Chapter Index

    এক নেকড়ে এক শেয়ালের সঙ্গে ভাব করলে। সেই থেকে নেকড়ে শেয়ালকে নিজের কাছে রেখে দিত। আর নেকড়ে যা চাইত শেয়ালকে তাই করতে হত। দুজনের মধ্যে শেয়ালই গায়ের জোরে কম, কাজেই সে প্রভুত্ব করতে পারত না, নেকড়েই বরং যা খুশি করত। একদিন তারা বনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, নেকড়ে বললে— লাল শেয়াল, আমার জন্য কিছু খাবার জোগাড় কর। নইলে তোমাকেই খেয়ে ফেলব।

    শেয়াল বললে— কাছেই আমার এক গোলাবাড়ি জানা আছে সেখানে দুটো কচি ভেড়া আছে। আপনি যদি চান তার একটাকে আমি নিয়ে আসতে পারি। নেকড়ে তাতে রাজি হল। কাজেই শেয়াল গিয়ে ভেড়ার বাচ্চাটা চুরি করে নেকড়ের কাছে নিয়ে এল। নিজে গেল অন্য কিছু খাবারের খোঁজে।

    নেকড়ে ভেড়ার বাচ্চাটাকে খেল বটে কিন্তু তার মনে হল অন্যটাকেও পেলে ভালো হত। কিন্তু সে তো শেয়ালের মত অমন ধূর্ত নয়, ভেড়ার মা তাকে দেখে ফেলল, দেখে প্রাণপণে চেঁচাতে লাগল। তাই শুনে ছুটে এল চাষী কী ব্যাপার দেখবার জন্যে। নেকড়ে বাঘ এমন মার খেল যে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গোঙাতে গোঙাতে শেয়ালের কাছে ফিরে এসে বললে— আচ্ছা বিপদে ফেলেছিলে বটে! অন্য বাচ্চাটাকে ধরতে গিয়ে চাষীর কাছে যা মার খেয়েছি, প্রায় মেরে ফেলেছিল আর-কি!

    শেয়াল বললে— অমন রাক্ষসের মত লোভ করবার কী দরকার ছিল?

    আর-একদিন যখন তারা মাঠে, লোভী নেকড়ে বলে উঠল— লাল শেয়াল! যাও আমার জন্যে কিছু খাবার খুঁজে আন, নইলে তোমাকে খেয়ে ফেলব।

    —আপনার জন্যে কিছু প্যানকেক জোগাড় করে আনতে পারি— যদি চান। আমি একটা গোলাবাড়ি জানি সেখানকার চাষানী এখন প্যানকেক ভাজছে।।

    দুজনে চলল। শেয়াল চুপিসাড়ে ঢুকে পড়ল বাড়ির মধ্যে। ফোঁস-ফোঁস করে খানিকক্ষণ শুঁকল, শেষে খুঁজে বার করল কোথায় প্যানকেকের পাত্রটা আছে। তার থেকে ছ-টা প্যানকেক টেনে বার করে নেকড়ের কাছে নিয়ে এল।

    শেয়াল বললে— এই নিন আপনার খাবার। বলে সে নিজের আহারের খোঁজে বেরিয়ে গেল।

    নেকড়ে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে প্যানকেকগুলি খেয়ে ফেলল আর বললে— এত চমৎকার খেতে! আরো খাবো। বলে সে গোলাবাড়ির রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল। শেয়ালের মত অত চালাক তো নয়— কেকের পাত্রটা টানতে গিয়ে সেটাকে উল্টে ফেলে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেললে।

    চাষানী শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে এল। নেকড়ে দেখে ভয়ে চিৎকার করে জনমজুরদের ডাকতে লাগল। তারা ছুটতে ছুটতে এসে হাতের কাছে যা পেল তাই দিয়ে বেদম প্রহার দিলে তাকে। নেকড়ে গাঁক-গাঁক করে চেঁচাতে চেঁচাতে দুই খোঁড়া পায়ে ছুটতে ছুটতে শেয়ালের কাছে এসে বললে— আমার সঙ্গে এ কী পরিহাস? চাষারা আমায় ধরেই ফেলেছিল! আর এমন মার মেরেছে যে কী বলব!

    শেয়াল বললে— অমন রাক্ষসের মত লোভ করে গিলতে গিয়েছিলেন কেন?

    আর একদিন দুজনে যখন বেড়াচ্ছে, সেই সময় নেকড়ে বললে— লাল-শেয়াল, আমার জন্যে কিছু খাবার খুঁজে দাও, নইলে তোমায় খাব।

    শেয়াল বললে— একজন লোক আজ অনেক ভেড়া কেটেছে। নুন দিয়ে মাখা সেই মাংস মাটির নিচের ঘরে একটা টবের মধ্যে আছে। আমি কিছু নিয়ে আসতে পারি।

    নেকড়ে বললে— না, এবারে আমি তোমার সঙ্গে যাব। যদি আমায় ছুটে পালাতে হয় তাহলে তুমি বরং আমায় সাহায্য করবে।

    শেয়াল বললে— আপনার যেমন অভিরুচি। এই বলে তাকে নিয়ে কোন রকমে নির্বিঘ্নে মাটির তলার ঘরে এসে পৌঁছল।

    প্রচুর মাংস। নেকড়ে প্রাণভরে মাংস খাওয়া শুরু করলে আর বললে— যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো শব্দ শুনতে না পাই ততক্ষণ খাব!

    শেয়ালও আরাম করে খেল। কিন্তু সে থেকে-থেকে একবার করে উঁকি মেরে দেখে আসতে লাগল, আর মাঝে মাঝে তারা যে গর্ত দিয়ে ঢুকেছিল সেই গর্তের মধ্যে দিয়ে পেটটাকে গলিয়ে দেখতে লাগল যে বেরোয় কি না।

    নেকড়ে বললে— শেয়াল ভাই! তুমি অমন অস্থির হয়ে সব সময় ছুটোছুটি লাফালাফি করছ কেন?

    শেয়াল বললে— মাঝে মাঝে দেখছি কেউ আসছে কি না! আমার কথা যদি শোনেন নেকড়ে প্রভু, খুব বেশি খাবেন না।

    নেকড়ে জবাব দিল— যতক্ষণ না টব খালি হয় ততক্ষণ এখান থেকে নড়ছি নে।

    এই সময় চাষার কানে মাটির নিচের ঘরে শেয়ালের লাফালাফির শব্দ গেল। চাষা এসে ঘরে ঢুকল। যেই না তাকে দেখা এক লাফে সেই গর্তের মধ্যে দিয়ে শেয়াল উধাও! নেকড়ে তার পিছনে পিছনে বেরোবার চেষ্টা করল, কিন্তু সে এত খেয়েছিল যে তার পেট ফুলে উঠে আর গর্তের মধ্যে দিয়ে গলল না। সে আটকে গেল। চাষা তাই দেখে একটা লাঠি এনে ঐখানেই তাকে মেরে ফেললে। শেয়াল এতদিন পরে সেই লোভীর হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে মনের আনন্দে নিজের গাড়ার মধ্যে ফিরে গেল।

    টীকা