শ্লাউরাফ্ফেন দেশের গল্প
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাশ্লাউরাফ্ফেনের যুগে গিয়েছিলাম আমি শ্লাউরাফ্ফেনের দেশে। সেখানে গিয়ে দেখলুম রোম নগরী ছোট্ট একটা রেশমী সুতোয় ঝুলছে; আর একটি পা-কাটা লোক দেখলুম যে দ্রুতগামী ঘোড়ার চেয়েও জোরে দৌড়োয়; একটি ধারালো তলোয়ার দেখলুম, তা দিয়ে এক কোপে একটা সাঁকো কেটে ফেলা যায়। একটি কমবয়সী গাধা দেখলুম, তার রূপোর নাক, সে দু’ ঝাঁক খরগোসকে তাড়া করে যাচ্ছে; একটা প্রকাণ্ড লেবু গাছ দেখলুম যার ডালে ডালে গরম কেক হচ্ছে। সেখানে দেখলুম একটি রোগা বুড়ো ছাগল পিঠে করে এক-শ গরুর গাড়ির মতো চর্বি আর ষাট বস্তা নুন নিয়ে যাচ্ছে। এই কি যথেষ্ট মিছে কথা বলা হল না?
সেখানে দেখলুম একটা লাঙল জমি চষছে কিন্তু লাঙল টানা ঘোড়াও নেই গরুও নেই; দেখলুম এক বছর বয়সের একটি শিশু একটি যাঁতার চাকি নিয়ে রাটিস্বন শহর থেকে ত্রিভ্স্ শহর পর্যন্ত, তারপর ত্রিভ্স্ থেকে স্ত্রাস্বুৰ্গ পর্যন্ত ছুঁড়ে ফেলে দিল। একটি বাজপাখি রাইন নদী সাঁতার দিয়ে পার হল। সেই নদীতে কয়েকটি মাছ পরস্পরের মধ্যে এমনই গোলমাল শুরু করে দিল যে স্বর্গ পর্যন্ত তার আওয়াজ পৌঁছতে লাগল; আর একটা উঁচু পাহাড়ের চূড়ো থেকে এক গভীর উপত্যকা বেয়ে জলের মতো মধুর স্রোত নেমে আসছিল—এ সবই অতি অদ্ভুত। দুটো কাক দেখলুম্, তারা মাঠের ঘাস কাটছিল। দুটো ডাঁশ দেখলুম যারা একটা সাঁকো তৈরী করছিল; আর দুটো ঘুঘু একটা নেকড়ে বাঘকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল; দুটো ব্যাং মিলে ধান ঝাড়ছিল। সেখানে দুটো ইঁদুর দেখলুম, তারা ধর্মযাজককে পূত পবিত্র করছিল; দুটো বেড়াল দেখলুম তারা একটা ভাল্লুকের জিভ আঁচড়ে ছিঁড়ে দিল। তারপর একটি গুগলি ছুটতে ছুটতে এসে দুটো ভীষণ সিংহকে মেরে ফেলল। একজন নাপিত দাঁড়িয়ে ছিল, সে এক মহিলার দাড়ি কামিয়ে দিল; দুটি দুগ্ধপোষ্য শিশু তাদের মাকে এক ধমক দিল চুপ করে থাকবার জন্যে। সেখানে দুটি গ্ৰেহাউণ্ড কুকুর দেখলুম যারা জল থেকে একটা কারখানা বাড়ি টেনে তুললো; তার পাশে মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ঘোড়া, সে বললে—ঠিক করেছে! আর দেখলুম উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে চারটি ঘোড়া, তারা প্রাণপণে ধানের আঁটি আছড়াচ্ছে; দুটি ছাগল উনুনে আঁচ দিচ্ছে আর একটি লাল গরু উনুনের মধ্যে একটা পাঁউরুটি ছুঁড়ে মারল।
তারপর একটা মোরগ ডেকে উঠল—কক্কর কোঁ কোঁ! গল্প শেষ হল—কক্কর কোঁ কোঁ !