রাখাল ছেলে
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাএক সময় এক রাখাল ছেলে ছিল, সে সব প্রশ্নের উত্তর এমন বুদ্ধিমানের মতো দিতে পারত যে সারা পৃথিবীতে তার নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল।
দেশের রাজার কানে এই সংবাদ পৌঁছল, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করলেন না। ছেলেটিকে ডেকে পাঠালেন।
রাখাল ছেলে আসতে রাজা বললেন—আমার তিন প্রশ্নের ঠিক-ঠাক জবাব তুমি যদি দিতে পার, তাহলে তোমায় আমি নিজের ছেলের মত দেখব। তুমি রাজপ্রাসাদেই থাকতে পাবে।
ছেলেটি বললে—কী আপনার প্রশ্ন?
রাজা বললেন—প্রথম প্রশ্ন, সমুদ্রে ক-ফোঁটা জল?
রাখাল ছেলে জবাব দিলে—মহারাজ, যতক্ষণ আমি সমুদ্রের জলের ফোঁটা গুনব ততক্ষণ আপনি যদি পৃথিবীর সমস্ত নদীর মুখগুলি বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে রাখতে পারেন যাতে এক ফোঁটা জলও সমুদ্রে গিয়ে না পড়ে তাহলে আমি গুনে বলে দিতে পারি সমুদ্রের জল ক-ফোঁটা।
রাজা বললেন—দ্বিতীয় প্রশ্ন, আকাশে কত তারা?
রাখাল ছেলে বললে—একটা বড় সাদা কাগজ দিন। বলে সেই কাগজের উপর সূক্ষ্ম কলমের ফোঁটা দিয়ে চলল। এত ফোঁটা দিল যে তাদের আর দেখাই যায় না, গোনা তো দূরের কথা। কেউ যদি চেষ্টা করতে যায় তার চোখই খারাপ হয়ে যাবে।
রাখাল বললে—এই কাগজে যতগুলি ফোঁটা আছে, আকাশেও ততগুলি তারা। গুনে দেখুক কেউ।
কিন্তু কেউ গুনতে পারল না।
রাজা বললেন—তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে অনন্ত কালের মধ্যে কত সেকেন্ড আছে?
রাখাল ছেলে জবাব দিলে—নিম্ন পমেরানিয়াতে হীরক পর্বত আছে। সেই পাহাড় আড়াই মাইল উঁচু, আড়াই মাইল লম্বা আর আড়াই মাইল চওড়া। প্রতি একশো বছর অন্তর একটি ছোট্ট পাখি আসে এই হীরক পর্বতের উপর তার ঠোঁট শানাতে। এমনি করে ঠোঁট শানিয়ে যখন সমস্ত পাহাড় ক্ষয়ে যাবে তখনই বুঝবেন, অনন্ত কালের প্রথম সেকেন্ড কাটল।
রাজা বললেন—তুমি বুদ্ধিমানেরই মতো তিন প্রশ্নের জবাব দিয়েছ। এবার থেকে তুমি আমার প্রাসাদে এসে থাকবে। আমি তোমাকে নিজের ছেলের মতো গণ্য করব।