Chapter Index

    একদিন বনের মধ্যে এক বেড়ালের সঙ্গে এক শেয়ালের দেখা। বেড়াল ভাবলে— হ্যাঁ, শেয়ালের বুদ্ধি আছে, বিবেচনা আছে। লোকে এর বিষয়ে অনেক কথাই বলে। যাই ওর সঙ্গে গিয়ে আলাপ করি। ভেবে বেড়াল গিয়ে বেশ মোলায়েম সুরে বললে— নমস্কার শেয়াল মশাই; কেমন আছেন? আজকালকার এই আক্রা-গণ্ডার দিনে কেমন কাটছে আপনার?

    শেয়ালের ভারি অহঙ্কার। সে বেড়ালের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একচোখ দেখে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। ভাবতে লাগল কী বলবে। শেষে বললে— ওরে বিল্লি, তোর কাজ তো শুধু গোঁফ পরিষ্কার করা ; ওরে ছাই রঙের পুষি, খিদের চোটে তুই তো ইঁদুর ধরে বেড়াস, হঠাৎ আমার কাছে এগিয়ে এসে ঐখানে দাঁড়িয়ে যে জিজ্ঞেস করলি আমি কেমন আছি, এর মানেটা কী? তুই কী শিখেছিস, আর কতরকম কায়দাই বা জানিস?

    বেড়াল ভালোমানুষের মত বললে— আমি শুধু একটা কায়দাই জানি।

    —শুনি সে কায়দাটা কী?

    বেড়াল বললে— শিকারী কুকুর যদি আমায় তাড়া করে তাহলে আমি লাফিয়ে গাছে উঠে পালিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারি।

    শেয়াল বললে— শুধু এই? আমি তো একশো রকমের কায়দা জানি! তা ছাড়া একথলি চালাকিও আমার কাছে আছে। কিন্তু তোর কথা ভেবে, মেনি, দুঃখ হয়। তুই আমার সঙ্গে আয়— তোকে দেখিয়ে দেব কেমন করে মানুষ আর শিকারী কুকুর দুইকেই ঠকাতে হয়।

    সেই সময় দেখা গেল একজন শিকারী চারটে শিকারী কুকুর নিয়ে এগিয়ে আসছে। বেড়ালটা অনায়াসে একটা গাছে লাফিয়ে উঠে সবচেয়ে উঁচু ডালে চড়ে বসে রইল। ঘন পাতার আড়ালে একেবারে ঢাকা পড়ে গেল সে।

    বেড়াল উপর থেকে বললে— আপনার থলি থেকে কিছু চালাকি বার করুন শেয়াল মশাই, আপনার থলি থেকে কিছু কায়দা কানুন বার করুন! কিন্তু কুকুররা তার আগেই তাকে ধরে ফেলল। শেয়াল আর পালাতেই পারলে না।

    বেড়াল চেঁচিয়ে বললে— হায় শেয়াল মশাই, আপনার একশো কায়দা তো আপনার কোনোই কাজে লাগল না! আপনি যদি আমার মত অন্তত একটি কায়দা জানতেন তাহলে এত তাড়াতাড়ি আপনার জীবন নষ্ট হত না।

    টীকা