স্বর্গের দ্বারে কৃষক
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাএকবার একটি ধর্মপ্রাণ কৃষক জীবনলীলা সাঙ্গ করে স্বর্গের দুয়ারে এসে উপস্থিত হল। ঠিক সেই সময় একজন মস্ত ধনী তিনিও জীবনলীলা সাঙ্গ করে স্বর্গে প্রবেশ করতে এলেন। সন্ত পীটার চাবি এনে দরজা খুলে সেই বিরাট ধনীকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলেন কিন্তু মনে হল কৃষকটিকে তিনি দেখতেই পেলেন না। দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কৃষক বাইরে থেকে শুনতে পেল বড়লোকটিকে কি ভাবে অভিনন্দিত করা হচ্ছে! গান কানে এল, বাজনা কানে এল; শোনা গেল আনন্দে সবাই কোলাহল করছে। চারিধারে যেন আনন্দের আর সঙ্গীতের স্রোত বইতে লাগল।
খানিক পরে সব থেমে গেল। তখন সন্ত পীটার এসে স্বর্গের ফটক খুলে চাষীকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলেন। কৃষক ভেবেছিল সে-ও যখন ভিতরে ঢুকবে, চারিদিক থেকে গান হবে বাজনা বেজে উঠবে—কিন্তু কিছুই হল না, সব চুপচাপ। যথেষ্ট আদর, স্নেহ দেখিয়ে তাকে গ্রহণ করা হল বটে, দেবদূতেরাও তাকে অভিনন্দন জানালো। কিন্তু কেউ গান গাইল না, কেউ বাজনাও বাজাল না ।
তখন কৃষক সন্ত পীটারকে জিজ্ঞেস করল—আচ্ছা বড়লোকটি যখন স্বর্গে ঢুকলেন তখন কত গান হল, আর আমি যখন ঢুকলুম, কই কিছুই তো হল না! সব দেখলুম চুপচাপ। তবে কি আমাদের পৃথিবীতে যেমন বড়লোকের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হয়, তেমনি এখানেও?
পীটার বললেন—মোটেই তা নয়। আমাদের কাছে অন্য সবাই যত প্রিয় তুমিও তাই। এখানে বড়লোকেরাও যেসব স্বর্গসুখ উপভোগ করবে, তুমিও করবে। কিন্তু আসলে কি জানো, তোমার মতো গরীব লোক প্রতিদিনই স্বর্গে আসছে—কিন্তু এঁর মতো বড়লোক স্বর্গে ঢোকবার অধিকার পায় হয়তো এক-শ বছরে একবার।