ভাই-বোন
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাভাই-বোন
ছোট ভাই ছোট বোনের হাত ধরে বললে—আমাদের মা মারা যাওয়ার পর থেকে আর আমাদের সুখ নেই। সৎ-মা রোজ আমাদের মারেন, তাঁর কাছে গেলে পা দিয়ে লাথি মেরে সরিয়ে দেন। খেতে পাই আমরা বাসি শুকনো রুটি। টেবিলের তলার যে কুকুরটা, সে-ও আমাদের চেয়ে ভাল খায়। ভগবান ছাড়া আর আমাদের দয়ামায়া করবার কেউ নেই। মা যদি জানতেন! আয় আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাই।
সারাদিন ধরে তারা মাঠ, ক্ষেত, পাথুরে রাস্তা পার হয়ে চলল। যখন বৃষ্টি এল ছোট বোনটি বললে—আমাদের চোখ আর আকাশের চোখ একসঙ্গে কাঁদছে। সন্ধ্যার সময় তারা এসে পৌঁছল প্রকাণ্ড এক বনে। ক্ষিদেয়, মনের দুঃখে তারা এত ভেঙে পড়েছিল যে এক গাছের কোটরে শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন যখন তাদের ঘুম ভাঙল তখন সূর্য অনেক উঁচুতে। রোদের তেজ কড়া। ভাইটি বললে—আমার বড় তেষ্টা পেয়েছে! যদি একটি ছোট ঝরনার দেখা পেতুম তো গিয়ে জল খেতুম! মনে হচ্ছে যেন ঝরনার শব্দ পাচ্ছি। বলে সে উঠে দাঁড়িয়ে বোনের হাত ধরে চলল ঝরনা খুঁজতে।
দুষ্ট সৎ-মা ছিলেন এক ডাইনি। তিনি দেখেছিলেন ছেলেমেয়েরা কেমন করে পালিয়ে গেল। ডাইনিরা যেমন হামাগুড়ি দিয়ে যায় তিনিও তেমনি হামাগুড়ি দিয়ে চুপিচুপি ছেলেমেয়েদের পিছু-পিছু চললেন। বনে গিয়ে তিনি বনের যত ঝরনা সব জাদু করে দিলেন।
ছেলেমেয়েরা দেখল, একটি ছোট্ট ঝরনা পাথরের নুড়ির উপর দিয়ে লাফাতে লাফাতে, নাচতে নাচতে চলেছে। ভাইটি জল খেতে যাবে, বোন শুনল জলের স্রোত বলছে—আমার জল যে খাবে, সে বাঘ হবে!—আমার জল যে খাবে সে বাঘ হবে! বোনটি চেঁচিয়ে উঠল—দাদা, এর জল খেয়ে না! খেলে তুমি বুনো বাঘ হয়ে আমায় টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবে! শুনে ভাইটি আর জল খেল না। খুব তেষ্টা পেয়েছিল তার, তবু বললে—এর পরের ঝরনার গিয়ে খাব।
পরের ঝরনার কাছে এসে তারা যখন পৌঁছল বোনটি শুনল জলের স্রোত বলছে—যে আমার জল খাবে সে নেকড়ে হবে। —যে আমার জল খাবে, সে নেকড়ে হবে! বোনটি চেঁচিয়ে উঠল—দাদা এর জল খেয়ো না। খেলে তুমি নেকড়ে হয়ে আমায় ছিঁড়ে খাবে! শুনে ভাইটি জল খেল না। বললে—বেশ, এর পরের ঝরনা অবধি আমি অপেক্ষা করব। কিন্তু আর যা-ই বল সেখানে গিয়ে আমি জল খাবই—তেষ্টা আর আমার সইছে না!
আরেকটি ঝরনার ধারে এসে তারা যখন পৌঁছল বোনটি শুনল জলের স্রোত বলছে—যে আমার জল খাবে সে ছিটে-হরিণ হবে! —যে আমার জল খাবে সে ছিটে-হরিণ হবে! বোন বললে—দাদা, এর জল খেয়ো না। খেলে তুমি ছিটে-হরিণ হয়ে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে! কিন্তু হাঁটু গেড়ে বসে তার দাদা ততক্ষণে মুখ নিচু করে ঝরনার জল খেয়ে ফেলেছে। জলের প্রথম ফোঁটাটি তার মুখে লাগতেই সে হয়ে গেল একটি ছিটে-হরিণ।
দাদার দশা দেখে বোন কত কাঁদল। ছিটে হরিণটিও কাঁদল। শেষে মেয়েটি বললে—শান্ত হও ছিটে হরিণটি আমার! আমি তোমায় কোনদিন—কোনদিন ছেড়ে যাব না!
তারপর সে তার দু-পায়ের সোনালি ফিতে খুলে একসঙ্গে জুড়ে ছিটে-হরিণের গলায় জড়ালো। তারপর নলের পাতা ছিঁড়ে তাই দিয়ে নরম দড়ি বুনল। সেই দড়ি দিয়ে হরিণকে বেঁধে টেনে নিয়ে চলল। তারা গভীর থেকে গভীরতর বনের মধ্যে প্রবেশ করল।
অনেক পথ যাবার পর তারা এসে পৌঁছল ছোট্ট একটি বাড়ির কাছে। বাড়িটি ফাঁকা দেখে মেয়েটি ভাবল—এখানেই আমরা এবার থাকব। হরিণের নরম বিছানার জন্যে সে শুকনো শেওলা আর পাতা কুড়িয়ে নিয়ে এল। প্রতিদিন সকালে সে বেরিয়ে যেত নিজের জন্যে শিকড়, বেরি আর বাদাম খুঁজে আনতে। হরিণের জন্যে নিয়ে আসত নরম কচি ঘাস। হরিণটি তারই হাত থেকে ঘাস খেয়ে আনন্দে তার চারদিকে খেলা করে বেড়াত। সন্ধেবেলা সারাদিনের কাজের ক্লান্তির পর বোনটি ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে হরিণের পিঠকে বালিস করে তাইতে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। শুধু যদি ভাইয়ের চেহারা মানুষের মত হত তাহলে এর চেয়ে সুখের আর কিছু হতে পারত না।
এইভাবে তাদের বনের মধ্যে একাকী জীবন কেটে গেল অনেক কাল। সেই সময় রাজা মস্ত এক শিকারের আয়োজন নিয়ে বনে ঢুকলেন। শিঙার আওয়াজ, শিকারী কুকুরের চিৎকার আর শিকারীদের উল্লাস-ভরা ধ্বনি সারা বনকে ভরে তুলল। হরিণ সব শুনল। তার মনে হল ছুটে ঐদিকে যাই। সে তার বোনকে বললে—আমাকে শিকারে যেতে দাও বোন! আমি আর সইতে পারছি না! এই বলে সে এমন মিনতি জানাতে লাগল যে তার বোন আর পারল না। বললে—বেশ, যাও, কিন্তু সন্ধের আগে ফিরে এসো। শিকারীদের ভয়ে আমি দরজা বন্ধ রাখব। তুমি দরজায় ধাক্কা দিয়ে বোলো: ছোট্ট বোনটি—খুলে দাও কপাটি। তাহলেই বুঝব তুমি এসেছ। এ না বললে আমি দরজা খুলব না। ছিটে-হরিণ লাফিয়ে বেরিয়ে গেল খোলা হাওয়ায় মনের আনন্দে।
রাজা আর শিকারীরা সেই সুন্দর ছিটে-হরিণটিকে দেখলেন। দেখে তার পিছনে পিছনে ছুটলেন; কিন্তু কোনমতেই তাকে ধরতে পারলেন না। যখনই তাঁরা ভাবেন, এইবার ধরেছি—তখনই সে ঝোপের মধ্যে দিয়ে লাফিয়ে কোথায় যে পালায় কেউ তাকে দেখতে পায় না। অন্ধকার হলে সে কুটিরে পৌঁছে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললে: ছোট্ট বোনটি—খুলে দাও কপাটি। দরজা খুলতেই লাফিয়ে ঢুকে পড়ল সে। তারপর তার নরম বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন আবার শুরু হল শিকার খেলা। হরিণটি যখন শিকারীর শিঙার শব্দ আর শিকারীদের হো-হো চিৎকার শুনতে পেল, সে আর স্থির থাকতে পারল না। বললে—বোন, আমায় ছেড়ে দাও! এখানে আর থাকতে পারছি না! বোনটি দরজা খুলে দিয়ে বললে—সন্ধের আগে কিন্তু ফিরে এসো, আর সঙ্কেত-শব্দটি বলতে ভুলো না।
রাজা আর তাঁর শিকারীরা দেখলেন, আবার সেই হরিণ, গলায় তার সোনার ফিতে। সবাই মিলে তাকে তাড়া করলেন, কিন্তু হরিণটি এত ক্ষিপ্র, এত তৎপর যে সহজেই পালিয়ে গেল। সারাদিন ধরে চলল এই। শেষে সন্ধ্যার আগে শিকারীরা তাকে ঘিরে ফেলল আর একজন শিকারী তার পায়ে মারল একখানি তীর। ভাগ্যিস খুব বেশি লাগেনি, হরিণ খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুট দিল। একজন শিকারী চুপি-চুপি তার পিছু নিয়ে কুটির পর্যন্ত হাজির হল। সে শুনল হরিণ বলছে: ছোট্ট বোনটি—খুলে দাও কপাটি। দরজা খুলে গেল, আবার বন্ধ হল। শিকারী সমস্ত দেখলে; তারপর রাজার কাছে গিয়ে বললে সব কথা। শুনে রাজা বললেন—কাল আবার হবে শিকার-খেলা।
হরিণের পায়ে আঘাত লেগেছে দেখে ছোট বোনটি ভারি ভয় পেয়ে গেল। সে রক্ত ধুয়ে দিলে, ঘায়ের উপর পাতার ওষুধ বেঁধে দিলে, তারপর বললে—ঘুমিয়ে পড় দাদা—তাহলে তোমার ব্যথা তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। হরিণের পায়ে বিশেষ কিছু লাগেনি—পরদিন সকালে তার কোন ব্যথাই রইল না। তারপর হরিণের কানে যখন আবার শিকারের শব্দ এল সে বললে—আমি আর সইতে পারছি না—চললুম; আমাকে ধরা অত সহজ নয়। বোন কেঁদে বললে—এবারে ওরা তোমায় মেরে ফেলবে, আর এখানে এই বনের মধ্যে আমি পড়ে থাকব একলাটি। আজ তোমায় আমি যেতে দেব না! হরিণ বললে—তাহলে মনের দুঃখেই আমি মরে যাব। শিঙার আওয়াজ যখন আমার কানে আসে, মনে হয় যেন আমার চামড়া ফুঁড়ে আমি লাফিয়ে বেরিয়ে পড়ব। বোনটি আর কী করে, দরজা খুলে দিলে। হরিণ মনের আনন্দে লাফাতে লাফাতে বনে অদৃশ্য হয়ে গেল। রাজা তাকে দেখতে পেয়ে শিকারীদের বললেন—ওর পিছনে ছোট—যতক্ষণ না রাত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত; কিন্তু সাবধান, কেউ যেন ওকে আঘাত না করে।
সূর্য ডুবে যেতেই রাজা শিকারীদের ডেকে বললেন—চল তো এবার দেখি বনের মধ্যে কুটিরটি কোথায়? কুটিরে পৌঁছে রাজা দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন: ছোট্ট বোনটি—খুলে দাও কপাটি। দরজা খুলতেই রাজা দেখলেন, কুটিরের মধ্যে একটি কন্যা দাঁড়িয়ে। অমন সুন্দরী কন্যা তিনি জীবনে কখনো দেখেননি। মেয়েটি যখন দেখল হরিণের বদলে মাথায় সোনার মুকুট পরা একজন লোক এসে ঢুকলেন, সে বিষম ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু রাজা অতি নম্র ব্যবহার করলেন। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন—তুমি যদি আমার সঙ্গে আমার প্রাসাদে আসো তাহলে তোমায় আমি বিয়ে করব। মেয়েটি বললে—বেশ যাব, কিন্তু আমার সঙ্গে হরিণটিকে নিয়ে যেতে হবে; ওকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারব না। রাজা বললেন—যতদিন তুমি বাঁচো তোমার সঙ্গে ও থাকবে। কোনদিন ওর কোন অভাব হবে না। বলতে বলতেই হরিণ ছুটে এসে ঢুকল। তার বোনটি নল-পাতার দড়ি দিয়ে তাকে বেঁধে দড়িটি হাতে করে রাজার সঙ্গে কুটির থেকে বেরিয়ে গেল।
রাজা সুন্দরী কন্যাকে নিজের ঘোড়ায় বসিয়ে তাঁর প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। খুব জাঁকজমকে সেখানে বিয়ে হল। মেয়েটি রানী হল। বহুদিন তাদের কেটে গেল সুখে। হরিণের আদর-যত্ন হল। প্রাসাদের বাগানে সে ছুটোছুটি করে খেলে বেড়াতে লাগল।
দুষ্টু সৎমা ভেবেছিলেন মেয়েটিকে এতদিনে বুনো জন্তুতে ছিঁড়ে খেয়েছে আর হরিণ-রূপী ছেলেটি শিকারীদের হাতে মারা পড়েছে। কিন্তু তিনি যখন খবর পেলেন যে তারা পরম সুখে আছে, কোন অভাব নেই, তাঁর মনে এমন হিংসে হল যে তিনি আর শান্তিতে থাকতে পারলেন না। সেই থেকে তাঁর একমাত্র চিন্তা হল, কী করে তাদের আবার দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে এনে ফেলা যায়। তার নিজের মেয়ে ছিল রাতের অন্ধকারের মতো কুশ্রী। তার ছিল শুধু একটি চোখ। সে রাগ করে বললে—রানী হয়েছে? ও তো আমারই হবার কথা। বুড়ি বললে—এখন চুপ করে থাক মা। যখন সময় হবে আমিই সব করব।
কিছুদিন পরে রানীর একটি সুন্দর খোকা হল। সেদিন রাজা বেরিয়েছিলেন শিকার করতে। ডাইনি বুড়ি সেই সুযোগে রাজবাড়ির দাসীর রূপ ধরে যেখানে রানী শুয়ে ছিলেন সেই ঘরে গিয়ে বললে—আসুন রানী, স্নানের জল তৈরি। গরম জলে স্নান করে নিলে শরীর ঝরঝরে হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি আসুন, যাতে জল ঠাণ্ডা হয়ে না যায়।
ডাইনির মেয়ে কাছেই ছিল। তারা দু-জনে রানীকে নিয়ে গেল স্নানের ঘরে। স্নানের টবে রানীকে শুইয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে গেল। স্নানের ঘরে তারা একটা আগুন জ্বেলে রেখেছিল; এমনই তার উত্তাপ যে রানী তাইতে দম বন্ধ হয়ে মারা গেলেন।
ডাইনি তার মেয়েকে নিয়ে রানীর ঘরে ঢুকল। তার মাথায় একটা ওড়না দিয়ে রানী যে বিছানায় শুয়ে ছিলেন সেই বিছানায় শুইয়ে দিল। মেয়েকে রানীর মতো রূপ দিল; শুধু কানা চোখটার কিছু করতে পারলে না। কিন্তু রাজা যাতে বুঝতে না পারেন, ডাইনি তাই মেয়েকে বললে যেদিকে কানা চোখ সেইদিকে মাথা কাত করে শুয়ে থাকতে।
সন্ধ্যাবেলা ফিরে রাজা যখন শুনলেন তাঁর ছেলে হয়েছে, তিনি ভারি খুশি হলেন। তিনি যাচ্ছিলেন দেখতে রানী কেমন আছেন, কিন্তু ডাইনি তাড়াতাড়ি চেঁচিয়ে বললে—দোহাই মহারাজ, পর্দা সরাবেন না! রানীর এখন আলো দেখলে খুব ক্ষতি হবে! তাঁর জিরোনো দরকার। রাজা চলে গেলেন। নকল রানী যে বিছানায় শুয়ে আছেন জানতেও পারলেন না।
কিন্তু মাঝরাতে যখন সবাই ঘুমোচ্ছে, খোকার দোলনার পাশে জেগে বসে ছিল শুধু খোকার ধাই। সে দেখল দরজা খুলে রানী ঢুকলেন। দোলনা থেকে খোকাকে কোলে নিয়ে তাকে দুধ খাওয়ালেন। তারপর তার বিছানা ঠিক করে গুছিয়ে দিলেন, শাল দিয়ে ঢেকে দিলেন তাকে। তারপর ঘরের এক কোণে যেখানে হরিণটি থাকত তার কাছে গিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর নিঃশব্দে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পরদিন সকালে ধাই প্রহরীদের জিজ্ঞেস করল, রাত্রে কেউ এসেছিল কি না। কিন্তু তারা বললে—আমরা তো কাউকে দেখিনি!
এমনি রাতের পর রাত তিনি এলেন, কিন্তু কখনও একটি কথা বললেন না। ধাই প্রতিবারেই তাঁকে দেখতে পেত, কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু বলত না।
এইভাবে কিছুকাল কেটে গেলে এক রাতে রানী বলে উঠলেন—
খোকা আমার আছে কেমন?
কেমন আছে হরিণটি আমার?
আর দুটিবার আসব আমি
তার পরেতে আসব নাকো আর।
ধাই কোন কথা বললে না। কিন্তু রানী চলে যেতে রাজাকে গিয়ে সব কথা বলে দিলে। রাজা বললেন—ব্যাপার কী? কাল রাতে আমি নিজে ছেলেকে পাহারা দেব।
সন্ধেবেলা তিনি ছেলের ঘরে গিয়ে বসলেন। মাঝরাতে রানী এসে বললেন—
খোকা আমার আছে কেমন?
কেমন আছে হরিণটি আমার?
আরেকটি বার আসব আমি
তার পরেতে আসব নাকো আর।
তারপর তিনি খোকাকে দুধ খাওয়ালেন। তারপর রোজ যেমন মিলিয়ে যান তেমনি দরজা দিয়ে বেরিয়ে কোথায় মিলিয়ে গেলেন। রাজার সাহস হল না তাঁর সঙ্গে কথা কইতে।
তার পরের রাত্রে রাজা আবার জেগে রইলেন। রানী এসে বললেন—
খোকা আমার আছে কেমন?
কেমন আছে হরিণটি আমার?
শেষবারটি এলেম আমি
এর পরেতে আসব নাকো আর।
রাজা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি রানীর দিকে লাফিয়ে গিয়ে বললেন—তুমি তো আমারই প্রাণের রানী! তুমি তো আর কেউ নও! তিনি বললেন—হ্যাঁ, আমিই তোমার রানী। বলতেই তিনি আবার জীবন ফিরে পেলেন। ভগবানের দয়ায় তাঁর আগেকার স্বাস্থ্য ফিরে এল।
তখন রানী রাজাকে ডাইনি আর তার মেয়ে কী-কী কু-কাজ করেছে সব বললেন। রাজা তাদের দু-জনকে ধরে কাজীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কাজী তাদের বিচার করলেন। ডাইনির মেয়েকে বনের মধ্যে নিয়ে বুনো জন্তুর মুখে ফেলে দেওয়া হল। তারা তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললে। ডাইনিকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হল। ডাইনি পুড়ে যেতেই হরিণ মনুষ্য-রূপ ফিরে পেল। সেই থেকে ভাই আর বোন সারা জীবন সুখে কাটিয়ে দিলে।