চলছি উধাও, বল্গাহারা- ঝড়ের বেগে ছুটে
    শিকল কে সে বাঁধছে পায়ে!
    কোন্‌ সে ডাকাত ধরছে চেপে টুটি!
    -আঁধার আলোর সাগরশেষে
    প্রেতের মতো আসছে ভেসে!
    আমার দেহের ছায়ার মতো, জড়িয়ে আছে মনের সনে,
    যেদিন আমি জেগেছিলাম, সেও জেগেছে আমার মনে!
    আমার মনের অন্ধকারে
    ত্রিশূলমূলে, দেউলদ্বারে
    কাটিয়েছে সে দুরন্ত কাল ব্যর্থ পূজার পুষ্প ঢেলে!
    স্বপন তাহার সফল হবে আমায় পেলে, আমায় পেলে!
    রাত্রিদিবার জোয়ার স্রোতে
    নোঙরছেঁড়া হৃদয় হ’তে
    জেগেছে সে হালের নাবিক
    চোখের ধাধায় ঝড়ের ঝাঁঝে
    মনের মাঝে মানের মাঝে
    আমার চুমোর অন্বেষণে
    প্রিয়ার মতো আমার মনে
    অঙ্কহারা কাল ঘুরেছে কাতর দুটি নয়ন তুলে,
    চোখের পাতা ভিজিয়ে তাহার আমার অশ্রুপাথার-কূলে!
    ভিজে মাঠের অন্ধকারে কেঁদেছে মোর সাথে
    হাতটি রেখে হাতে!
    দেখিনি তার মুখখানি তো,
    পাইনি তারে টের,
    জানি নি হায় আমার বুকে আশেক-অসীমের
    জেগে আছে জনমভোরের সূতিকাগার থেকে!
    কত নতুন শরাবশালায় নাবনু একে একে!
    সরাইখানার দিলপিয়ালায় মাতি
    কাটিয়ে দিলাম কত খুশির রাতি!
    জীবন-বীণার তারে তারে আগুন-ছড়ি টানি
    গুঞ্জরিয়া এল-গেল কত গানের রানি,
    নাশপাতি-গাল গালে রাখি কানে কানে করলে কানাকানি
    শরাব-নেশায় রাঙিয়ে দিল আঁখি!
    -ফুলের ফাগে বেহুঁশ হোলি নাকি!
    হঠাৎ কখন স্বপন-ফানুস কোথায় গেল উড়ে!
    -জীবন মরু- মরীচিকার পিছে ঘুরে ঘুরে
    ঘায়েল হয়ে ফিরল আমার বুকের কেরাভেন-
    আকাশ-চরা শ্যেন!
    মরুঝড়ের হাহাকারে মৃগতৃষার লাগি
    প্রাণ যে তাহার রইল তবু জাগি
    ইবলিশেরই সঙ্গে তাহার লড়াই-হল শুরু!
    দরাজ বুকে দিল্‌ যে উড়–উড়-!
    ধূসর ধু ধু দিগন্তরে হারিয়ে যাওয়া নার্গিসেই শোভা
    থরে থরে উঠল ফুটে রঙিন-মনোলোভা!
    অলীক আশার, দূর-দুরশার দুয়ার ভাঙার তরে
    যৌবন মোর উঠল নেচে রক্তমুঠি, ঝড়ের ঝুঁটির পরে!
    পিছে ফেলে টিকে থাকার ফাটকে কারাগারে
    ভেঙে শিকল ধ্বসিয়ে ফাঁড়ির দ্বার
    চলল সে যে ছুটে!
    শৃঙ্খল কে বাধল তাহার পায়ে-
    চুলের ঝুটি ধরল কে তার মুঠে!
    বর্শা আমার উঠল ক্ষেপে খুনে,
    হুমকি আমার উঠল বুকে রুখে!
    দুশমন কে পথের সুমুখে
    -কোথায় কে বা!
    এ কোন মায়া
    মোহ এমন কার!
    বুকে আমার বাঘের মতো গর্জাল হুঙ্কার!
    মনের মাঝের পিছুডাকা উঠল বুঝি হেঁকে-
    সে কোন সুদূরে তারার আলোরে থেকে
    মাথার পরের খা খা মেঘের পাথারপুরী ছেড়ে
    নেমে এল রাত্রিদিবার যাত্রাপথে কে রে!
    কী তৃষা তার!
    কী নিবেদন!
    মাগছে কিসের ভিখ্‌!
    উদ্যত পথিক
    হঠাৎ কেন যাচ্ছে থেমে-
    আজকে হঠাৎ থামতে কেন হয়!
    -এই বিজয়ী কার কাছে আজ মাগছে পরাজয়!
    পথ- আলেয়ার খেয়ায় ধোঁয়ায় ধ্রুবতারার মতন কাহার আঁখি
    আজকে নিল ডাকি
    হালভাঙা এই ভুতের জাহাজটারে!
    মড়ার খুলি-পাহাড়প্রমাণ হাড়ে
    বুকে তাহার জ’মে গেছে কত শ্মশান-বোঝা!
    আক্রোশে হা ছুটছিল সে একরোখা, এক সোজা
    চুম্বকেরই ধ্বংসগিরির পানে,
    নোঙরহারা মাস্তুলেরই টানে!
    প্রেতের দলে ঘুরেছিল প্রেমের আসন পাতি,
    জানে কি সে বুকের মাঝে আছে তাহার সাথী!
    জানে কি সে ভোরের আকাশ, লক্ষ তারার আলো
    তাহার মনের দূয়ারপথেই নিরিখ হারালো!
    জানি নি সে তোহার ঠোঁটের একটি চুমোর তরে
    কোন্‌ দিওয়ানার সারেং কাঁদে
    নয়নে নীর ঝরে!
    কপোত-ব্যথা ফাটে রে কার অপার গগন ভেদি!
    তাহার বুকের সীমার মাঝেই কাঁদছে কয়েদি
    কোন্‌ সে অসীম আসি!
    লক্ষ সাকীর প্রিয় তাহার বুকের পাশাপাশি
    প্রেমের খবর পুছে
    কবের থেকে কাঁদতে আছে-
    ‘পেয়ালা দে রে মুঝে!’

    টীকা