নেকড়ে-বৌ আর শেয়ালের গল্প
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারানেকড়ে-বৌয়ের একটি বাচ্চা হল। শেয়ালকে সে তার বাচ্চার ধর্মবাপ হবার জন্যে নিমন্ত্রণ জানালে।
—যে যাই বলুক না শেয়াল তো আমাদের একরকম আত্মীয়ই। তা ছাড়া বুদ্ধিমান, বিদ্যেও আছে। শেয়াল ধর্মবাপ হলে ছেলেকে আমার কিছু শিক্ষাও দিতে পারবে— বড় হয়ে বাছার তা কাজে লাগবে।
শেয়াল শুনে বলল— ভাল মানুষের বৌ, আমায় আপনি যে সম্মান দিচ্ছেন তার জন্যে আমি বড়ই কৃতজ্ঞ। যা যা দরকার আমি তার সবই করব। আমাকে ধর্মবাপ নিযুক্ত করায় দেখবেন আপনি লাভবানই হবেন।
নেকড়ে-বৌ যে ভোজ দিল শেয়াল তাতে এসে পেট পুরে খেল। খুব গাল-গল্প করল। তারপর বলল— শ্ৰীমতী নেকড়ে! দেখুন ছেলে মানুষ করা এক মস্ত দায়িত্ব। ছেলেকে পুষ্টিকর খাদ্য গোড়া থেকেই খাওয়াতে হবে যাতে সে শক্ত সমর্থ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। আমার একটা ভেড়ার খোঁয়াড় জানা আছে যেখান থেকে একটু চেষ্টা করলে নধর নধর মেষ শিশু ধরে আনা যাবে।
শেয়ালের কথা শুনে নেকড়ে-বৌ একেবারে মুগ্ধ। সে শেয়ালের সঙ্গে বেরল গোলাবাড়ির দিকে। দূর থেকে শেয়াল নেকড়ে-বৌকে একটা ঢালুর মধ্যে গোলাবাড়িটা দেখিয়ে দিয়ে বলল— আপনি গুঁড়ি মেরে বেড়ার ফাঁক দিয়ে গোলাবাড়ির মধ্যে ঢুকুন। আমি দেখি এদিকে কোনো মুরগি-টুরগি ধরতে পারি কিনা।
বলে নেকড়ে-বৌকে গোলাবাড়ির দিকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বনের ধারে হাত-পা ছড়িয়ে দিব্যি শুয়ে রইল। নেকড়ে-বৌ বেড়ার নিচে দিয়ে সেঁধিয়ে আস্তাবলে গিয়ে ঢুকল। সেখানে ছিল পাহারাদার কুকুর। কুকুর এমন চিৎকার জুড়ে দিল যে তাই শুনে চাষীরা ছুটে এসে নেকড়েকে দেখতে পেয়েই তাকে ধরে ফেলল। ধরে তাদের কাপড় কাচবার জন্যে যে কড়া আরক জমা করে রেখেছিল, তাই ঢেলে দিল তার পিঠে। চিড়বিড় করে উঠল নেকড়ের সারা পিঠ, মুখ, ঘাড়, ল্যাজ পর্যন্ত! কোনো রকমে পালিয়ে বাঁচল নেকড়ে-বৌ। ধুঁকতে ধুঁকতে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে শেয়াল বনের ধারে শুয়ে আছে।
শেয়াল সঙ্গে সঙ্গে শুরু করলে— দেখুন শ্রীমতী নেকড়ে, আপনার ছেলের উপকার করতে গিয়ে আমি কি বিপদেই না পড়েছিলুম। চাষীরা আমাকে ধরে লাঠি দিয়ে এমন বেদম পিটন দিয়েছে— বোধ করি গায়ের একখানা হাড়ও আর আস্ত নেই। এখন যদি আমায় কাঁধে করে না নিয়ে যান নেকড়ে-গিন্নী, তাহলে এখানেই আমি মরে পড়ে থাকব।
নেকড়ে-বৌয়ের নিজের অবস্থাই তখন প্রায় মর-মর। কিন্তু তার নিজের ছেলের ধর্মবাপ—তাকে এমত অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায় কি করে? কাজেই শেয়ালকে পিঠে তুলে নিয়ে নেকড়ে-বৌ ধীর গতিতে বাড়ি পর্যন্ত গেল।
বাড়ির কাছে পৌঁছতেই শেয়াল তড়াক করে তার পিঠ থেকে নেমে চেঁচিয়ে বলল— বিদায় নেকড়ে-গিন্নী, বিদায়। আজকের ধোলাইয়ে আশা করি আপনার কিছু শিক্ষা হয়েছে। বলে হাসতে হাসতে সে এক দৌড়ে পগার পার হয়ে গেল।