Chapter Index

    একটি যুবক এক সময় ফৌজ হবার জন্যে নাম লেখালো। সে ছিল বীর, সাহসী। যেখানে সবচেয়ে বেশি লড়াই হত সেইখানে সবার আগে ছুটে যেত। যতদিন যুদ্ধ চলছিল ততদিন তার বেশ কাটল। কিন্তু শান্তি ঘোষণা হতেই তার ছুটি হয়ে গেল। কাপ্তেন তাকে বললেন—এবার তুমি যেতে পার।

    তার যাবার কোন জায়গা ছিল না। তার বাপ-মা মারা গিয়েছিলেন। শেষে সে ভাবলে—যাই, ভাইদের কাছে গিয়ে বলি, যতদিন না আবার যুদ্ধ বাধে ততদিন আশ্রয় দিতে।

    কিন্তু তার ভাইরা ছিল কঠিনচেতা। তারা বললে—তোমায় নিয়ে আমরা কী করব? তুমি আমাদের কোন সাহায্যই করতে পারবে না। তুমি বরং নিজের পথ দেখ।

    সৈনিকের নিজের বন্দুকটি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সেটি কাঁধে ফেলে সে বেরিয়ে পড়ল পেটের ধান্দায়।

    কিছুদূর গিয়ে সে এক জলার ধারে হাজির হল। জলার ধারে সামান্য কতকগুলি গাছ, গোল হয়ে ঘেরা। মনের দুঃখে সে গাছতলায় বসে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা চিন্তা করতে লাগল। মনে মনে বললে—আমার পয়সা কড়িও নেই, যুদ্ধ করা ছাড়া আর কিছু কোনদিন শিখিওনি। এখন দেশে শান্তি, কাজেই আমায় কেউ চায় না। না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোনও উপায়ই দেখছি না।

    সেই সময় তার কানে এল এক খস্-খস্ শব্দ। ঘুরে তাকিয়ে দেখে, সামনে একটি অচেনা লোক দাঁড়িয়ে। গায়ে সবুজ কোট, জমকালো চেহারা; কিন্তু পায়ে লম্বা লম্বা খুর। বুঝল শয়তান এসেছে। সে সৈনিকের দিকে তাকিয়ে বললে—আমি ভাল করেই জানি তুমি কী চাও। যত টাকাকড়ি ধনসম্পত্তি তুমি চাও তাই পাবে। দু-হাতে যত টাকা ওড়াতে চাও পারবে। কিন্তু তার আগে আমি দেখতে চাই তুমি ভীরু কি না—যাতে বুঝব যে আমার পয়সা নষ্ট হবে না।

    সে বললে—সৈনিক হবে ভীরু? এ দুটি শব্দ একসঙ্গে কেউ বসাতে পেরেছে? আমায় দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন না!

    লোকটি বললে—বেশ, তবে পিছন ফিরে দেখ।

    সৈনিক পিছন ফিরে দেখল, প্রকাণ্ড একটা ভাল্লুক গর্জন করতে করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। সৈনিক বললে—ও হো, বন্ধু, দাঁড়াও তোমার নাকটা একটু চুলকে দিই, তাহলেই তোমার গর্জন থেমে যাবে। বলে তার বন্দুক তুলে ভাল্লুকের মাথায় এমনই একটা গুলি মারল যে ধুপ করে পড়ে গেল সে মাটিতে, আর উঠল না।

    অচেনা লোকটি বললে—দেখছি তোমার সাহসের অভাব নেই। কিন্তু আরও একটি শর্ত তোমায় পালন করতে হবে।

    সৈনিক বুঝতেই পেরেছিল সে কার সঙ্গে কথা কইছে; সে বললে—যদি ভবিষ্যতে আমার কোন ক্ষতি না হয় তাহলে যে-কোন শর্তই আমি পালন করতে রাজি আছি।

    —তুমিই ভেবে দেখ না, যে শর্ত তোমায় করতে বলছি তাতে তোমার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি না? এই হচ্ছে সেই শর্ত—সাত বছর তুমি স্নান করবে না, চুল আঁচড়াবে না, নখ কাটবে না, দাড়ি কামাবে না, ঠাকুরের পুজো বা প্রার্থনা করবে না। আমার কোট আর একটা গা-ঢাকা তোমায় দেব, সমস্তক্ষণ ঐ দুটি পরে থাকতে হবে। এই সাত বছরের মধ্যে যদি তুমি মারা যাও তাহলে তুমি আমার হবে। যদি বাঁচো তাহলে তুমি মুক্তি পাবে, অনেক ধন দৌলতও পাবে।

    সৈনিক খানিক বসে বসে তার নিদারুণ দারিদ্র্যের কথা ভাবল। তারপর ভাবল কতবার সে নির্ভীকভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিল। শেষে ঠিক করল সেই অচেনা লোকের শর্তই মেনে নেবে।

    শয়তান অমনি তার সবুজ কোট খুলে সৈনিককে পরিয়ে দিয়ে বললে—যতক্ষণ এই কোট গায়ে থাকবে ততক্ষণ এর পকেটে হাত দিলে যথেষ্ট টাকা পাবে। তারপর সে ভাল্লুকের গা থেকে তার চামড়াটা ছাড়িয়ে নিয়ে সৈনিকের হাতে দিয়ে বললে—এই হবে তোমার গা-ঢাকা আর বিছানা। সাত বছরের মধ্যে খবরদার অন্য কোন বিছানায় শোবে না, অন্য কোন গা-ঢাকা গায়ে পরবে না। তোমার নাম হল আজ থেকে ভালুচাম। বলে সে মিলিয়ে গেল।

    সৈনিক কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখল, সত্যিই টাকা রয়েছে। তখন সে কাঁধে ভাল্লুকের চামড়াটা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল পথে। তার এই সৌভাগ্যের ফলে সে যা খুশি যত চাই কিনতে পারবে এই ভেবে ভারি প্রীত হল।

    প্রথম বছরে আধোয়া মুখ, না-আঁচড়ানো চুল না-কামানো গোঁফ-দাড়িতে তার চেহারা খুব খারাপ হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় বছর থেকে তাকে এক দানোর মত দেখতে হল। চুলে সমস্ত মুখ ঢেকে গেল, দাড়ি দেখে মনে হত মোটা সুতির কম্বল, নখের বদলে মনে হত তার আঙুলে বাঘ-নখ গজাচ্ছে আর তার মুখে এত ধুলো ময়লা এসে জমেছিল যে মনে হত সর্ষে বীজ ছড়িয়ে দিলে গাছ জন্মাবে।

    যারা হঠাৎ তাকে দেখত তারা ভয়ে পালিয়ে যেত। কিন্তু সে যেখানে যেত গরিবদের পয়সা দিত। কাজেই তারা সবাই প্রার্থনা করত যাতে সে সাত বছর বাঁচে। রাত্রে থাকবার জন্যে সে যথেষ্ট টাকা দিত বলে কোনদিন তার রাতের আশ্রয়ের অভাব হয়নি।

    যাই হোক ভালুচাম তার পকেটে হাত দিয়ে যখন কয়েকটা সোনার মোহর বার করলে তখন মালিক নরম হয়ে এলেন। বাইরের বাড়িতে তাকে থাকবার জায়গা দিলেন কিন্তু তাকে দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নিলেন যাতে সে ঘরের বাইরে না আসে। ঐ চেহারা দেখলে সরাইখানার নাম খারাপ হয়ে যাবে।

    সন্ধ্যাবেলা ভালুচাম যখন একা বসে আছে, বসে বসে ভাবছে—কবে সাত বছর কাটবে, সেই সময়ে পাশের ঘর থেকে এক তীক্ষ্ণ কান্নার শব্দ পেল। সৈনিকের ছিল দয়ায় ভরা মন। সে দরজা খুলে দেখল, এক বুড়ো দু-হাত মাথার উপর রেখে প্রাণ ভরে কাঁদছে।

    ভালুচাম তার দিকে এগিয়ে যেতে বুড়ো তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পালাতে গেল। তারপর যখন দেখল খুব মিষ্টি গলায় মানুষের মত করে কে তার সঙ্গে কথা কইছে, সে ভরসা পেল। সৈনিকের স্নিগ্ধ, সহানুভূতি-ভরা কথায় সে তার দুঃখের কথা একে-একে খুলে বলল। বলল তার যা সম্পত্তি ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। এইবার তার মেয়েরা সবাই উপোস করে মরবে। সরাইখানার মালিককে ভাড়া দেবার টাকাও আর নেই। খুব সম্ভব তাকে জেলে যেতে হবে।

    ভালুচাম বললে—এ ছাড়া আপনার যদি আর কোন ঝঞ্ঝাট না থাকে তাহলে আমিই তো আপনাকে সাহায্য করতে পারি। যথেষ্ট টাকা আছে আমার। বলে সে সরাইয়ের মালিককে ডেকে পাঠালো। তার যা পাওনা ছিল চুকিয়ে দিল। লোকটিকেও একথলি সোনার মোহর উপহার দিল।

    বুড়ো যখন দেখল তার সব ঝঞ্ঝাট সব দুশ্চিন্তারই অবসান হয়েছে, সে কী বলে যে ধন্যবাদ জানাবে ভেবেই পেল না। শেষে তার নিজের মেয়েদের কথা মনে পড়ল। বুড়ো বললে—আসুন আমার সঙ্গে আমার বাড়ি। আমার তিন মেয়ের সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দেব। দেখবেন তারা এক একটি ডানা-কাটা পরী। যদি আপনার পছন্দ হয়, তাদের যে-কোন একটিকে বিয়ে করতে পারেন। তারা যখন শুনবে আপনি আমার জন্যে কী করেছেন, তারা নিশ্চয় বিয়ে করতে রাজি হবে। আপনার চেহারা যতই অদ্ভুত হোক না, একটু পরেই ওটা অভ্যেস হয়ে যায়।

    এই নিমন্ত্রণ পেয়ে ভালুচামের খুবই ভাল লাগল। বুড়োর সঙ্গে গেল তার বাড়ি। কিন্তু বড় মেয়ে তার চেহারা দেখে ভয়ে চিৎকার করে সেখান থেকে পালালো। মেজ মেয়ে পালালো না বটে, কিন্তু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল।

    মেজ মেয়ে বললে—এমন লোককে কেমন করে আমি বিয়ে করি? কোন জায়গায় এর মানুষের মত কিচ্ছু নেই। যেন সেই যে একবার এক লোমশ ভাল্লুক আমাদের বাড়িতে এসে বলেছিল সে একজন মানুষ, সে-ও বরং এর চেয়ে ভাল ছিল। তার মাথায় ছিল ঘোড়সওয়ারের টুপি, হাতে ছিল সাদা দস্তানা। এ লোকটি যদি শুধু কুৎসিত দেখতে হত তাহলেও না-হয় আমি অভ্যস্ত হয়ে যেতুম; কিন্তু এই ভয়ানক চেহারা কোনমতেই বরদাস্ত করতে পারব না।

    ছোট মেয়েটি কিন্তু ভদ্রভাবে কথা বললে। সে বললে—বাবা, ইনি যখন তোমায় অমন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন, তখন ইনি নিশ্চয় খুব ভাল লোক। তুমি যদি বলে থাকো তোমার একটি মেয়ে এঁকে দেবে তবে তোমার কথা রাখা উচিত।

    দুঃখের বিষয় ভালুচামের মুখ ছিল ময়লায় আর লোমে ঢাকা, নইলে মেয়েটি দেখতে পেত তার কথা শুনে ভালুচাম কত খুশি হয়েছে। যাই হোক সে নিজের আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে দু-টুকরো করে ভেঙে তার আধখানা মেয়েটিকে দিল আর বাকি আধখানা নিজের কাছে রাখল। মেয়েটির হাতে যে টুকরোটি দিল তাতে মেয়ের নাম লিখে দিল আর নিজের টুকরোয় নিজের নাম। তারপর ভালুচাম বললে—সাবধানে আংটিটা রেখো। তিন বছর আমায় ঘুরে বেড়াতে হবে। তারপর আমি ফিরব। তখন যদি আমি ফিরে না আসি তাহলে তুমি মুক্তি পাবে; কারণ ফিরে না এলে বুঝবে আমি মরে গেছি। যাই হোক, ভগবানের কাছে রোজ প্রার্থনা কোরো যাতে আমি বাঁচি। বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

    সে চলে যেতে কন্যাটি কালো পোশাক পরল। তার বরের কথা যখন তার মনে পড়ত তার চোখে জল ভরে আসত। দিদিরা এই নিয়ে শুধু মজা করত। তারা ছোট বোনের বরের কথা বলে তাকে ক্ষ্যাপাতো আর ঠাট্টা করত।

    বড় বোন বলত—যখন তোর হাত ওর নিজের হাতে তুলে নেবে তখন সাবধান! দেখিস বড়-বড় নখ না ফুটে যায়!

    মেজ বোন বলত—দেখিস তোর উপর খুশি হয়ে ও তোকে খেয়েই না ফেলে! জানিস তো, ভাল্লুক মিষ্টি খেতে ভালবাসে।

    বোনেরা বলত—যাই হোক, বিয়েতে কিন্তু খুব ফুর্তি হবে কারণ ভালুকরা নাচে ভাল।

    কনেটি চুপ করে থাকত। কোন জবাব দিত না। বোনেরা দেখল ওকে আর রাগাতে পারা যাচ্ছে না।

    ভালুচাম এদিকে এক দেশ থেকে অপর দেশ ঘুরে বেড়াতে লাগল। যখনই পারত লোকের উপকার করত, গরিবদের অসুস্থদের সাহায্য করত। অনেকেই তার জন্যে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানাতো যাতে সে অনেক দিন বাঁচে।

    শেষে সাত বছরের শেষদিন এসে উপস্থিত। ভালুচাম সেই জলাভূমিতে যেখানে একসারি গাছ গোল হয়ে ঘিরে আছে সেইখানে এসে হাজির হল। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। একটা ঝড়ের মত হাওয়া উঠিয়ে সেই শয়তান এসে হাজির হল যে ঠিক সাত বছর আগে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। শয়তানের মুখ অত্যন্ত অপ্রসন্ন, মেজাজ খুব খারাপ। শয়তান নিজের গা থেকে সৈনিকের কোট খুলে ফেলে তার নিজের সবুজ কোট আর ভাল্লুকের চামড়ার গা-ঢাকাটা চাইল।

    সৈনিক বললে—দাঁড়াও দাঁড়াও, আগে আমায় ধুইয়ে মুছিয়ে পরিষ্কার করে দাও, তবে তো!

    শয়তান গোমড়া মুখে জল নিয়ে এল, সৈনিককে স্নান করালো, তার দাড়ি কামিয়ে দিল, চুল আঁচড়ে দিল, নখ কেটে দিল। এই সব হয়ে যেতে বীর সৈনিককে দেখতে সুন্দর হল—আগের চেয়ে আরো বেশি।

    তারপর সেই দুষ্টু শয়তান চলে যেতেই সৈনিক হালকা মনে উঠে দাঁড়ালো। শহরে গিয়ে চমৎকার মখমলের এক পোশাক কিনল, তারপর সাদা রঙের চার ঘোড়ার গাড়িতে বসে টগ-বগ করে হাজির হল তার কনের বাড়ি। কেউ তাকে চিনতে পারল না। কনের বাবা বণিক ভাবলেন কোন জমিদার-পুত্র এসেছেন অথবা রাজ-কর্মচারী। যে ঘরে তাঁর তিন মেয়ে বসে ছিল সেইখানে তাঁকে নিয়ে গেলেন। বড় দুই বোন বললে—আপনি খাবার টেবিলে আমাদের দু-জনের মাঝখানে বসবেন।

    সে রাজি হল। দু-বোন তাকে সরাব খেতে দিলে। সব থেকে ভাল ভাল খাবার সাজিয়ে দিলে তার সামনে। তারা ভাবল এমন সুন্দর পুরুষ তারা এর আগে কখনও দেখে নি।

    ছোট বোন তার সামনেই বসে ছিল চোখের পাতা নিচু করে। একটি কথাও সে বলে নি। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে বণিক বললেন—আমার কোন মেয়েকে কি আপনার বিবাহের জন্যে পছন্দ হয়?

    শুনেই বড় দু-বোন দৌড় দিল তাদের ঘরে ভাল ভাল পোশাক পরে সেজে আসবার জন্যে। দু-জনেই ভাবলে তাকেই পছন্দ করবেন ইনি।

    এই সুযোগে অতিথি আর ছোট মেয়ে একা হল। সে তার পকেট থেকে আধখানা আংটি বার করে এক পেয়ালা সরাবের মধ্যে ফেলে পেয়ালাটি মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি পেয়ালা নিয়েই দেখতে পেল তার তলায় আধখানা আংটি পড়ে। দুরু-দুরু বুকে সে তার গলায় ঝোলানো একটি ফিতে ধরে টান দিল। তাতে বাঁধা ছিল অন্য আধখানি আংটি। দুটি টুকরো এক করতেই কাপে কাপে মিলে গেল।

    এই সুযোগে অতিথি আর ছোট মেয়ে একা হল। সে তার পকেট থেকে আধখানা আংটি বার করে এক পেয়ালা সরাবের মধ্যে ফেলে পেয়ালাটি মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি পেয়ালা নিয়েই দেখতে পেল তার তলায় আধখানা আংটি পড়ে। দুরু-দুরু বুকে সে তার গলায় ঝোলানো একটি ফিতে ধরে টান দিল। তাতে বাঁধা ছিল অন্য আধখানি আংটি। দুটি টুকরো এক করতেই কাপে কাপে মিলে গেল।

    সৈনিক তার দিকে চেয়ে বললে—আমিই তোমার বর যাকে তুমি একসময় ভালুচাম বলে জানতে। ভগবানের দয়ায় আমি আমার পূর্বের রূপ ফিরে পেয়েছি। যে দুষ্ট শক্তি আমায় কুরূপ করে রেখেছিল তার থেকে মুক্ত হয়েছি।

    ঠিক সেই সময় বড় দুই বোন সেজে-গুজে বেরিয়ে এল। কিন্তু যখন তারা শুনল এই সুন্দর সৈনিকটি তাদের ছোট বোনের স্বামী, আর এই হচ্ছে সেই লোক যাকে নিয়ে তারা অত ঠাট্টা করত, যার নাম ছিল ভালুচাম, তারা এইসব শুনে এমন রেগে গেল, এমন বিরক্ত হল যে এক বোন নিজেকে ডুবিয়ে মারল আর এক বোন দিল গলায় দড়ি।

    সন্ধ্যাবেলা দরজায় কে টোকা দিল। সৈনিক দরজা খুলে দেখল, সেই সবুজ কোট পরা অচেনা মানুষটি। দরজায় দাঁড়িয়ে সে বললে—দেখ একজনকে আমি হারালুম বটে, কিন্তু তার বদলে দু-জনকে পেলুম।

    টীকা