাথী হয়ে তোমার, মায়ের সনে হয় দীদার। ॥ঐ
সেদিন ছিল পিতা ঘুমে, মগন, অচেতনে ছিল মদন,
শক্তি গুণে পেয়ে চেতন, রণাঙ্গনে যায় এইবার
সেই মায়ের সনে রতি রণে, পিতা পরাজয়ী সেদিনে,
সে শক্তির জোরে লম্ফ মেরে, কামসাগর হয়েছ পার। ॥ঐ
মা জননীর ইঞ্জিন ঘরে, চুম্বক-পাথর চুম্বক মেরে,
আপনি নিয়া যায় ভিতরে, জীবদেহ করতে তৈয়ার,
যথায় রজঃ-বীজে করে মিলন, পঞ্চরসে করে মৈথুন,
রজ্জব কয়, মিশে নিরঞ্জন, নিরাকার করলেন আকার। ॥ঐ
৪ নং গান: প্রার্থনা গান
ভজন তত্ত্ব
গুরু, আমার কর্ম ভালো না, জন্ম পেয়েছি বটে—
কিন্তু তার মর্ম বুঝলেম না।
আগে জানলে মর্ম হত ধর্ম,
বুঝে সাধন করলেম না ॥ঐ
যাইয়ে জননীর জঠরে, মায়ের রক্ত-মাংস আহার করে,
আসিয়ে ভবসংসারে, তারে চিনলেম না—
তারে করলে যতন- মনের মতন রে,
আর এমন হত না। ॥ঐ
লাভ করিব আশা করে, অমূল্য ধন বোঝাই করে
আসিলেম ভবসংসারে, মনের বাসনা
হীরার দরে বেঁচলাম হীরা,
পেয়ে কুমন্ত্রণা। ॥ঐ
বাবার এক রস- মায়ের চৌরস, এইত হল পাঁচটি রস
আসিয়া তা করলেম না বশ, সাধন হল না—
দিলেন পিতৃধনের মাথে বারী রে,
তারে যতন করলেম না। ॥ঐ
রজ্জব কয়, মায়ের কুহকে, জন্মের মত আছি ঠইকে,
কী হবে আর বেশি বকে, আগে বুঝলেম না,
এবার হারিয়ে ধন, খুঁজলে রে পাষাণ মন,
কখন মিলে না। ॥ঐ
৫ নং গান: উপদেশমূলক গান
দেশ, কাল, পাত্র
জনমটা এক ঠকের মুল্লুক, ভাই, সে ঠকা হয় অনিবার
আসা-যাওয়া ভীষণ ঠকা,
ঠকের এই দেশে ঠকের কারবার। ॥ঐ
বাবা একদিন মায়ের সনে, ঠকে ছিল রতি রণে
মায়ের ঠকা গর্ভদানে,
সেই ঠকাতেই জনম আমার। ॥ঐ
ঠকের দেশে জনম নিয়া, প্রথম ঠকা দুগ্ধ খাইয়া
মহা ঋণের ঋণী হইয়া,
শোধ হল না দুধের ধার। ॥ঐ
বিষম মহা কলাকৌশলে, বন্দী আছি জগৎ জালে
খাটে না আর বুদ্ধি বলে,
খুলতে গেলে হয় জীবন অসার। ॥ঐ
তাই জন্মবাদী অপরাধী, হয়েছি জেলের কয়েদি,
মুক্তি নিতে নিরবধি,
ভেবে না পাই কূলকিনারা। ॥ঐ
ঠকের দেশে তাই আছি ঠকে, সামনেও ঠকা, ঠকা পরলোকে,
কেহ নাই রজ্জবের দুঃখে,
তুমি ভয়-ভরসা আমার। ॥ঐ
৬ নং কবিতা আবৃত্তি
সূর্য ডুবুডুবু লোহিত বরণ।
নীরব নিস্তব্ধ নির্জন কানন॥
এহেন সময় এসে একাকিনী বনে।
তোমার সৃজন সৃষ্টি দেখিনু নয়নে॥
মাঠ ভরা ফুলে ফলে ভরা সেই বন।
মধু নিতে উদাসিনী ভোমরা গুঞ্জন।
হঠাৎ মনে যেন কী দিয়েছে সাড়া।
মধু ফেলিয়ে বনে অমনি দিচ্ছে উড়া॥
পাখিরা খুঁজিতে ছিল যার যে আহার।
ডানা মেলে উড়ে চলে যথা পথ যার।
কেহ কারে ডাক ছেড়ে কিছু না শুধায়।
উড়িয়া বসিল গিয়ে যার যে বাসায়॥
তাই দেখে কবির মন হল উচাটন।
ভাবে শুধু আয়ুবেলা শেষ হবে কখন॥
মোঃ রজ্জব আলী দেওয়ান
৭ নং গান: প্রার্থনা গান
ভজন তত্ত্ব
আমার দিন কি এমনি যাবে?
মানুষকুলে জন্ম নিয়া, সূক্ষ্ম মানুষ হলেম কবে? ॥ঐ
মানুষকুলে জন্ম নিয়া, পশুর ব্যবহার করিয়া
ভবে যদি যাই মরিয়া—
উপায় কি মোর হবে? ॥ঐ
এই জনম বিফলে গেলে, আর কি জনম হবে?
সামনে মহাজনের ঋণে, একদিন মোর ঠেকতে হবে। ॥ঐ
মানুষ জনম শ্রেষ্ঠ করে, আসিলাম এ সংসারে
ভাবিয়া না দেখলেম তারে, শ্রেষ্ঠ কিসে হবে?
তবে কেন মানুষ জনম, নিয়ে ছিলেম ভবে?
মানুষ হয়ে হলেম বেহুশ, মন-মানুষ চিনিব কবে? ॥ঐ
রজ্জবের কর্ম দোষে, মাতিয়া মায়া রসে—
বেলা শেষে পাড়ে বসে, কান্দিলে কি হবে?
দিন গেলে যে দিন পাওয়া যায়, কে শুনেছ কবে?
আজ গেলে কাল দুদিন হবে, এইত রে ভাই নীতি ভাবে। ॥ঐ
৮ নং গান: উপদেশ গান
ভজন তত্ত্ব
আপন দেশে চল মোসাফির, বেলা অবসান
অস্থায়ী এ জগৎ মাঝে, কোথাও নাই স্থান—
বেলা অবসান। ॥ঐ
স্ত্রী-পুত্র জমিদারী, জাকজমকের বাহাদুরী
একদিন যেতে হবে ছাড়ি, গাঠরি তোর বান,
বেলা অবসান। ॥ঐ
মায়ার জগৎ ভালোবাসা, আর কত তোর মনের আশা,
হলে বিবেক বুদ্ধি সর্বনাশা, হল না বিধান—
বেলা অবসান। ॥ঐ
হাদিস-দলিল-কোরআন পড়া, হল কেবল নাড়া-চাড়া
হল না তা আমল করা, কিসে হবে সমাধান—
বেলা অবসান। ॥ঐ
৯ নং গান: প্রশ্নবোধক গান
মারফত তত্ত্ব
নামাজে মন বসে কই,
কারও কাছে মনের বেদন কই?
নামাজ পড়ি মনে করি— অযু-গোসল হল কই,
কার কাছে মনের বেদন কই? ॥ঐ
নাপাক পানিতে জন্ম হয়, ইহা শরীয়তেই কয়,
পানি দিয়া অযু করলে— তাতেই কি পাক হয়?
তুমি জানলে বল সত্য বিষয়, কিসে পাক-পবিত্র হই?
কার কাছে মনের বেদন কই? ॥ঐ
পাক পানিতে অযু হয় শুনি, কোথায় মিলে সেই পানি?
নদীর পানি অপবিত্র বলেছে জ্ঞানী, তুমি খুলে বল ইহার মাইনি,
কোন পানিতে অযু হই?
কার কাছে মনের বেদন কই? ॥ঐ
গেল না মনের গোল, বাড়ল ভীষণ গন্ডগোল,
আদি কথা জানিতে চাই, নামাজের কি ফল?
ভেবে রজ্জব কয়, মোর জনম বিফল?
আসল নামাজ হল কই?
কার কাছে মনের বেদন কই? ॥ঐ
১০ নং গান: উপদেশ-জবাব গান
মারফত তত্ত্ব
এই দেহ পুরে হৃদয় মসজিদ ঘরে,
মনমিনারে পড়েছে আজান।
শুনিয়ে সেই মধুর ধ্বনি,
নবীজি আপনি সেজেছে ইমাম। ॥ঐ
আয় ছুটে যায় মুক্তাদিগণ, ধরিতে নবীজির দা’ওন,
পণ করে চল জীবন-মরণ, সৎ পথে বেঁধে ইমান। ॥ঐ
বিষয়-চিন্তা রেখে দূরে,
যাইয়ে আব-হায়াতের পারে,
দিল দরিয়ার অযু করে, পাক হয়ে চল মুসলমান। ॥ঐ
ইমান সাবুদ হলে পরে,
বিষয়-জ্বালা যাবে দূরে,
শুনতে পাবি পর্দার আড়ে,
গোপনে মাওলাজির শান। ॥ঐ
নামাজের নম্র স্বভাবে,
যবে ফানা-ফিল্লার মাঠে যাবে,
সেইদিন মাওলার দীদার পাবে,
রজ্জব কয়, সাক্ষি দেয় পাক কোরআন। ॥ঐ
১১ নং গান: মারফত গান
প্রশ্নবোধক গান
ওগো মোল্লাজি—
খালি হাতে মোনাজাতের দরকার কি?
নামাজ শেষে হাত উঠাইয়া,
দিলে কি আর পেলে কি? ॥ঐ
নামাজের অর্থ কর, অজীজি মিনতি ধর,
পাঁচ ওয়াক্ত পর, বাকি সময় কর কি?
খালি হাতে মোনাজাতের দরকার কি? ॥ঐ
নামাজ পড়, রোজা কর, হজ কর আর যাকাত কর
আমলে আওলিয়া ধর, বে আমলে হবে কি?
খালি হাতে মোনাজাতের দরকার কি? ॥ঐ
নামাজ তোমার পাঞ্জেগানা, চায় না তা সাঁই রাব্বানা,
ইন্নামাল আমাল বিননিয়্যাত, হাদিসে প্রমাণ দেখি,
খালি হাতে মোনাজাতের দরকার কি? ॥ঐ
তাই রজ্জব কয়, থাইক হুঁশিয়ার, হবে আখেরাতে নিয়তের বিচার,
আসতে যাইতে খাইতে শুইতে, নিয়ত তোমার চাহে কি?
খালি হাতে মোনাজাতের দরকার কি? ॥ঐ
১২ নং গান: উপদেশ-জবাব গান
শরীয়ত তত্ত্ব
ওরে মন পাষাণ, ভেদ জেনে সেই
নামাজে সঁপে দাও প্রাণ।
অনিয়মে ভজন বৃথা, নিয়ম-কানুন আগে জান। ॥ঐ
শরীয়ত আর তরিকতে, হাকিকত আর মারফতে,
নামাজ হুকুম বিধির বিধান,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
ফজর আদম সফি উল্লাহ, যোহর পড়েন খলিল উল্লাহ,
আছর পড়েন ইউনুস নবী, মাগরিব হয় ঈসার কালান,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
এশা পড়েন মুসা নবী, তাইতো পাঞ্জেগানা ভাবি,
উম্মত তরাবে নবী, সই দিলেন রাসূল দেওয়ানা,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
নিয়ম বিনা কার্য হয় না, সর্বকাজে আছে জানা
নবীজির আইন পাঞ্জেগানা, বুঝে না মূর্খ বে-ইমান,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
নামাজের ভিতর রে মন, করে দাও আত্ম-সমর্পণ
হাত তুলে মোনাজাত কালে, রহমত চাও মুসলমান,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
বে-নামাজী রজ্জব কানা, পাঞ্জেগানায় মন বসে না,
মুখে হয় মধুর বর্ণনা, অন্তরে ইবলিশ শয়তান,
ভেদ জেনে সেই নামাজের সঁপে দাও প্রাণ। ॥ঐ
১৩ নং গান: প্রশ্নবোধক বিচার গান
মারফত তত্ত্ব
শরাব-কাজি বেনামাজি, ভাবলে মোরে কেমনে?
যে যেই ভাবে ডাকে তারে, যদি সেই ভাবে সে ডাক শোনে। ॥ঐ
যার যেই মতের আরাধনা, এক জনারই উপাসনা।
আলেমেরা চায় পাঞ্জেগানা, সাধুতে চায় সন্ধানে॥
হাজীরা চায় কাবা ঘরে, পাদ্রী চায় গির্জা ঘরে
ব্রাহ্মণেও তা চায় মন্দিরে, দেবতাদের পূজনে। ॥ঐ
একটি মাত্র চায় এ প্রহরে, পশু-পাখিও ডাকে তারে,
সেই ডাকে সে রয় না দূরে, চায় যদি মন-প্রাণে। ॥ঐ
নামাজের অর্থ নম্রতা, বুঝে দেখা সেই বারতা
তবে কেন অশ্লীলতা, বলিতেছে জবানে? ॥ঐ
রজ্জবের মন তাই উচাটন, কিসের সাধন কিসের ভজন,
হিংসায় ভরা হৃদয় যখন, কি হবে আর সাধনে? ॥ঐ
১৪ নং গান: উপদেশ-জবাব গান
শরীয়ত তত্ত্ব
শর্ত জেনে শরীয়তে কোরআন পড়।
১৪ সেজদা, ৭ মঞ্জিলের মর্ম জেনে কর্ম কর। ॥ঐ
নবীজি কোরআন পড়ে, ভোর হতে শুরু করে
যেখানেতে বন্ধ করে, সেইখানে এক মঞ্জিল ধরে,
সপ্তদিনে খতম করে, তাতেই সপ্তম মঞ্জিল ধরে
সূরা হতে ছয় পারা, সূরা নেসার এক মঞ্জিল তোর। ॥ঐ
সূরা মায়েদা হতে, ১১ পারায় তওবাতে,
দুটি মঞ্জিল হিসাবেতে, এখানে তা পূরণ কর,
ইউনুস হতে ১৪ পারা, ভেদ জেনে মন মুগ্ধ কর। ॥ঐ
সূরা বনি ইসরাইল হতে, ১৯ পারা ফোরকানেতে,
চার মঞ্জিল হিসেবেতে, মন-প্রাণ বিশ্বাস কর
পঞ্চ মঞ্জিল জেনে তাতে, দশটি সেজদা আদায় কর। ॥ঐ
সূরা ছাফ্ফাত ২৬ পারা, সূরা হোতে ৬ মঞ্জিল পুরা,
সূরা কাফ ৩০ পারা, সপ্ত মঞ্জিল আদায় কর
সপ্ত মঞ্জিল ১৪ সেজদা, প্রাপ্য মালিক বারে খোদা
রজ্জব কয়, করলে আদা, পাবি মাওলাজির খবর। ॥ঐ
১৫ নং গান: প্রার্থনা গান
শরীয়ত তত্ত্ব
মকবুল-এ-খোদার পেয়ারা তুমি,
নবী মোহাম্মদ ॥ঐ
সোনা মুখে শুধালে তুমি,
কালেমা শাহাদত ॥ঐ
তুমি বিশ্বজগতের নবী,
পাক মোহাম্মদ ধ্যানের ছবি,
তুমি দিবা তুমি রবি, আউয়ালে আহমদ। ॥ঐ
ধন্য মা আমেনার কোলে, এলে আকাশে চাঁদ-ধরা তলে,
ধুলো শিশু মায়ের কোলে, ইসলামের সুপথ। ॥ঐ
যত পাপী-তাপী এ ধরাতে,
এলে তুমি মুক্তি দিতে,
আঁধার কেটে আলো দিতে,
ছিল তব মত। ॥ঐ
রজ্জব কান্দে তাই অনিবার, তুমি বিনে বন্ধু নাই আর,
তুমি আমার পারের কাণ্ডার, আঁধার পুলসিরাত। ॥ঐ
১৬ নং গান: মারফত তত্ত্ব গান
হৃদয় ভরে মধুর সুরে,
গাও মোহাম্মদ সাল্লে আলা
এই নাম তোমার হবে সাথী, হাশরের পারের বেলা। ॥ঐ
এই নাম তোমার চিরসাথী, আঁধারে জ্বলিবে বাতি,
গাও সেই নাম দিবারাতি; ইয়া মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ! ॥ঐ
১ লাখ ২৪ হাজার পয়গাম্বরগণ, ইয়া নাফসি বলবেন যখন,
পাপী উম্মতি বলিয়ে তখন, কান্দিবেন রাসুল আল্লাহ। ॥ঐ
এই নাম সাধি রে সাধনার বলে, জাগাও সেই নাম হৃদয় কমলে,
প্রত্যেক দমে সেই নাম নিলে, ঘুচিবে ত্রি-ভাব জ্বালা। ॥ঐ
রজ্জব কান্দে নবীর প্রেমে,
আমার মন মজে না কেনে,
আর হবে কি শেষের দিন,
দিন গেলে সন্ধ্যা বেলা? ॥ঐ
১৭ নং গান: প্রার্থনা গান
শরীয়ত তত্ত্ব
বিচার দিনের স্বামী তুমি হও রাব্বিল আলামিন
পাপী ও তাপী অপরাধী,
তোমার কাছে চিরঋণী। ॥ঐ
রহমান রাহিম নামটি ধর, না চাইতে দয়া কর
তাইতো তুমি সবার বড়,
তোমার কাছে চিরঋণ। ॥ঐ
তোমারি করুণা বলে,
যত বৃক্ষ আদি ভূমণ্ডলে,
তোমার ইচ্ছা মত চলে,
চন্দ্র-সূর্য, রাত-দিন। ॥ঐ
তুমি জীবনের সর্বসত্ত্বা, কোরআন হাদিস তোমার তত্ত্ব
তুমি আদি তুমি অন্ত,
তুমি হও অব্যয় অসীম। ॥ঐ
কান্দিছে তাই রজ্জবের প্রাণ, বিচার দিনের হাশর মিজান
তুমি মাওলা দিও আসান,
নাম ধরে রাহমানের রাহিম। ॥ঐ
১৮ নং গান: শরীয়ত তত্ত্ব
ঘুমাইয়ে রয়েছে নাকি? নবী দু’জাহান
মনে হলে আঁখি মেলে, দেখ তব উম্মতের নিদান,
নবী দু’জাহান। ॥ঐ
সাজায়ে তওহিদের তরী, তুমি তাতে হও কাণ্ডারী
তোমার ইসলাম ধর্ম শ্রেষ্ঠ করি,
নাম দিলে আজাদ মুসলমান,
নবী দু’জাহান। ॥ঐ
নিয়ে তব মত, তোমার উম্মত,
ধ্যানে-জ্ঞানে রাখি তোমারই সুরত,
(জানি) তোমার ধর্ম সূক্ষ্ম ও সুপথ,
সর্বশান্তি এ দ্বীন ইসলাম,
নবী দু’জাহান। ॥ঐ
ইসলাম ধর্ম সমাধানে, এ বিশ্বের আজাদীগণে,
শপথ করেছে জীবন পণে, হে মোহাম্মদ রাখ সম্মান
নবী দু’জাহান। ॥ঐ
কান্দিয়া তাই দিবস-রাত, রজ্জব করে এই ফরিয়াদ,
তোমার ধর্মে তুমি বাড়ায়ে দাও হায়াত,
আখেরে মুক্তি পেতে কর শক্তি দান,
নবী দু’জাহান। ॥ঐ
১৯ নং গান: বিচার গান
মারেফত তত্ত্ব
হে মুসলমান, ইসলামের বিধান,
ঠিক রেখে চল সমাজ কল্যাণ।
মর্ম বিহীন কর্ম, করিতেছি ধর্ম,
এই কি? ভাই, বিধির বিধান। ॥ঐ
তুমি-আমি ভাই-ভাই, মুখে শুধু বলি তাই,
এক পিতা এক মায়ের সন্তান,
কথার বেলায় মিষ্টি- কাজের নাই সে দৃষ্টি,
আসলে খুঁজে মরি- যার যেই সন্ধান। ॥ঐ
ইসলামের নীতি চায় চিরশান্তি, একতাবদ্ধ হোক ইমান
আমি খাব যাহা- তোমাকেও দিব তাহা,
কথার আমি মাত্র- কাজে বে-ইমান। ॥ঐ
শিক্ষা পেয়ে তাই শিক্ষিত নাম ধরেছি,
আপনাকে বড় ভেবে সমাজকে তাই ভুলেছি
চিনি না এখন আপন দেশের দেশী,
আমি বাড়াতে চাই আমার সম্মান। ॥ঐ
ধনের গৌরবে তাই সেজেছি ভদ্রতা
কাছে আসিলে কাঙাল বলিনে বেশি কথা
গরীবের প্রতি নাই তেমন মমতা,
আসলে মোর হৃদয় পাষাণ। ॥ঐ
রজ্জবের এই খেলা হল না শৃঙ্খলা—
হল না সমাজ সমাধান,
কান্দিয়া দিবস-রাত করি তাই ফরিয়াদ,
সামনে যেন হয় জ্ঞানচক্ষু দান। ॥ঐ
২০ নং গান: পাড়ঘাটের গান
দেহতত্ত্ব
হাবুডুবু খেলে তরী কালনদীতে।
আমার ভাঙা মাস্তুল ছেঁড়া বাদাম, জল মানে না বৈঠাতে,
কালনদীতে। ॥ঐ
জীর্ণ তরীর চত্বর অংশে, ডাইনে-বাইনে জল ধরেছে গো,
এখন বৈঠা বাওয়া দূরের কথা, হাত দিয়েছি উগরাতে,
কালনদীতে। ॥ঐ
চৌদ্দ পোয়া তরীখানা, দাঁড়-বৈঠার মাল্লা ছয় জনা গো
করে তারা কুমন্ত্রণা, সকলে চায় পালাতে,
কালনদীতে। ॥ঐ
আরও দশজন প্রহরী দাঁড়ি, তারা কেউ বাধ্য নয় আমার গো,
তারা দেখিয়া এই অকূল পাথার, ছেড়ে গেল যার যে মতে,
কালনদীতে। ॥ঐ
রজ্জব কান্দে পরে ফাঁদে, নিলে না বৈঠা বেঁধে গো,
আমার জনম গেল কেঁদে কেঁদে, পারলেম না, গাড়ি জমাইতে,
কালনদীতে। ॥ঐ
২১ নং গান: পাড়ঘাটের উপদেশ গান
দেহতত্ত্ব
পার ঘাটে পার হতে যদি চাও রে মন,
আগে ঠিক করে নেও দাঁড়ী-মাল্লা,
বাদী তোমার যে ছয়জন। ॥ঐ
দিলের শক্তি তক্তার জ্ঞানে গজাল, এড়াবে জঞ্জাল,
অহিংসার দিলে পাতন, ঘুচে যাবে জ্বালাতন।
তাতে ভক্তির মাস্তুল, নামের বাদাম,
প্রেম রশিতে জাঁগাতে দাও টান,
ভাটিতে নয় ধর উজান, মুর্শিদ নাম করে স্মরণ। ॥ঐ
সেই অকূল নদীর অগাধ জলে, চালাও তরী কলকৌশলে,
খেলবে না আর পাকে পরলে, যদি মন থাকে চেতন?
সতের মনের আলাপনে, থাকবে মন সচেতনে,
নিরিখ রাখ, দু’নয়নে, পাবে মুর্শিদ দরশন। ॥ঐ
রজ্জবের কর্মদোষে কাল কাটাইয়ে মায়ার রসে,
পাড় ঘাটে রয়েছে বসে, হল না সাধন-ভজন।
তরীতে নাই গার আর গাইনি, ডাইনে-বাইনে উঠে পানি,
দিলেম না তাই সময় জানি, কখন যেন হয় মরণ। ॥ঐ
২২ নং গান: পাড়ঘাটের প্রার্থনা গান
দেহতত্ত্ব
মাঝিরে রাস্তা বহু দূরে, পার কর আমারে।
আমি এসেছিলাম পরবাসে, কয়েকদিনের তরে,
পার কর আমারে। ॥ঐ
মাঝিরে লাভের আশায় ভবের বাড়ি, এলেম রত্ন বোঝাই করি,
যতন করি না রাখিলেম তারে, ছয় বাটপারে যুক্তি করে,
আমায় নিয়ে ফালায় ফেরে, কামিনীর বাজারে,
পার কর আমারে। ॥ঐ
মাঝিরে সেই বাজারের ভাব জানলেন না, মাটির দরে বেঁচলেম সোনা
বেচাকেনা- মায়া নদীর পারে,
তফিল দেখি হিসাব করে, আসলে মোর খাস্তা পরে, ভাবি তাই অন্তরে।
পার কর আমারে। ॥ঐ
মাঝিরে মহাজনের ষোল আনা, চালান খেয়ে হলেম দেনা,
জিজ্ঞাসিলাম কী জবাব দিব তারে,
তুমি মাঝি দয়া করে, পার করিয়ে দাও ঐ পারে,
সবাই গেছে ছেড়ে, পার কর আমারে। ॥ঐ
২৩ নং গান: পাড়ঘাটের উপদেশ গান
দেহতত্ত্ব
পারের তরী পাড়ের বাঁধা,
যাবে যদি ছুটে আয়,
মাশুল বিনা পার করে না,
পাড় ঘাটে পারের নাইয়া। ॥ঐ
মাশুল দিলে ভক্তি করি, পার করে দেয় তাড়াতাড়ি
গুরুজি নায়ের কাণ্ডারী, বসে ডাকে হাল-বৈঠায়। ॥ঐ
বাহাত্তুর বৎসরের পাড়ি,
বেলা আছে দণ্ডচারি,
আঁইঠা বান্ধ বৈঠার দড়ি, ছয়জন দাঁড়ী, দাঁড় মাল্লায়। ॥ঐ
কালো মেঘ আকাশের গায়, ঝড় উঠেছে ভব দরিয়ায়,
পাড়ি দিচ্ছে সুজন নাইয়া, ঢেউ কেটে উজানে যায়। ॥ঐ
রজ্জব কান্দে পাড়ের ঘাটে, ভক্তি-মাশুল নাই তার মোটে,
তোমার দয়া হলে বটে, তুলিয়ে নিও নৌকায়। ॥ঐ
২৪ নং গান: পাড়ঘাটের প্রার্থনা
অকূল নদীর ভীষণ তুফান, দয়াল,
কেমন যাই বাইয়া।
দেখিয়া এই ভবতরঙ্গ, দয়াল,
মরি ভাবিয়া। ॥ঐ
একে আমার জীর্ণ তরী,
তাতে পাপে বোঝাই ভারী রে,
দয়াল, এসে হও কাণ্ডারী, দয়াল,
আমি যাই বাইয়া। ॥ঐ
তরীর মাঝে ছয়জন দাঁড়ী,
কেহ নয় মোর তাবেদারী রে,
তারা যার যে মতে গেল ছাড়ি, দয়াল,
আমায় ফেলিয়া। ॥ঐ
বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন,
আপন বলতে নাই কোনো জন রে,
তোমার নিজ গুণে এখন,
দাও কিনারায় ভিড়াইয়া। ॥ঐ
ঢেউ উঠেছে ভব দরিয়ায়,
কখন যে তরী ডুবে যায় রে,
রজ্জব কান্দে পারের আশায়, দয়াল,
তোমার পানে চাইয়া। ॥ঐ
২৫ নং গান: উপদেশ গান
কাম সাগরের সাধন তত্ত্ব
সাঁতার যদি দিবি রে মন ॥ঐ
কাম সাগরের সাঁতার দিতে,
গঙ্গার সাধন যেন নিবি। ॥ঐ
কলিতে কালসাপিনী, ধরছে বিষাক্ত ফনি,
মহামায়া রাক্ষসিনী, দেখলে ভয় পাবি
তত্ত্বদর্শী গুরুর কাছে- সন্ধান জেনে নিবি,
সাধন ছাড়া গেলে তথায়,
পলকেতে প্রাণ হারাবি। ॥ঐ
সেই সাগরের রসিক যারা, সদায় সাঁতার খেলে তারা
হয় না কভু আত্মহারা, তাঁদের স্বভাব নিবি,
কুম্ভক দমের সাধন করে- নিজে স্বাধীন হবি,
মন তোর- দশ ইন্দ্রিয় জয়ী হলে পর, মরার জায়গায় বাঁচতে পাবি। ॥ঐ
কেহ যদি দর্প করে, যায় কামিনীর কাম সাগরে,
ভক্তি ছাড়া শক্তি করে, ফলে মূল হারাবি।
রজ্জবে কয়, ভক্তি ভরে, যে জন তথায় যাবি,
রাখলে ভক্তি পাবে মুক্তি,
দিগ্বিজয়ী হতে পারবি। ॥ঐ
২৬ নং গান: প্রশ্নবোধক গান
কাম সাগরের সাধন তত্ত্ব
কামিনীর কাম সাগরে,
কাল কুম্ভীরের ভয়।
ঘাটে নিরাষ পানি,
দিন-রজনী উদ্ধস্রোতে বয়। ॥ঐ
সেই ঘাটেতে যেতে রে মন,
সদাই হয়ে রয় উচাটন,
মনে করে যার কখন প্রাণে লক্ষ ভয়। ॥ঐ
যোগ-ব্যায়ামে যোগী-ঋষি, নদীর ঘাটে আছে বসি,
তিনটি দাঁড় একযোগে আসি,
মাসে তিন দিন জোয়ার বয়। ॥ঐ
শুনি সেই ঘাটেতে রসিক সুজন,
বারণ করে জন্ম-মরণ,
রজ্জব কয়, হলে কোন সাধন, জন্ম-মৃত্যু বারণ হয়। ॥ঐ
২৭ নং গান: উপদেশ গান
কাম সাগরের সাধন তত্ত্ব
গুরুর নাম সম্বল করে, যে জন চলে, ভয় কি রে মন তার?
সে যে অকূল নদীর ভীষণ পাড়ি, অনায়াসে হয় পার,
ভয় কি রে মন তার? ॥ঐ
গুরু পদে প্রেম-ভক্তি, ঠিক আছে তার মতি-গতি
সাধনের বল আদ্যশক্তি, সাধিত হয় তার,
ভয় কি রে মন তার? ॥ঐ
যার হয়েছে রাগের কারণ, অসাধ্য হয়েছে সাধন
উল্টে গেছে বিধির লিখন, কাল-শমন তার তাবেদার,
ভয় কিসের মন তার? ॥ঐ
যে করেছে শক্তি সাধন, মুক্ত জীবের জন্ম-মরণ,
পরম অংশ হলে সাধন, জন্ম-মরণ তার এখতিয়ার,
ভয় কি রে মন তার? ॥ঐ
রজ্জবের নাই ভক্তি-বিশ্বাস, কিসে কাটবে সেই মায়াপাশ
সাধন-ভজন মূলেই বিনাশ, যমের ভয় হয় অনিবার,
ভয় কি রে মন তার? ॥ঐ
২৮ নং গান: প্রার্থনা গান
ভজন তত্ত্ব
আপন ভোলা মন পাগলা বুঝে কই?
মন চায় অ-সাধনে, অসৎ ধ্যানে, হতে চায় কু-শ্রবণে, ভুবনজয়ী! ॥ঐ
মন বেটা পেয়েছে দেহ-রাষ্ট্রের ভার,
ও তার চালক ছয়জন কেউ নয় সুজন, সৎপথে নাই কারো গমন
এক একজনা এক এক মতের তাবেদার,
এরাই সেজেছে দেহ-রাষ্ট্রের মিনিস্টার,
এখন মন বেটা চালায় যে মতে,
তারাও চলে সেই পথে, আমি যেতে চাইলে সাধন পথে,
তারা কেউ দিচ্ছে না সই। ॥ঐ
বিষয় মদে মত্ত হয়ে, মন আমার সাজিয়ে অহিকের সাজে-
যেতে চায় না গুরুগঞ্জে, সদাই কামিনীর কুঞ্জে তাবেদার,
বুঝাইলে না বুঝে, চঞ্চল মন আমার, সদাই চলে উল্টা কলে,
আত্ম-সুখ বাহুর বলে, বন্দী হয়ে মায়া-জালে,
গুরু-ভজন হইল কই? ॥ঐ
হস্ত-পদ, লিঙ্গ-গুহ্য, বাক আমার,
কর্ম-চক্ষু, নাশা-কর্ণ, তারাও হয়ে এল ক্ষীণ
খন্ড খন্ড হয়ে এল শক্তি তার, নিস্তেজ হয়ে পড়িয়ে আছে এবার
প্রেম করে অসতের সনে, পরাজয়ী কাম রণে,
রজ্জব কাঁদে মায়া ঋণে, কী সন্ধানে মুক্তি হই? ॥ঐ
২৯ নং গান: উপদেশ গান
ভজন তত্ত্ব
জ্ঞান দিয়ে মন রাখ রে সংশোধনে,
হলে জ্ঞানের অঙ্কুর, মন পাগল তোর
ভয় কি রে কাল-শমনে। ॥ঐ
গুরু তত্ত্ব সত্য মোর হয়েছে যার,
ছাড়িয়ে অসতের সঙ্গ, ফিরে গেছে মন মাতঙ্গ,
গুরু মোর হইয়ে অঙ্গ, গেছে তার,
কাম-তরঙ্গে হয়ে গেছে নির্বিকার।
গুরুকে করে কাণ্ডারী, প্রেম-তরঙ্গে দিচ্ছে পাড়ি,
হয়ে গেছে মন বেপারী, সজ্ঞানে সু-ভাবনে। ॥ঐ
কামিনীকূল জয়ী হয়ে গেছে যার,
সাধক দেশ করিয়ে ধন্য, খণ্ড ভাণ্ড করে পূর্ণ
অখণ্ডকে করে নিছে অধিকার, সর্বদা স্বাধীন দেশে বসতি তার।
সিদ্ধির দেশের পারাপারে, আদ্যশক্তি অর্জন করে,
পরমে জীব মিশলে পরে, কাজ কি রে আর সাধনে? ॥ঐ
তখন পরমে জীব এমনি ভাবে হয় মিলন,
যেমন পানিতে চিনি মিশিলে, ধরা যায় না মুখে না দিলে
দুগ্ধতে তেমনি মিলে রয় মাখন, রসিকে পাইলে করে আস্বাদন,
যদি কার ভাগ্য ঘটে, ঘোটা দিলে মাখন উঠে,
রজ্জবের ঘটে না মোটেও, দয়াল কাদের চাঁদ বিনে। ॥ঐ
৩০ নং কবিতা আবৃত্তি: ত্রিপদী ছন্দ
মানুষ কেন খুঁজে তোমায়, জানিনা সে কিসের আশায়
ভাবি সদাই তুমি আমার কে।
নও তুমি মাতা-পিতা, নও তুমি বন্ধু-ভ্রাতা,
কেন হৃদয় চায় তোমাকে?
নও কারো বংশধর, জীবনে না নেও খবর,
কুটুম্বিতা নহেকো আমার।
তোমাকে যে বিশ্বাস করি, বল তো কেমন করি;
নহে তবে আকার কিবা-কার?
বেহেস্ত-দোযখ আছে শুনি, কেমন রূপ তার কোথায় জানি,
স্বচোখে না দেখেছি একদিন।
পেয়ে কাগজের পত্র, বিশ্বাস করেছি মাত্র
জানিনা সে মিলিবে কোনদিন।
তাই এ বোকা লোক ধোঁকায় পড়ে, মিছামিছি ঘুরে মরে;
আশায়-আশায় গেল এ জীবন।
মানুষ জনম করে ক্ষয়, না পায় তব পরিচয়,
সার কেবল মানুষের ক্রন্দন।
মোঃ রজ্জব আলী দেওয়ান
তাং: বাংলা ১৩৭৩ সন।
৩১ নং গান: প্রশ্নবোধক, ভক্তিমূলক
জীবতত্ত্ব
তোমাকে খুঁজিতে গিয়ে,
নিজেরে হারিয়ে ফেলি,
(ভাবি) আমি ছাড়া তুমি যে ভিন্ন,
মিছে ভবের স্থলস্থলী। ॥ঐ
আমি যখন আমার মাঝে, দেখতে চাই তোমাকে খুঁজে
নিজেরেও ভুলে যাই নিজে, তুমি যে কে, তাইতো বলি। ॥ঐ
যদি-ই বা আছ তুমি; আমায় ধনের তুমি ধনী,
আমি ডাকি বলে হও তুমি গুণী, আমারই মুখে তোমার গুণাবলী। ॥ঐ
কে-কয় তুমি আছ ভিন্ন, আমার দিয়েই তুমি ধন্য,
আমি বিনে সবই শূন্য; ভিন্ন তুমি কিসে বলি? ॥ঐ
রজ্জব অতি বোকা বলে, মনের মত ভয় দেখালে,
এইভাবে আর ধোঁকায় ফেলে, কতকাল রাখিবে বলি? ॥ঐ
৩২ নং গান: উপদেশমূলক জবাব গান
পরম তত্ত্ব গান
আল্লা প্রাপ্ত বিষয় সত্য, তত্ত্ব বিধান পীরের কাছে
ও যার পীর হয় কামেল, ফয়েজ হাসেল,
যার হয়েছে সে পেয়েছে। ॥ঐ
যেমন যেতে হলে জজের কোর্টে, একা যাও যায় না তটে,
উকিল ছাড়া গেলে বটে;
হাকিম বেটা নেয় না কাছে। ॥ঐ
নাসুত-লাহুত-মলকুত-জবরুত, তার ভিতরে খেলছেন মাবুদ
নাভিকুণ্ড হতে হাহুত, নাসির বাদ ঘুরিতেছে। ॥ঐ
আগে কর বিশ্বাস স্থাপন,
আপনিই ভক্তি জাগবে তখন
ভক্তির মূলে, প্রেম সলিলে,
দেখবি রূপের কিরণ তথায় ভাসে। ॥ঐ
সেই রূপ দেখতে বেশ চমৎকার,
স্বরূপে রূপ রূপের আকার
দেখলে জীবনের রয় না বিকার,
সে যে, এই জগৎ ধিক্কার দিয়েছে। ॥ঐ
রজ্জব কয় তাই ইশক ছাড়া,
অধর ধরা যায় না ধরা,
ফানার মাঠে গেলে তোরা,
দেখতে পাবি চোখের কাছে। ॥ঐ
৩৩ নং গান: ভক্তিমূলক, বিদ্রোহী গান
জীবতত্ত্ব গান
তুমি আছ তো বেশ, থাকে ভালো, তাতে আমার কি আসে যায়?
বেদনার অন্তরে খুঁজে বেড়াই যারে, সে যদি না ফিরে চায়। ॥ঐ
কেউ জেনেছে তুমি মসজিদে-মন্দিরে,
কেউ জেনেছে তুমি আছ গির্জা ঘরে,
হাজীগণ তোমায় পেতে কাবা ঘরে, চলেছে সুদূর মক্কায়। ॥ঐ
কেউ জেনেছে তুমি তীর্থ গয়া-কাশী, হয়ে কেউ উদাসী, হয়েছে সন্যাসী,
নিয়ে প্রেম-ফাঁসি লোক-সমাজে দোষী, হয়ে বনবাসী, তবু না পায়। ॥ঐ
জনমের তরে এই ব্রহ্মাণ্ড ছেড়ে, চলে গেল যারা, যায় নাই প্রকাশ করে,
আবার আসতেছে, যে জন বলে, নাই কখন সেই রূপ কেমন আছে কোথায়? ॥ঐ
দরশনে-পরশনে, শ্রবণে-ঘ্রাণে; মিলে না তোমায় শয়নে-স্বপনে,
আচার-আলাপনে পাইনি কোনো স্থানে, বুঝিব কেমনে তুমি কোথায়? ॥ঐ
রজ্জবের মন তাই উচাটন,
জীবনে যখন হল না দরশন,
আমার কাদের চাঁদের চরণ-পরশ রতন,
পাই না চরণ, অনায়াসে। ॥ঐ
৩৪ নং গান: উপদেশমূলক গান
পরম তত্ত্ব গান
শুধু ভক্তি দিলেই কি হবে রে,
সরল স্বভাব নাই যার দিলে?
হলে কাকের বাসার কোকিল ছানা, তবু জাত-বুলি কভু না ভুলে,
সরল স্বভাব নাই যার দিলে। ॥ঐ
সোনা-পিতল-তামা-কাঁসা, পরিষ্কার হয় মাজলে-ঘষলে
ওড়ে আঁকড়া, শত দুধে ধুইলে, সাফ হয় না তার কোন কালে,
সরল স্বভাব নাই যার দিলে। ॥ঐ
সাফ করা যায় লৌহ-ঝংকার, পরিষ্কার হয় রেত মারিলে
ও যার হৃদয়ে ধরেছে জং, সাফ হয় না কোন কৌশলে,
সরল স্বভাব নাই যার দিলে। ॥ঐ
জং ধরা রজ্জবের মন,
গুরু বাক্য হয় না চেতন,
ওরে থাকলে স্মরণ, পেত চরণ,
এই জনম যায় না বিফলে,
সরল স্বভাব নাই যার দিলে। ॥ঐ
৩৫ নং গান: উপদেশমূলক গান
দেহতত্ত্ব গান
পরিষ্কার রাখ মন তোর, দেহ-ভাণ্ড ঘর।
সন্ধানে সুজন মিস্ত্রি, বেঁধেছে রং-মহল ঘর,
দেহ-ভাণ্ড ঘর। ॥ঐ
হাড়ের আঠনে চামড়ার বেড়া, ৩৬০ ইস্ক্রু মারা
২০৬ খান খুঁটির উপর, তাতে তার বসায়ে ইলেকট্রিকী
রেখেছে চমৎকার করি রে, মাঝখানে বসায়ে ইঞ্জিন ঘর,
দেহ-ভাণ্ড ঘর। ॥ঐ
পঞ্চধাতুর ঘেষের বলে, দিবা-রাত ইঞ্জিন চলে,
নষ্ট হলে বিপদ হবে তোর,
মুর্শিদ নামের বুরুশ দিয়া, রাখ ইঞ্জিন সাফ করিয়া রে,
আরও কয়দিন চলিবে বিস্তর, দেহ-ভাণ্ড ঘর। ॥ঐ
এই ঘরের চতুর অংশে, আবর্জনায় ঘেরিয়াছে,
তার ভিতরে আছে পোকা-মাকড়, ছয়জনা কামলা দেহ পুরে,
বেতন দিয়া খাটাও তারে রে, রবে না আর সাপিনীর ডর,
দেহ-ভাণ্ড ঘর। ॥ঐ
মন পরিষ্কার, দিল পরিষ্কার, বাড়ি-ঘর রাখ পরিষ্কার
চাই পরিষ্কার শহর কি বন্দর,
রজ্জবে কয়, পরিষ্কারে,
মূল মহাজন বিরাজ করে রে, তোরে সুজনে করিবে আদর,
দেহ-ভাণ্ড ঘরে। ॥ঐ
৩৬ নং গান: প্রশ্নবোধক, ভক্তিমূলক ও নিগুঢ় তত্ত্ব গান
আপনি ধরা না দিলে সাঁই, ধরতে কে পারে?
নিজ গুণে দিলে চেনা, সে জনে চিনে তোমারে,
ধরতে কে পারে? ॥ঐ
আত্মা রূপে হয় কোন জনা, হয় নি আমার চেনা-জানা।
সাধন-ভজন-উপাসনা; বৃথা সংসারে,
ধরতে কে পারে? ॥ঐ
পঞ্চ আত্মা দেই মাঝে, কোন গুণে কেন বিরাজ কি কাজে
আছ হৃদয় মাঝে, কেমন জানব তোমারে,
ধরতে কে পারে? ॥ঐ
কোথায় আছ কি রূপ ধরে, চিনব তা কেমন করে
কে আত্মা আর কে বিধাতা, বসত করে কত দূরে,
ধরতে কে পারে? ॥ঐ
যার হয়েছে আপন চেনা, সে জন চিনে সাঁই রাব্বানা
জন্ম অন্ধ রজ্জব কানা, চিনল না সে আপনারে,
ধরতে কে পারে? ॥ঐ
৩৭ নং গান: উপদেশের জবাব
নিগুঢ় তত্ত্ব গান
মানুষ ধরবি তোরা কিসে?
ঘরের মানুষ আপন ঘরে,
বিরাজ করে গোপন বেশে। ॥ঐ
আগুন-পানি-বাতাস-মাটি, দেহ করে পরিপাটি
আত্মা রূপে আছে খাঁটি, পঞ্চ চিজে মিশে
তত্ত্ব জেনে নও গা মত্ত, ভক্তি-প্রেম-বিশ্বাসে,
সেই দিন গোপন মানুষ আপন বেশে এসে,
ধরা দিবে চোখের পাশে। ॥ঐ
মাটির গুণ মাধুর্য বটে, আগুনের গুণ গরম ছোটে,
পানির গুণে শীতল জোটে, স্পর্শগুণ বাতাসে,
আর একটি গুণ আছে গোপন, চতুর গুণে মিশে,
তারে বাছট করলেই যাবে ধরা, অনুরাগ শক্তির সাহসে। ॥ঐ
যেমন জ্বলন্ত অগ্নি অনলে, হঠাৎ পানি ঢালিলে,
অগ্নি তখন লোপ পেয়ে যায়, বাষ্প উঠে ভেসে,
তেমনি স্বরূপ এই আত্মার রূপ, আছে দেহে মিশে,
এবার হয়ে মানুষ, হইসনে বেহুশ, অধর ধরা পাবে হুশে। ॥ঐ
প্রমাণ তার ইলেকট্রিকি, অষ্টধাতু মিলন করি,
অগ্নি দিয়া যুক্তি করি, বাতি জ্বালায় ঘেষে,
তারে তারে জয়েন্ট হলে, জ্বলে অনায়াসে,
ভেবে রজ্জব কয়, সেই তার ছুটিলে, বাতি নিভে যায় নিমিষে। ॥ঐ
৩৮ নং গান: জীবতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, বিদ্রোহী গান
বুঝেছি বেশ বুঝেছি, বেশি বুঝের নিষ্প্রয়োজন
বেশি বুঝে বাড়ল বোঝা,
তবু বুঝের শেষ নাই রে যখন। ॥ঐ
খুঁজব কত খুঁজি যত,
তবু খোঁজের নাই রে অন্ত,
তাইতো খোঁজা দিলেম ক্ষান্ত, খুঁজে অন্ত পাইনি যখন। ॥ঐ
ভাবি যত অবিরত,
বিরহ ভাব বাড়ে তত,
সেই ভাবনায় হয়ে হত, আনন্দে তাই সঁপেছি মন। ॥ঐ
বুঝলে বোঝা যায় না বৃথা, খুঁজলেও যার হয় না খোঁজা
তাইতো কবির রাস্তা সোজা, নিরবে করে নিরূপণ। ॥ঐ
খুঁজব কারে, খুঁজি যারে,
সেই খদের খোদ নাই সংসারে
থাকলেও আছে জীবের ঘরে, দীনও রূপ করে ধারণ। ॥ঐ
এইখানেই রজ্জবের সীমা, আমি ভিন্ন তুমি কেউ না,
আমি আমার হলে জানা;
তোমায় জানা রয় না গোপন। ॥ঐ
৩৯ নং গান: উপদেশমূলক
পরম তত্ত্ব গান
আছে সরল দেশে সত্য মানুষ,
নিত্য বিরাজমান।
সেই মানুষের সঙ্গ নিলে,
মানুষ হয় প্রধান। ॥ঐ
স্রষ্টা হতে সৃষ্টির দিনে,
মানুষ শ্রেষ্ঠ কয় কোরআনে
জীবের ভক্তি-বিশ্বাস-প্রেমের গুণে, কর অনুসন্ধান। ॥ঐ
সেই সরল দেশের সুধা পানে
রবে ষড়রিপু সচেতনে,
মুগ্ধ তারা তত্ত্বজ্ঞানে, পেয়ে সুঘ্রাণ। ॥ঐ
সেইজন রিষ্ট চিত্তে তুষ্ট ধ্যানে
মুগ্ধ মধুর আলাপনে
মুর্শিদ নাম তীক্ষ্ণ কৃপাণে, কাটে মায়ার বান। ॥ঐ
রজ্জবের মন অতি দুষ্ট, সরল পথে রয় না তুষ্ট
কিসে হবে জনম শ্রেষ্ঠ,
মন বড়ই নাদান। ॥ঐ
৪০ নং কবিতা আবৃত্তি: ভোরের ভজন
ত্রিপদী ছন্দ
সৃষ্টির স্রষ্টা তুমি, সকল শাস্ত্রেতে শুনি,
না দেখিনু শুনিয়াছি কানে।
তুমি ওহে দয়াময়, সদাই রয়েছ সহায়,
দয়া কর এ ত্রিভুবনে।
তাই তুমি দয়ালু বলে, ডাকিতেছি হৃদয় খুলে,
নাহি জানি নিতে তব নাম।
কোথায় আছ কেমন করে, নাহি জানি কত দূরে
চেনা জানা নাইক তব ধাম।
শুনিমাত্র তুমি, তোমাকে দেখিব আমি,
এই আমার মনের অভিপ্রায়।
তা না হলে এই সংসারে, কেন বা পাঠালে মোরে,
দেখা যদি নাহি দাও আমায়?
তুমি যে আমার সখা, কেমনে জানিব তাহা,
দেখা যদি নাহি দাও মোরে?
মানুষ জন্ম শ্রেষ্ঠ করে, পাঠালে এই সংসারে;
বল আমি শ্রেষ্ঠ কী প্রকারে?
কীট-পতঙ্গ আদি যত, তোমার জন্য অবিরত;
সবাই তার গায় গুণগান।
আমিও পশুর মত, ডাকি যদি অবিরত,
শ্রেষ্ঠ আমি কিসে তার প্রমাণ?
মোঃ রজ্জব আলী দেওয়ান
তাং: বাংলা ১৩৭৩ সন।
৪১ নং গান: প্রশ্নবোধক, ভক্তিমূলক
সৃষ্টির তত্ত্ব গান
তুমি এ-বিশ্ব-মরুর প্রাণে, রয়েছ গোপনে,
নাহি জানি করে আছো কি সন্ধান।
সাধু-মহৎজনে খোঁজে মনের বনে,
তব আলেমগণে খুঁজিছে কোরআন। ॥ঐ
শুনেছি প্রেম সাধিতে তুমি, দিতে আলিঙ্গন
এই ব্রহ্মাণ্ড করিলে সৃজন,
ছিলে একেশ্বর করিলে দোসর,
সাজাইতে এই মহান বাগান।
সেই প্রেম সাধিতে তোমায়, কেহ বলে নাই কা।
আপন ইচ্ছাতেই তুমি বলিয়াছ তাই,
তবে কেন গোপন করেছ বদন,
করেছ নাকি অভিমান? ॥ঐ
আকাশে কি পাতালে, পাহাড় কি জঙ্গলে
খুঁজিলে যদি দীদার নাহি মিলে
তবে কেনে লোকে মিছেই বলে থাকে,
তুমি রয়েছ বর্তমান। ॥ঐ
কেউ নয় আকার, কেউ বা সাকার,
কেউ নয় নিরাকার- নাই তোমার আকার
সংবাদ নিতে তোমার- কাছে গেলাম যাহার,
সেও না পারে তোমার- দিতে প্রমাণ। ॥ঐ
রজ্জব কয়, হুতাশ গিয়াছে, বিশ্বাস, মূলেই বিনাশ করে তব আশ
তোমাকে পাওয়ার আশে, যে জন কাঁদে বসে,
ভবে কান্দিয়া গেল প্রাণ। ॥ঐ
৪২ নং গান: উপদেশমূলক জবাব
সৃষ্টির তত্ত্ব গান
ওরে, সৃষ্টির স্রষ্টা যে জন, গোপনে গোপন,
সাধারণ জ্ঞানী কি তার পায় সন্ধান?
সে যে, সদাই সচেতন, পরশ রতন,
জীবের জীবন পাক সোবাহান। ॥ঐ
ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছায় গড়ে এ সংসার,
আপনি সেজে নিরাকার- জীবকে সাজায় আকার,
তাইতো জীবনের ডাকাডাকি সার,
আসল কি প্রকার কে করে অন্বেষণ। ॥ঐ
‘আল্লাহ কুল্লি শাইয়িন মুহিত’ কোরআনে প্রমাণ,
তোমাতেই মাখা আছে জেনে নেও সন্ধান,
কেমন করে কোথায় সেই স্থান,
ইশকের সহিত কর বর্তমান। ॥ঐ
হাজারও শুধালে কেহ হয় না তারে জানা
আপনি আপন হতে যদি না হয় চেনা জানা,
আপনি আপন চিনিছে যেইজন,
তার কাছে সাঁই সদাই সর্বক্ষণ। ॥ঐ
রজ্জব কয়, মিছে ভাবনায় হইয়ো না হুতাশ,
রহমাতুল্লিল আলামিন সে পুরাবে তোর আশ
ঠিক থাকলে ভক্তি-বিশ্বাস,
প্রেমশৃঙ্খলে বাঁধা যাবে রহমান। ॥ঐ
৪৩ নং গান: প্রশ্নবোধক ও ভক্তিমূলক
সৃষ্টি তত্ত্ব গান
যদি ইচ্ছাতে তোমার, গড়িলে সংসার
তবে কেন আমি অপরাধী?
তুমি যথায় মূল, আমি হই বাতুল,
তবে পাপ-পুণ্য যথায়, তুমি নিরবধি? ॥ঐ
শুনি স্বর্গ-মর্ত-পাতাল, করুণা তোমার
তোমার ইচ্ছাতেই সকল, হইয়াছে তৈয়ার
তুমি যদি হও সবার, মূল আধার,
আকাশ-ভুবন, পাহাড়-নদী। ॥ঐ
বেহেস্ত কি দোযখ, স্বর্গ কি নরক
আছে কেবল শুনি, করি নাই পরখ,
এই সকলি তো হয় তোমারই হক,
সর্বময় ব্যাপিত আছ যদি। ॥ঐ
ফুলে কি ফলে, তরু কি মূলে,
তুমিতো আল্লাহ, এই বিশ্বভূমণ্ডলে,
তবে কেন মিছে, আমি দোষী বলে,
ভয় দেখাইছ নিরবধি। ॥ঐ
শুনি আবার মধ্যে কয়জন, সুজন বা কুজন,
এরা তো হয় তোমারই সৃজন,
রজ্জবে কয়, তাই বিচার চাই এখন,
আমি কিসে হই জেলের কয়েদি? ॥ঐ
৪৪ নং গান: উপদেশমূলক জবাব
সৃষ্টি তত্ত্ব গান
বাদী মনরে, নির্দোষী মোর পরওয়ারদেগার
আমার দোষে আমি দোষী,
তাইত আমার গলে ফাঁসি,
বিচার হবে কর্ম অনুসারে। ॥ঐ
না আছিল আকাশ-জমি, আগুন আর হাওয়া-পানি
সর্বময় ছিল শূন্যকার,
সেদিন শূন্যকার মোর কাদের গণি,
অচেতনে ছিলেন তিনি,
জানতেন না আপন সমাচার। ॥ঐ
যে দিন একা ছিল একেশ্বর, কেহ না ছিল দোসর,
নবী ছিল নূরে মিশে তার,
ছিল ইশকরূপে নূরের সাথে, ইচ্ছা হল বিভাগ হতে,
তাই সময় অন্তে মেরেছে ঝংকার। ॥ঐ
সেই ঝংকারে চেতন আল্লাহ, ইশকে হলেন মাতুয়ালা,
প্রেম বিলাতে বাসনা হয় তার,
একা কভু প্রেম চলে না, ভাবেন একা সাঁই রাব্বানা,
কাজেই একজন মানুষের দরকার। ॥ঐ
সৃষ্টির স্রষ্টা হয় যে জন, সে কারো করে নাই সৃজন
সেও নয় কারো সৃজনে তৈয়ার,
তাই রজ্জবে কয়, মন রে বাদী, সুখ-দুঃখের ভাগী হও যদি,
ভাল-মন্দ এখন তুমি দায়ী তার। ॥ঐ
৪৫ নং গান: উপদেশমূলক জবাব
সৃষ্টি তত্ত্ব গান
তুমি সুন্দর, তাইত সুন্দর, সাজালে এ বিশ্ব-বাগান
তুমি নয় অনন্ত স্বরূপ, ভাবিলে হয় অনুসন্ধান। ॥ঐ
আকাশে-ভুবন-পাহাড়-নদী, তরুলতা-ফুল-ফলাদি
জলে-স্থলে নিরবধি,
তুমি হও সর্বশক্তিমান। ॥ঐ
প্রতি জীবের ঘরে ঘরে,
আছ নানান রূপটি ধরে,
জানতে গেলে কেউ তোমারে, অতি দূরে দেখাও সে স্থান। ॥ঐ
স্বরূপে-রূপে করে মিলন, নিরবে রয়েছ গোপন,
আপনি আপন যার হয় চেতন,
সে জনা হয় মানুষ প্রধান। ॥ঐ
রজ্জব থেকে অচেতনে, চেতন-মানুষ চিনবে কেমনে
মিছে ঘুরে ত্রিভুবনে,
হল না তার অনুসন্ধান। ॥ঐ
৪৬ নং গান: ভক্তিমূলক, জীব তত্ত্ব গান
আমি তোমায় ডাকি বলে কি?
এত অভিমান।
যদি ডাক দিয়ে ডাকে না পাই সাড়া,
নিজেই তখন হই অপমান। ॥ঐ
আমি তোমায় ভালোবাসি,
সমাজে হয়েছি দোষী,
চোখের জলে দিবা-নিশি,
ভাবি বসি তুমি মহান। ॥ঐ
ভেবেছি আপন অন্তরে,
যে জনে ডাকে তোমারে,
তারে তুমি রাখ দূরে,
কঠিন নিঠুর ও পরান। ॥ঐ
করব না তাই ডাকাডাকি,
চাইব না আর মেলে আঁখি,
সকলই ভেবেছি ফাঁকি,
বাকি মাত্র যাওয়া এ প্রাণ। ॥ঐ
রজ্জবের ডাক গেছে মিটে,
সে ডাকের ফাঁক নাই আর মোটে,
তবে যদি কোন দিন সুদিন ঘটে,
সেদিন দেখব বর্তমান। ॥ঐ
৪৭ নং গান: জীবতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, বিদ্রোহী গান
চাই না তোমার বেহেস্তের সুখ,
শান্তি-আরাম।
চাই না তোমার নামাজ-রোজা,
হজ-যাকাত-কোরআন। ॥ঐ
চাই না বেহেস্তের জমিদারী, দালান-কোঠা পাকা বাড়ি,
যথা থাকি বলিহারি, সুখ আর মুখ সমান। ॥ঐ
দেখতে চাই না পরের নারী, পরের ধন না-করব চুরি,
বুঝি না ইমান কি বেঈমান। ॥ঐ
বলতে চাই না মিছে কথা,
দিতে চাই না প্রাণে ব্যথা,
শুনিতে চাইনে বেশি কথা,
জানি না কিসে হয় ইনসান। ॥ঐ
শুনে দোযখ-বেহেস্তের কথা, রজ্জবের নাই কোন ব্যথা
যথা ইচ্ছা রাখ তথা,
সেই দোযখও হয় তোমারই দান। ॥ঐ
এখানে প্রদত্ত গানের কথাগুলোর বানান, যতিচিহ্ন, শব্দ ভেঙে লেখা, এবং বিন্যাস ঠিক করে সুন্দর ও পাঠযোগ্য করে দেওয়া হলো।
৪৮ নং উপদেশমূলক পরম তত্ত্ব গান
পরমের মর্ম না জানলে, বিফল সমুদয়।
জানলে, মর্ম পুণ্য ধর্ম, হইবে নিশ্চয় ॥ ঐ
একে একেশ্বর যেদিন, শূন্যকার অচেতনময়,
আপসে আপন করিয়ে ধ্বনি, নিজ গুণে চেতন হয়।
জড়ে পাইল চেতন, হইল সৃষ্টির আকিঞ্চন;
আপনি আপন হয়ে গোপন, ছয় ভাগে বিভক্ত হয় ॥ ঐ
তাইতো জগৎ সৃষ্টির কারণ, ছয় দিনের হল দরকার,
সে তো নয় মোর মুখের কথা, কোরানে হল প্রচার।
হল তার নাম ভাগ নিরাকার,
জান সেই বস্তু ভাগে আকার;
এবার নিরাকার ভাগ রয় উপরে, পাঁচ ভাগে পাঞ্জাতন হয় ॥ ঐ
বসল দরক্ত একীনের গাছে, ময়ূর বেশে পাঞ্জাতন;
তাইতো হল পাঞ্জেগানা, পঞ্চ রুহের মূল সাধনা।
পঞ্চ অজুদের বিচার হল, প্রেম পঞ্চ প্রকার;
পঞ্চ একিন ঠিক আছে যায়, সে পেয়েছে দয়াময় ॥ ঐ
দয়াল কাদির চাঁন্দে বলে, রজ্জব রে, তোর বুঝের ভুল,
শুধু নিরাকার ভজনে কিরে, অকূলে মিলিবে কূল?
আপনি আপন তোর হল না চেনা,
সাধন ভজন উপাসনা, বৃথা দিন যায় ॥ ঐ
৪৯ নং উপদেশমূলক দেহ তত্ত্ব গান
মন পাগলা রে, বারে বার বুঝাই কত বার,
বুঝাইলে না বুঝে বেবুঝ
চঞ্চলতা মন যে আমার, বুঝাই কত বার ॥ ঐ
মন হল না মনের মতো, বুঝাই কত অবিরত,
হয় না তবু অনুগত;
কু-পথগামী মন যে আমার, বুঝাই কত বার ॥ ঐ
মন হয়েছে এমন বালাই, তারে নিয়া কোথায় পালাই,
আমি সাধন পথে যাইতে চাই,
মন বেটা তো যায় না আমার, বুঝাই কত বার ॥ ঐ
সাধন ভজন উপাসনা, গুরুতে মন বসে না,
কায় তরঙ্গে হয় দেওয়ানা,
প্রেম তরঙ্গে বুঝানো ভার, বুঝাই কত বার ॥ ঐ
রজ্জব বলে ওরে লোকমান, মন বেটা তো বড়ই নাদান,
ও তার কর্ণ মূলে দিয়ে গুরুর নাম,
সোজা পথে চালাও এবার, বুঝাই কত বার ॥ ঐ
৫০ নং জীবতত্ত্ব ভক্তিমূলক প্রার্থনা গান
তুমি যে আমার সখা, বুঝি কেমনে ॥ ঐ
কত যে খুঁজিয়ে বেড়াই, বিরহ বদনে ॥ ঐ
অ-গতিরও গতি তুমি, কোরানে শুনেছি আমি,
তবে কেন অন্তর্যামী, রয়েছ গোপনে ॥ ঐ
ভালোবাসার স্মৃতি নিয়া, কাঁদিছে আমার হিয়া,
তোমাকে দেখব প্রিয়া, ভেবে ছিনু মনে ॥ ঐ
রজ্জব কাঁদে রাত্র-দিনে, খুশি তব দরশনে,
অন্তিমে রাইখ চরণে, পাই যেন নিদানে ॥ ঐ
৫১ নং ভক্তিমূলক প্রশ্নবোধক গান জীবতত্ত্ব
তুমি কোন গুণে হও বড়?
আমি ইচ্ছা করে না জাগালে,
তুমি কি? জাগিতে পার? ॥ ঐ
দয়াল হে, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নাম ধরিয়া, লা-শরিক নাম প্রকাশিয়া,
আপনি নিজে বিলীন হইয়া, জীবকে তৈয়ার কর।
জীবের রূপে রূপ ধরে তাই, তবে বিরাজ কর,
তুমি আলাদা এক রূপ ধরিয়া, এই জীবকে কি দেখতে পার? ॥ ঐ
দয়াল হে, তুমি আছ শুনি প্রতি ঘটে, দূরে নয় অতি নিকটে,
কিন্তু কোথায় কার ঘটে, সেই প্রকাশ্য রূপ ধর?
জীবের বিশ্বাস ভক্তির বলে, যদিও কিঞ্চিৎ পার,
তবু সে আলাদা রূপ নয়, মানুষ রূপেই বিরাজ কর ॥ ঐ
দয়াল হে, আমার না থাকিলে ভক্তি,
তুমি কি? তাই দিবে মুক্তি?
তবে তোমার কিসের শক্তি, কোন যুক্তিতে বড়?
রহমতুল্লিল নামটি তবে মিছেই কেন ধর?
ভেবে রজ্জব কয় যার আছে ভক্তি,
তুমি তার কাছেই গোলামী কর ॥
৫২ নং বিরহ বিচ্ছেদ গান
বন্ধুর বাঁকা নয়নে, কি মোহিনী আছে সখি কে জানে,
আমার মন প্রাণ হরিয়ে নিল, না জানি কি সন্ধানে,
কি মোহিনী আছে সখি কে জানে ॥ ঐ
সখি গো, লোকে বলে বন্ধু কালো,
আমার চোখে লাগে ভালো,
পাগল করল ঐ রূপের বাণে,
আমার আঁখি নিয়া দেখ না চাহিয়া, কি রূপ দেখায় তোর নয়নে,
কি মোহিনী আছে সখি কে জানে ॥ ঐ
সখি গো, ঐ রূপ যখন মনে পরে, খাঁচার পাখি রয় না ঘরে,
ঘুরে বেড়ায় বন্ধুয়ার সন্ধানে,
সখি ঐ রূপে মন হরে নিল, কান্দাইল জীবনে,
কি মোহিনী আছে সখি কে জানে ॥ ঐ
সখি গো, ঐ রূপ আমার অমূল্য ধন,
হীরা কাঞ্চন পরশ রতন,
চোখের মণি ভাবিয়াছি মনে,
ভেবে রজ্জব বলে মরণ কালে,
ঐ রূপ যেন পাই সামনে,
কি মোহিনী আছে সখি কে জানে ॥ ঐ
৫৩ নং পল্লী ফসলের গান
কৃষক ভাই, সময় হল, ক্ষেত্রে চল চাষ করিতে চল,
নজিমদ্দি যাই এক সাথে ॥ ঐ
কেহ নেই লাঙ্গল-জোয়াল, কেহ সাথে দিবে জোগাল,
কেহ যাই গো-শালাতে গরু নিতে,
এবার তিন লাঙ্গলে ছয়টা বলদ,
হাল জুড়ে দেই ইচ্ছামতে ॥ ঐ
চাষ করি বিধিমতে, সার দেব সরকার হতে,
এক গুণের ফল দ্বিগুণ পাবে সেই জমিতে,
পেলে দ্বিগুণ বেশি বড়ই খুশি,
আনন্দ জাগিয়ে চিত্ত ॥ ঐ
ধান পাট আর মুগমুশুরী, যত সব তরী তরকারী,
ইচ্ছে মতো তৈয়ার করি পাব খেতে,
আছে গো-শালাতে দুয়াল দু’গাই,
দুধ পাব দু’বেলাতে ॥ ঐ
করে তাই মৎসের চাষ, ধরিয়া খাব বার মাস,
কলিমদ্দিন হোস না নিরাশ প্রাণ থাকিতে,
আমরা স্বাধীন নই পরাধীন,
বাংলা দেশের এই জমিতে ॥ ঐ
রজ্জব কয় দেশের মাটি, মণি মুক্তা হতে খাঁটি,
চল এবার সবাই ছুটি চাষ করিতে,
খাইয়া মাটির ফসল বুকেতে বল,
জন্ম মরণ এই মাটিতে ॥ ঐ
৫৪ নং মহরমে শহীদী তত্ত্ব কাহিনী বিরহ গান
পানি বিনে ইমামজাদা, হালছে হয়ে বেহাল,
ফোরাতের পানিতে নেমে, কাঁদিতে মায়ের দুলাল।
দু’হাত তুলিয়ে পানি, কাঁদিছে ইমাম,
পড়ল মনে পানি বিনা মরছে তামাম,
ছেড়ে দিলে হাতের পানি মনেতে ভেবে বিশাল ॥ ঐ
শত্রুগণ ভাবিতে ছিল ইমাম মুখে দিলে পানি,
তাহলে আর কদাচিতে বাঁচবে না এক প্রাণী,
ফিরিয়ে দাঁড়ালো তারা দেখিতে ইমামের হাল ॥ ঐ
হাতের পানি ছেড়ে ইমাম উঠলেন কিনারায়,
দু’চোখে অন্ধকার দেখেন পানির পিপাসায়,
খুলে ফেলেন জামা জোড়া, দূরে ফেলে দিল ঢাল ॥ ঐ
পানির পিয়াসে ইমাম হইলে অস্থির,
চতুর দিক করিল ঘেরা কমজাত কাফির,
দূর হতে তীর ছুঁড়ে মারে ইমামের ঘটল জঞ্জাল ॥ ঐ
এই ভাবে দাঁড়ায়ে ইমাম ছিল কতক্ষণ,
ইমামের অঙ্গতে হল সত্তর যখন,
হঠাৎ এক তীর আসিয়া বারে তীর বসলো বিশাল ॥ ঐ
ইন্নালিল্লাহি পড়ে ইমাম, পড়লেন জমিনে,
ছটফট করিছে প্রাণ যাবে কতক্ষণে,
ভয়েতে কেউ কাছে যায় না জানি কি জঞ্জাল ॥ ঐ
এই ভাবে অনেকক্ষণ গেল, কাঁপিতে ছিল হাতি,
অবশেষে আসিল কাছে শিমর লান্নতি।
ভয়েতে না ভিড়ে শিমর, কি জানি ঘটে কপালে ॥ ঐ
ছাতি পরে বসল যবে শিমর লান্নতি,
ইমাম বলছেন ছেড়ে দে ভাই, ফেটে গেল ছাতি,
জন্মের মতো চেয়ে দেখি একবার এই দুনিয়ার হাল ॥ ঐ
কোথায় রইলে শহরভানু, দেখে যাও আসিয়া,
চিরতরে নিলাম বিদায়, জনমের লাগিয়া,
শুধু দুঃখ রইল মনে কোলে রেখে যাই জয়নাল ॥ ঐ
হঠাৎ পড়িল মনে নানাজীর বাণী,
যার হাতে তোর হবে মরণ, দেখিনে নিশানী,
বুকের মাঝে পশম নাই যার, সে হবে ভাই তোর কাল ॥ ঐ
ইমাম বলেছে রে শিমর ছাতি খুলো দেখি,
নানাজী মোর বলে গেছে সেই তুমি নাকি?
শিমর খুলিতে ছাতি, পাইল নানার মিছাল ॥ ঐ
ইমাম বলেছে শিমর, আমি বেহেস্তে নিব তোরে,
তোর হাতের তলোয়ার ধরবে না আমারে,
মরতুজ আলীর জুলফিকারে ঘা মেরে কর ঘাওয়াল ॥ ঐ
রজ্জব বলেছে ভাই মুসলিম বন্ধুগণে,
শোক আকুল হয়ে কাঁদ, মহররমের দিনে,
রেখে গেল চির স্মৃতি রক্ত মাখা আকাশ লাল ॥
৫৫ নং ভোরের গান
উঠ উঠ জাগো জাগো ও ভাই মুসলমান,
দিল মসজিদে দিলেরে বুঝি বেল্লালের আযান।
কোকিলার কুহু ধ্বনি, পোহাল সুখে রজনী,
তুই কেন রইলি ঘুমের ঘোরে হইয়ে ইনসান,
দিল মসজিদে দিলেরে বুঝি বেল্লালের আযান ॥ ঐ
নবীজী এন্তেকাল হল, বেল্লালে সংবাদ পাইল,
ইস্কের জোসেতে বেলাল মদিনা ছেড়ে যান ॥ ঐ
তিন মাস রয় মদিনা ছেড়ে আবার আসিল ফিরে,
মদিনার লোক শুনতে পেয়ে সবার খুশি প্রাণে ॥ ঐ
মদিনার সমস্ত লোকে, ডাকিয়া বলেন বেল্লালকে,
অনেকদিন হয় শুনিনা ভাই মধুর আযান ॥ ঐ
বেলাল কয় মনের দুঃখে, ইস্কের আগুন জ্বলে বুকে,
আমার আযান যে শুনবে, সে মদিনা ছেড়ে যান ॥
ফাতেমা কয় বেল্লালেরে আযান দাও মিনারার পরে,
তোমার আযান বাসতেন ভালো আমার আব্বাজান ॥ ঐ
এই মদিনা আঁধার করে তিন মাস হয় গেছে ছেড়ে,
তোমার আযান শুনে আসতে পারে আমার আব্বাজান ॥ ঐ
মা ফাতেমার কথা শুনে আযান দিতে যায় তখনে,
হায়রে মদিনার লোকে পেতে রইল কান ॥ ঐ
বিল্লাল তখন কি করিল, মিনারায় আযান ফুকিল,
আশহাদু আন্না মোহাম্মাদুর রাসুল বলতে, যায় বিল্লালের প্রাণ ॥ ঐ
তাই, রজ্জবে কয় ভাই সকলে, এমন ভক্ত কয়জন মিলে,
পীরের নাম স্মরণে প্রেম আগুনে গেল ভক্তের প্রাণ ॥ ঐ
৫৬ নং সারি গান
নাইয়ারে তোর রঙ্গিলা নাও, নব রঙ্গে পাল উড়াও,
ছলাৎ করে পানি সাবধানে যাও,
হেইয়ারে বইয়া হেইয়া হো ॥ ঐ
নাইয়ারে আকাশ কান্দে মেঘের ভারে,
বেলা গেল বইয়ারে নাইয়া, বেলা গেল বইয়া,
পাছার মাঝি বৈঠা ধর ঢেউয়ের মাথা খাইয়া,
রে নাও বাইয়া যাওরে ॥ ঐ
নদী করে টলমল ঢেউ খেলে খলবল,
হৈ হৈ কল কল গায়েতে রাখিও বল,
হিম্মত কর জোরে চল।
ছয়জন দাড়ি বৈঠা ধরি সমানে সমানে তোল,
হেইও মারি হেইও দিও টান, উজান পানে বাইয়া যাও সাবধানে যাও ॥ ঐ
নাইয়ারে মা ফাতেমার তরীখানি রাসূল তোর কাণ্ডারী,
রাসূল তোর কাণ্ডারী,
হযরত আলী নায়ের মাস্তুল, ইমাম দু’ভাই দাড়ি,
নাও বাইয়া যাওরে নাইয়ারে ॥ ঐ
নদীতে ডেকেছে বান আকাশে তুফান রে নাইয়া,
আকাশে তুফান, রজ্জব কয়,
তোর নাই কোন ভয় আল্লাহ নেগাবান রে,
নাও বাইয়া যাওরে ॥ ঐ
৫৭ নং কওমী গান
চল সমান বাংলার সন্তান,
রুখো দাঁড়াও ঐ (হৈ হৈ বীরের সন্তান) ॥ ঐ
আমাদের এই জন্মভূমি স্বাধীন বাংলার স্থান,
রক্ষা করিতে দেব বুকের রক্ত দান ॥ ঐ
চলরে ভাই সবাই মিলে জয়ধ্বনি তুমি,
বাহুবলে মজিবের সংগ্রাম নিশান উড়াও নওজোয়ান ॥ ঐ
আমার বাংলা শান্তির দেশ, আছি সবাই মিলেমিশে,
আল্লাহর রহমত সে পালাবে শয়তান ॥ ঐ
জোড়ছে চল আরো জোড়ে ওরে পালোয়ান,
ভয় করি না তোপ কামানে বাঙালীর সন্তান ॥ ঐ
যদি রে ভাই রণাঙ্গনে মরে যদি যাই জীবনে,
শহীদ দরজা মোদের কয় রজ্জব দেওয়ান! ॥ ঐ
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন