শেয়াল আর হাঁসের দল
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাএক মাঠে একদিন এক শেয়াল এসে দেখল সেখানে এক দঙ্গল চমৎকার মোটা মোটা হাঁস চরছে। শেয়াল একটু হেসে বলল— বাঃ ঠিক সময় এসে পড়েছি। এদের আর পালাবার উপায় নেই! একটার পর একটার ঘাড় মটকে এবার আরামসে খেতে পারব।
হাঁসেরা তাকে দেখতে পেয়ে ভয়ে প্যাঁক প্যাঁক করে ছুটে পালাতে গেল। যখন দেখল আর উপায় নেই তখন তারা হাতজোড় করে মাথা নিচু করে শেয়ালের কাছে নিজেদের প্রাণ ভিক্ষা করতে লাগল।
শেয়াল তাতে কর্ণপাতও করল না, বলল— দয়াটয়া দেখাতে পারব না। তোমাদের মরতে হবে।
শেষে একজন হাঁস সাহস করে বললে— দেখুন মাননীয় শেয়াল মহাশয়! আমরা সবাই তরুণ হাঁস। কেউ বুড়ো নই। এমন ভাবে হঠাৎ যদি আমাদের জীবন শেষ হয়ে যায় তাহলে তা বড় দুঃখের কথা হবে। যা হোক, যা হবার তা তো হবেই, এখন আপনার কাছে শুধু একটি আরজি আছে আমাদের। সেটি যদি মঞ্জুর করেন তাহলে আমরা সকলে সারি বেঁধে দাঁড়াবো, আপনি যে কটি মোটাসোটা সব চেয়ে ভালো হাঁস পছন্দ করেন বেছে নিতে পারেন।
শেয়াল বললে— আরজিটা কি?
—মারা যাবার আগে এক ঘণ্টা আমাদের ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবার অনুমতি দিন।
শেয়াল বললে— তাতে আমার আপত্তি নেই। এতে আমার কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে না। বেশ প্রার্থনা শুরু কর— আমি অপেক্ষা করছি।
বলতেই হাঁসেরা এক সারিতে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর হাঁসেরা যেমন করে প্রার্থনা করে তেমনি করে প্রার্থনা শুরু করে দিলে। হাঁসেদের প্রার্থনা মানে কান ফাটানো চিৎকার। আসলে তারা তাদের প্রাণ বাঁচাবার জন্যে চিৎকার করে আবেদন জানাচ্ছিল। ভগবান শুনলেন কিনা জানি না কিন্তু গ্রামের চাষীরা শুনতে পেল। এক ঘণ্টা শেষ হবার অনেক আগেই ব্যাপার বুঝতে পেরে চাষীর দল লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে এল। শেয়াল তাই দেখে নিজের প্রাণ নিয়ে ছুটে পালালো।
হাঁসেদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে মোড়ল বললে— কাল ঐ ধূর্ত শেয়ালটাকে শিকার করে ফেলতে হবে।