Chapter Index

    বিমান বলল, আরে সন্তু, তুই এত ঘাবড়াচ্ছিস কেন? কাকাবাবু তো চিঠিতে লিখেছেন সিদ্ধাৰ্থদাকে সঙ্গে নিয়ে না যেতে। আমাদের কথা তো বারুণ করেননি। তাছাড়া আমি তো সেই সেন্সে ঠিক টেকনিক্যালি সরকারি লোক নই!
    সন্তু মুখ গোঁজ করে বলল, যাই বলো বিমানদা, চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে কাকাবাবু আমাকে একলাই যেতে বলেছেন। অন্য কারুর সাহায্য নেবার দরকার হলে তা নিশ্চয়ই জানাতেন।
    বিমান বলল, তুই কিছু বুঝিস না। বন্দী অবস্থায় কেউ আত কিছু লিখতে পারে? ঐ যে কাকাবাবু লিখেছেন না এরা আমাকে খুব যত্নে রেখেছে, তার মানে কী বুঝলি তো? দুপাশে দুজন লোক লাইট মেশিনগান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?
    রিনি বলল, আমি তো যাবই! শুধু ছেলেরাই বুঝি এক-একা অ্যাডভেঞ্চার করবে।
    বিমান বলল, নিশ্চয়ই যাবি! আমি আথেন্স থেকে হুড়োহুড়ি করে চলে এলুম, তার আগেই দেখি যত সব কাণ্ড ঘটে গেছে। আমি থাকলে কি আর ওরা কাকাবাবুকে ধরে নিয়ে যেতে পারত?
    সিদ্ধাৰ্থ জিজ্ঞেস করল, তুমি থাকলে কী করতে, বিমান? শুনলেই তো যে তিনজন লোক এসেছিল, উইথ আর্মস। কাকাবাবু দুজনকে টিট করেছিলেন, কিন্তু থার্ড লোকটা ছিল সত্যিকারের টাফ।
    বিমান বলল, আমি থাকলে তাকে একখানা স্কোয়ার কাট ঝাড়তুম! জিজ্ঞেস করো না। সন্তুকে, সুন্দরবনে খালি জাহাজের রহস্য সমাধান করতে গিয়ে আমি কাটা লোককে শায়েস্তা করেছিলুম।
    সন্তুর এসব কথাবার্তা একদম পছন্দ হচ্ছে না। সে ছটফট করছে। কখন বেরিয়ে পড়বে।
    আগের দিন কাকাবাবুকে ধরে নিয়ে যাবার পর সন্তু আর মান্টোসাহেব এক ঘণ্টার আগে ছাড়া পায়নি। দশ মিনিট পরে ওরা রিসেপশনে ফোন করেছিল, কেউ উত্তর দেয়নি। সে এক বিতিকিচ্ছরি অবস্থা। শেষ পর্যন্ত এক ঝাড়ুদার দরজা খুলে দিয়েছিল।
    মন্টোসাহেব একটু পরেই চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু সন্তু চুপচাপ বসে ছিল ঘরের মধ্যে। সেইরকমই ছিল কাকাবাবুর নির্দেশ।
    সন্ধেবেলা সিদ্ধার্থ এসে সব শুনে হতবাক। এরই মধ্যে কাকাবাবুকে গুম। করেছে? দিনদুপুরে? সিদ্ধার্থ তক্ষুনি একটা হৈচৈ বাধিয়ে তুলতে চেয়েছিল, কিন্তু সন্তু তাকে নিষেধ করেছে। আগেকার অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে যে, বিপদ দেখলে একেবারে ঘাবড়ে গেলে চলে না। কাকাবাবু বলে গেছেন কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। তার মধ্যে কোনও খবর না দিলে তারপর এখানকার গভর্নমেন্টকে জানাতে হবে। এখন চুপচাপ থাকাই ভাল।
    সিদ্ধাৰ্থ সন্তুকে তখন নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, তাতেও সন্তু রাজি হয়নি। কাকাবাবু খবর পাঠাবেন এই হোটেলেই। এখানেই সন্তুকে অপেক্ষা করতে হবে। সিদ্ধাৰ্থ বলেছিল, তুমি রাত্তিরে এই হোটেলে একলা থাকবে? তা হতেই পারে না। আবার যদি হামলা হয়?
    সে-সমস্যার সমাধান হয়ে গেল একটু পরেই। রাত আটটার সময় সেই হোটেলে এসে হাজির হয়ে গেল বিমান। আথেন্স থেকে সে অন্য একটা ফ্লাইট ধরে চলে এসেছে। ঠিক হল, বিমোনই থাকবে সন্তুর সঙ্গে ঐ হোটেল-ঘরে।
    প্রায় মাঝরাত্তিরে কাকাবাবুর চিঠি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল একজন লোক। মাঝবয়েসি, মোটাসোটা গোলগাল ধরনের চেহারা। মাথাভর্তি চকচকে টাকা। দেখলে বিপ্লবী বলে মনেই হয় না।
    ভদ্রলোক বললেন, তিনি একটি কুরিয়ার সার্ভিস এজেন্সির লোক। তাঁর এক মকেল এই জরুরি চিঠি পাঠিয়েছে, এবং তাঁকে বলা হয়েছে কাল সকালে একটা উট ভাড়া করে দেবার ব্যবস্থা করে দিতে। কাল ঠিক সাড়ে এগারোটায় উট তৈরি থাকবে স্ফিংকসের সামনে। এদিককার পাটি যেন বাসে করে সেখানে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।
    বিমান সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনার মক্কেল কে? কোথা থেকে এই চিঠিটা এসেছে?
    ভদ্রলোক হেসে বলেছিলেন, তা বলা যাবে না। বিজনেস সিক্রেট। গুড নাইট!
    চিঠি পড়েই সন্তু ঠিক করেছিল সে একাই যাবে। কিন্তু বিমান ঝামেলা বাঞ্চল। সন্তুকে সে কিছুতেই একা ছাড়বে না। তা ছাড়া সে নিজেও অ্যাডভেঞ্চার করতে চায়। রিনিরও সেই একই আবদার।
    সন্তু অনেকবার আপত্তি করার পর বিমান বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে! তুই উটের পিঠে চেপে মেমফিস যাবি, আমরা বুঝি আর একটা উট ভাড়া করে তোর পাশাপাশি যেতে পারি না! অন্য টুরিস্টরা যাবে না? যে-কেউ ইচ্ছে করলে মেমফিসের পিরামিড দেখতে যেতে পারে।
    শেষ পর্যন্ত তাই ঠিক হল। ফিংকসের কাছে এসে সন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট উটে চাপল, বিমান আর রিনি বসল। আর-একটা ভাড়া-করা উটে।
    স্ফিংকস আর কাছাকাছি পিরামিডগুলোতে সকালবেলাতেই অনেক টুরিস্ট এসেছে। সন্তু সতৃষ্ণভাবে একবার স্ফিংকসের দিকে তাকাল। তার ভাল করে দেখা হল না।
    বিমান বলল, জনিস সন্তু, সন্ধেবেলা এখানে সনে-লুমিয়ের হয়। আলোর খেলাতে পুরনো মিশরের ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়।
    রিনি বলল, আমাদের দিল্লিতে লালকেল্লায় যে-রকম আছে?
    সন্তুর এসব কথায় মন লাগছে না। সে খালি ভাবছে, কখন কাকাবাবুর কাছে পৌঁছবে। সে শুনেছে, আরব গেরিলারা মানুষ খুন করতে একটুও দ্বিধা করে না।
    উটের পিঠে চাপার অভিজ্ঞতাও সন্তুর এই প্রথম। সমস্ত শরীরটা দোলে। সামনে ধুধু করছে মরুভূমি। সন্তুর হঠাৎ যেন সব ব্যাপারটাই অবিশ্বাস্য মনে হল। সে স্বপ্ন দেখছে না তো? সত্যিই কি সে উটের পিঠে চেপে মরুভূমি পার হচ্ছে?
    মনে পড়ে গেল। রবীন্দ্রনাথের কবিতা :
    ইহার চেয়ে হতাম। যদি আরব বেদুইন
    চরণতলে বিশাল মারু দিগন্তে বিলীন!
    পাশ থেকে বিমান বলল, দেখবি কাল গায়ে কীরকম ব্যথা হয়। তখন উটে চড়ার মজাটা টের পাবি। বিছানায় শোবার বদলে সারা রাত ইচ্ছে করবে: দাঁড়িয়ে থাকতে।
    রিনি জিজ্ঞেস করল, আমরা কি আজই ফিরে আসব?
    বিমান বলল, এই রে, এরই মধ্যে ফেরার চিন্তা? চল তা হলে এক্ষুনি তোকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।
    রিনি বলল, মোটেই না! আমি সে-কথা বলছি না। আমি বলছি, পৌঁছতে কতক্ষণ লাগবে?
    বিমান বলল, দুঘণ্টাও লাগতে পারে, আবার সারাদিনও লেগে যেতে পারে। উটের যেরকম মেজাজ মর্জি হবে।
    রিনি জিজ্ঞেস করল, এই সন্তু, তুই কথা বলছিস না কেন রে? তুই গোমড়া মুখে রয়েছিস সকাল থেকে.
    গতকাল এয়ারপোর্টে রিনি যে সন্তুকে অপমান করেছিল তা বোধহয় সে নিজেই ভুলে গেছে। তারপর থেকেই সন্তুর আর কথা বলার ইচ্ছে নেই রিনির সঙ্গে।
    সন্তুর উটটা যে চালাচ্ছে, তার বয়েস প্রায় সন্তুরই সমান। সে দুচারটে ইংরেজি শব্দ মোটে জানে। সন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলে, ইয়েস মাস্টার, নো মাস্টার বলে।
    ওদের দুটো উট ছাড়া আর কোনও টুরিস্ট যাচ্ছে না। উটের পিঠে চেপে। অসহ্য গরম, রোদ একেবারে গানগন করছে। এত গরমেও কিন্তু একটুও ঘাম হয় না।
    মাত্র আধা ঘণ্টা চলার পরেই মনে হল দূর থেকে একটা বিশাল কালো রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলী তেড়ে আসছে। ওদের দিকে। বিমান চেঁচিয়ে বলল, এই রে, সর্বনাশ, ঝড় আসছে!
    সন্তুর উট-চালক মুখ ঘুরিয়ে বলল, নো অ্যাফ্রেড মাস্টার! নো ডেঞ্জার!
    দুজন চালকই তাদের দুটো উটকে বসিয়ে দিল মাটিতে। সন্তুরা নেমে পড়ল। চটপট। সবাই মিলে উটের পিঠের আড়ালে বসল। বিমান বলল, ঝড়ের ধুলো একদিক থেকে আসে তো, তাই একটু আড়ালে বসলেই গায়ে কিছু লাগে না।
    সন্তু জিজ্ঞেস করল, ঘুর্ণিঝড় হয় না?
    বিমান বলল, তাও হয় মাঝে-মাঝে। তখন উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ ওঁজে থাকতে হয়। আর কান ঢাকা দিতে হয়।
    রিনি বলল, কী দারুণ লািগছে! ঠিক সিনেমার মতন। আজই ফিরে গিয়ে মাকে একটা চিঠি লিখব।
    বিমান বলল, তুই এখনও ভাবছিস আজই ফিরবি? মেমফিসে তোকে একটা রেস্ট হাউসে রেখে আমি আর সন্তু যাব কাকাবাবুর কাছে।
    রিনি বলল, আহা-হা, অত শস্তা নয়। আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে!
    এর পরেই মাথার ওপর দিয়ে ঝড় এসে গেল। অন্ধকার হয়ে গেল চারদিক, কিছুই আর দেখা যায় না। সেই প্রচণ্ড শনশন শব্দ। ওরা কান ঢেকে মুখ নিচু করে রইল, আর কথা বলারও উপায় নেই।
    সেই ঝড় যেন আর থামতেই চায় না। কতক্ষণ যে চলল তার ঠিক নেই। উট। দুটো মাঝে-মাঝে ভ-র-র-র ভ-র-র-র করে জোরে নিশ্বাস ফেলছে, শুধু সেই শব্দ ঝড়ের শব্দ ছাপিয়েও শোনা যায়।
    যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমনই হঠাৎ ঝড় শেষ হয়ে গেল এক সময়। আকাশ একেবারে পরিষ্কার।
    সন্তু উঠে দাঁড়িয়ে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। আগে মরুভূমিটা ছিল সমতল। এখন কাছাকাছি অনেকগুলো বালির পাহাড় তৈরি হয়ে গেছে। বেশি দূর পর্যন্ত আর দেখা যায় না।
    বিমান বলল, ঝড় হয়ে যাবার এই আর এক মুশকিল। এই সব স্যান্ড ডিউনস। পার হতে উটগুলোর বেশি সময় লাগে।
    আবার ওরা চেপে বসল। উটের পিঠে। আর কোনও ঘটনা ঘটল না। প্রায় দুঘণ্টা ধরে একঘেয়ে যাত্রা। তারপর দূরে দেখা গেল। কয়েকটি পিরামিডের চুড়া, আর মেমফিস শহরের চিন্তু।
    বিমান বলল, জনিস সন্তু, এই মেমফিস ছিল মিশরের প্রাচীন রাজধানী। সে প্ৰায় পাঁচ হাজার বছর আগেকার কথা। তখনও আমাদের দেশে আৰ্য-সভ্যতার জন্ম হয়নি।
    সন্তু মুখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিক দেখতে দেখতে বলল, স্টেপ পিরামিড কোথায়? ঐ তো, ঐ যে! সত্যি দেখলেই চেনা যায়।
    রিনি বলল, ঐ পিরামিডটার ছবি অনেক বইতে দেখেছি। আচ্ছা বিমানদা, বেশির ভাগ বইতে ঐ পিরামিডটার ছবিই দেয় কেন? আরও তো কত পিরামিড রয়েছে।
    বিমান বলল, কারণ এই পিরামিডটিই সবচেয়ে প্রাচীন। একেবারে প্রথম তৈরি করা হয়েছিল।
    সন্তু উটওয়ালাকে ঐ পিরামিডের দিকে যেতে বলল।
    স্টেপ পিরামিডের গায়ে ধাপে-ধাপে খাঁজ কাটা আছে। দূর থেকে সিঁড়ির মতন দেখালেও কাছে এলে বোঝা যায় ধাপগুলো অনেক উঁচু উঁচুতে। সহজে বেয়ে ওঠার উপায় নেই।
    ওরা উট থেকে নেমে দাঁড়াল। সেখানে আর কোনও লোক নেই।
    উটওয়ালা দুজন বলল, গাইড কল মাস্টার? ফিফটি পিয়াস্তা! মি গিভ ফিফটি পিয়াস্তা।
    সন্তু বলল, না, গাইডের দরকার নেই। আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে হবে।
    রিনি বলল, বাবা রে, একটাও মানুষজন নেই। আমাদের যদি এখানে মেরে পুতে রাখে, কেউ টেরও পাবে না।
    এতক্ষণ বাদে সন্তু রিনিকে বলল, অতই যদি ভয়, তা হলে কে আসতে বলেছিল তোকে?
    রিনি বলল, বেশ করেছি।  তারপর সে ছোট্ট একটা ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে লাগল। বিমান বলল, চিঠিটা জেনুইন ছিল তো? আমি কাকাবাবুর হাতের লেখা চিনি না।
    সন্তু বলল, হ্যাঁ, জেনুইন। তা ছাড়া এখানে আর কে বাংলাতে চিঠি লিখবো?
    খানিকবাদে দূর থেকে একটা জিপ আসতে দেখা গেল।
    সন্তু বলল, ঐ আসছে!
    রিনি বলল, মরুভূমিতে যদি জিপগাড়ি চলে, তা হলে আর উটে চড়বার দরকার কী? আমার বিচ্ছিরি লেগেছে?
    জিপটা কাছে এসে থামতেই তার থেকে একজন বলশালী লোক নামল। লোকটি যত না লম্বা, তার চেয়ে বেশি চওড়া।
    সে প্রথমেই সন্তুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, সোনটু? সোনটু? মি ডাগো আবদাল্লা। মি কাম ফ্রম রায়চৌধুরী। ইউ কাম উইথ মি
    বিমান বলল, তোমার কাছে রায়চৌধুরীর কোনও চিঠি আছে?
    ডাগো আবদাল্লা মাথা নেড়ে জানাল, না।
    বিমান বলল, তা হলে আমরা কী করে বিশ্বাস করব?
    আচমকা যে-রকম মরুভূমিতে ঝড় উঠেছিল, ঠিক সেইরকমভাবে আচমকা একটা সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড ঘটল।
    স্টেপ পিরামিডের আড়াল থেকে খুব জোরে ছুটে এল একটা স্টেশন ওয়াগন। বিকট শব্দ করে সেটা ব্রেক কষল ডাগে আবদাল্লার ঠিক পেছনে। চাপা পড়বার ভয়ে ডাগো একটা লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পাশের দিকে।
    গাড়ি থেকে টপটপ করে নেমে পড়ল। চারজন লোক। তাদের প্রত্যেকের হাতে রাইফেল। তাদের মধ্যে একজন অতিকায় চেহারার লোক প্ৰায় এক হাতেই সন্তুকে একটা বেড়ালছানার মতন উঁচুতে তুলে নিয়ে গিয়ে ছুঁড়ে দিল গাড়ির মধ্যে।
    রিনি ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
    একজন লোক বিমানের দিকে ফিরে বলল, ইউ গো ব্যাক।
    আর-একজন লোক মাটিতে পড়ে থাকা ডাগো আবদাল্লার পিঠের ওপর নিজের বুটজুতোসুন্ধু পা তুলে দিয়েছে। কর্কশ গলায় সে বলল, হেই ডাগো, ইউ ওয়ান্ট টু ডাই?
    রাগে, অপমানে ডাগো আবদাল্লার মুখখানা অদ্ভুত হয়ে গেছে। মানুষটার অতবড় চেহারা, কিন্তু চারখানা রাইফেলের বিরুদ্ধে সে কী করবে! ডাগো যে জিপে এসেছে, তাতে রয়েছে শুধু একজন ড্রাইভার। তার দিকেও একজন রাইফেল উঁচিয়ে আছে।
    ডাগোর পিঠে যে পা তুলে আছে, সে আবার জিজ্ঞেস করল, ডাগো, তুই মরতে চাস? আমি ঠিক পাঁচ গুনব।
    ডাগো ফিসফিস করে বলল, নো, এফেন্দি!
    লোকটি পাটা সরিয়ে নিয়ে পকেট থেকে একটা কাগজ বার করল। সেটা ডাগোর মুখের সামনে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, এটা তোর মালিককে দিবি। বলবি, বারো ঘণ্টার মধ্যে উত্তর চাই।
    ডাগো আস্তে-আস্তে মাটি থেকে উঠল। দুটো রাইফেল তাক করা রয়েছে। তার দিকে। চিঠিটা হাতে নিয়ে সে আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে জিপে উঠল।
    একজন হুকুম দিল, স্টার্ট! জিপটা চলতে শুরু করার পরেও কিছুক্ষণ রাইফেলের নল তোলা রইল সেদিকে।
    জিপটা চোখের আড়ালে চলে যাবার পর ওরা বিমান আর রিনির দিকে ফিরল। রিনি মুখে হাত চাপা দিয়ে আছে, তার সারা শরীর কাঁপছে। বিমান তাকিয়ে আছে। অসহায়ভাবে। সন্তুকে নেবার জন্য দুটো দলের লোক এসেছে। এর মধ্যে কারা যে কোন দলের, তা সে বুঝতে পারছে না। তার নিজেরও কিছুই করার নেই। সুন্দরবনের ডাকাতদের সঙ্গে লড়াই করা আর আরব গেরিলাদের সঙ্গে লড়াই করা তো এক কথা নয়। এরা প্লেন ধবংস করে, ডিনামাইট দিয়ে গোটা বাড়ি উড়িয়ে দেয়।
    রাইফেলের নল দোলাতে দোলাতে একজন বলল, গেট গোয়িং! গেট গোয়িং?
    রিনির হাত ধরে বিমান এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেল। ওদের উটওয়ালা ততক্ষণে তার উটটাকে বসিয়ে ফেলেছে। বিমান রিনিকে নিয়ে চেপে বসল। উটের পিঠে।
    ওদের একজন এবার অকারণেই আকাশের দিকে রাইফেল তুলে একবার ট্রিগার টিপল। সেই আওয়াজে উট দুটোই দৌড় দিল তড়বড়িয়ে।
    স্টেশান ওয়াগনটা সন্তুকে নিয়ে চলে গেল উল্টো দিকে।
     
    ওদিকে হানি আলকাদি কাকাবাবুর অভিযানের সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। উটের বদলে কাকাবাবু যাবেন গাড়িতে, তাতে সময় বাঁচবে। হানি আলকাদিও যাবে অন্য একটি গাড়িতে। কাকাবাবুর সঙ্গে তার শর্ত হয়েছে যে, হানি আলকাদি তার দলবল নিয়ে অপেক্ষা করবে। গিজাতে। সেখান থেকে সে আর এগুতে পারবে না। কাকাবাবুর সঙ্গে শুধু যাবে সন্তু আর ডাগো আবদাল্লা। কাকাবাবু যদি চার ঘণ্টার মধ্যে ফিরে না আসেন, তা হলে হানি আলকাদি তাঁর খোঁজ নিতে যাবেন।
    সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাকাবাবু একই কাটিয়েছেন। হানি আলকাদির দেখা পাওয়া যায়নি। অন্য লোকজনও বিশেষ কেউ ছিল না মনে হয়। সন্ধের দিকে এক-এক করে সব আসতে লাগল। এরা বিপ্লবী হলেও দিনের বেলায় নিশ্চয়ই অন্য কাজ করে।
    অন্ধকার হয়ে আসার পর কয়েকটা মশাল জ্বালা হল চত্বরে। কাকাবাবু বাইরেই চেয়ার পেতে বসে ছিলেন, এক সময় সেখানে হাতে একটা মশাল নিয়ে উপস্থিত হল হানি আলকাদি। আজ তাকে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। জলপাই-সবুজ রঙের পোশাক পরা, মাথার চুলে একটা রিবন বাঁধা। চোখ দুটো একেবারে ঝকঝকি করছে।
    হাসিমুখে সে বলল, হ্যালো, প্রফেসার! হাউ আর ইউ দিস ইভনিং?
    কাকাবাবুও হেসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা অনেকেই আমাকে প্রফেসার বলো কেন? আমি তো কখনও কোনও কলেজে পড়ইনি!
    হানি আলকাদি বলল, ওঃ হে! আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, আমাদের এখানে অনেক কলেজেই আগে ইন্ডিয়ান প্রফেসাররা পড়াতেন। সেইজন্য কোনও ডিগনিফাইড চেহারার ইন্ডিয়ান দেখলেই আমাদের প্রফেসার মনে হয়। যাই হোক, তুমি এক-একা বিরক্ত হয়ে যাওনি তো? বাইরে বসে আকাশের রং-ফেরা দেখছিলে?
    সূর্যাস্তের সময় এখানকার আকাশ সত্যি বড় অপূর্ব দেখায়। দুপুরে একবার ঝড় উঠেছিল, তারপর আকাশ আবার ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে গেল!
    মিঃ রায়চৌধুরী, একটা কথা বলতে পারেন? পৃথিবীর থেকে আকাশের রং আমার বেশি সুন্দর লাগে। আকাশে নীল, সাদা, লাল, সোনালি, রুপোলি, কালো সব রং-ই দেখা যায়। কিন্তু সবুজ রং কখনও দেখা যায় না কেন? আমি প্রায়ই এ কথাটা ভাবি।
    কাকাবাবু জোরে হেসে ফেললেন, তারপর বললেন, তোমাকে দেখার আগে তোমার সম্পর্কে কত কথাই শুনেছিলাম। তুমি নাকি সাঙ্ঘাতিক এক বিপ্লবী, ভয়ংকর নিষ্ঠুর। এখন তো দেখছি তুমি একটি স্বপ্ন-দেখা নরম স্বভাবের যুবক।
    হানি আলকাদি একটু লজ্জা পেয়ে বলল, যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে জানে না, তারা কী করে বিপ্লবী হবে?
    তারপর হাতঘড়ি দেখে বলল, ইয়োর নেফিউ গুড বি হিয়ার এনি মিনিট। তুমি কি আজ রাত্তিরেই বেরিয়ে পড়তে চাও?
    কাকাবাবু বললেন, যতটা এগিয়ে থাকা যায়, ততটাই ভাল। কাল ভোর থেকে কাজ শুরু করা যেতে পারে।
    মশালটা বালিতে গেথে হানি আলকাদি, একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, মুফতি মহম্মদ ছবির উইলে কী লিখে গেছেন, তা জানার জন্য আমার খুবই কৌতূহল হচ্ছে। তুমি তা বলবে না, না?
    কাকাবাবু মাথা নেড়ে বললেন, আর একটু ধৈর্য ধরো।
    এই সময় গাড়ির শব্দ হতেই দুজনে উৎকৰ্ণ হয়ে উঠল।
    গাড়িটা থামতেই ডাগো আবদাল্লা ছুটে এল ওদের দিকে। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল।
    অতবড় চেহারার একটি লোককে শিশুর মতন কাঁদতে দেখে কাকাবাবু প্রথমে অবাক হলেও সঙ্গে-সঙ্গে বুঝে গেলেন কী ঘটেছে।
    হানি আলকাদি প্ৰায় লাফিয়ে উঠে তীব্র গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? ছেলেটাকে আনিসনি?
    ডাগো আবদাল্লা বলল, আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও, এফেন্দি! আমার চোখের সামনে থেকে ছেলেটাকে কেড়ে নিয়ে গেল। আমি কিছুই করতে পারিনি। ওদের চারটে রাইফেল ছিল।
    হানি আলকাদি চিৎকার করে বলল, বেওকুফ, আগে বল, কারা নিয়ে গেছে! তুই তাদের চিনেছিস? কাদের এত সাহস যে, আমার লোকের ওপর হাত দেয়?
    ডাগো আবদাল্লা বলল, হ্যাঁ চিনি, এফেন্দি। ওরাও আমাকে চিনেছে। আমার নাম ধরে ডাকল। ওরা আল মামুনের লোক।
    হানি আলকাদির সুন্দর মুখখানা এবারে রাগে একেবারে হিংস্র হয়ে উঠল। সে ডাগো আবদাল্লার চুলের মুঠি ধরে বলল, সেই কুকুরটা তোর সামনে থেকে ছেলেটাকে নিয়ে গেল, তুই বেঁচে ফিরে এলি? ওদের একটাকেও তুই খতম করেছিস? আল মামুন! আজি আমি ওকে শেষ করে দেব। নিজের হাতে ওকে একটু-একটু করে কাটব।
    ডাগোকে ছেড়ে দিয়ে হানি আলকাদি হাততালি দিয়ে নিজের লোকদের ডাকতে লাগল।
    ডাগো বলল, একটা চিঠি দিয়েছে। বলেছে, বারো ঘণ্টার মধ্যে উত্তর চাই।
    কাকাবাবু আরবি ভাষা মোটামুটি জানেন। ওদের কথাবার্তা প্ৰায় সবটাই বুঝতে পারছিলেন। এবারে হাত বাড়িয়ে বললেন, দেখি চিঠিটা।
    চিঠিখানা কাকাবাবুকে উদ্দেশ করে লেখা নয়। লিখেছে। হানি আলকাদিকে। চিঠিটা এই রকম :
    আল মামুন নিজে হানি আলকাদির মতন একজন নগণ্য, নিবেধি লোককে চিঠি লেখার যোগ্য মনে করে না। আল মামুন তার দলের একজন লোক মারফত জানাচ্ছে যে, মিঃ রাজা রায়চৌধুরীকে বন্দী করে রাখার কোনও অধিকার হানি আলকাদির নেই। মিঃ রাজা রায়চৌধুরী আল মামুনের লোক। আল মামুনের কাছেই তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মুফতি মহম্মদের উত্তরাধিকারী আল মামুন, তার কথা সবাই মান্য করবে। যে আল মামুনের অবাধ্য হবে, সে শান্তি পাবে। হানি আলকাদি যদি ১২ ঘণ্টার মধ্যে আল মামুনের আদেশ না পালন করে, তা হলে সে কঠিন শাস্তি পাবে। মিঃ রাজা রায়চৌধুরীকে যেন জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ১২ ঘণ্টা পার হলে তাঁর ভাইপো খুন হবে, তার মৃতদেহ কেউ খুঁজে পাবে না। নিবেধি হানি আলকাদি যেন আরও বেশি নিবোঁধের মতন কাজ না করে।
    চিঠিটা পড়ার সময় কাকাবাবু কোনও উত্তেজনার চিন্তু দেখালেন না। শান্তভাবে চিঠিটা এগিয়ে দিলেন হানি আলকাদির দিকে।
    হানি আলকাদি চিঠিটা পড়তে পড়তে যেন লাফাতে লাগল। পড়া হয়ে গেলে কাগজটা গোল্লা পাকিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তার ওপরে লাথি কষাল কয়েকটা। সেই সঙ্গে সঙ্গে বলতে লাগল, একটা আলুর বস্তার ইদুর! বাঁধা কপির পোকা! নর্দমার আরশোলা ঐ আল মামুনটাকে আমি টিপে মেরে ফেলব! আজ রাতে আমার ফোর্স নিয়ে গিয়ে ঐ বাঁদরের গায়ের উকুনটাকে আমি সবংশে শেষ করব।
    কাকাবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, হানি আলকাদি, এখন চ্যাঁচামেচি করার সময় নয়, আমি তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই!
    হানি আলকাদি এগিয়ে আসতে-আসতে বলল, তুমি চিন্তা কোরো না, রায়চৌধুরী, হানি আলকাদি যখন রেগে গেছে, তখন আল মামুন আজই খতম। হবে। মরুভূমিতে বালি আজ আল মামুনের রক্ত শুষিবে! বাজপাখিরা আল মামুনের হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে খাবে।
    কোমর থেকে সে এমনভাবে রিভলভার বার করল, যেন আল মামুন তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, এক্ষুনি সে গুলি করবে।
    এর মধ্যে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে চারপাশে। তারা ডাগো আবদাল্লার কাছ থেকে ঘটনোটা শুনছে।
    কাকাবাবু হানি আলকাদিকে জিজ্ঞেস করলেন, শোনো, আল মামুনকে তো আমি ব্যবসায়ী বলেই জানতাম। কিন্তু তারও কি তোমার মতন দল আছে নাকি? সে এত রাইফেলধারী পেল কোথায়?
    আছে একটা ছোট দল। সে এমন কিছু না। আমার দলে হাজার-হাজার লোক আছে। ওকে আমরা, এই দ্যাখো, এইরকমভাবে একটা মুর্গির মতন জবাই করব?
    তোমাদের দুদলের কি আগে থেকেই ঝগড়া ছিল?
    ওর দলকে আমরা গ্ৰাহাই করি না। ওরা দল ধর্মীয় গোঁড়ামি ছড়াতে চায়, আর আমার দল চায় দেশের সব মানুষের উন্নতি।
    এর আগে আমরা ওদের নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কিন্তু আল মামুনের দল যদি আমার পথে বাধা সৃষ্টি করে, তা হলে আমি ওদের শেষ করে দেব। মুফতি মহম্মদের উত্তরাধিকারী ওকে কে করেছে? আমিই মুফতি মহম্মদের আসল উত্তরাধিকারী।
    আল মামুন বুদ্ধিমান লোক। আমার ভাইপো সন্তুকে সে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, তুমি কী করে খুঁজে বার করবে?
    আমার হাত ছাড়িয়ে পালাবার ক্ষমতা আছে আল মামুনের? আমি আগে ওর মাথার খুলটা গুঁড়ো করে দেব।
    তার আগেই যদি ওরা সন্তুকে মেরে ফেলে?
    তুমি অযথা চিন্তা কোরো না, রায়চৌধুরী…
    হ্যাঁ, চিন্তা আমাকে করতেই হবে। তোমাদের দুদলের ঝগড়ার মধ্যে আমি জড়িয়ে পড়তে চাই না। আল মামুন মাত্র বারো ঘণ্টা সময় দিয়েছে। তার শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই!
    অ্যাঁ? কী বলছি তুমি? ঐ শয়তানের দাঁতের ময়লাটা ভয় দেখালেই আমরা ভয় পেয়ে যাব? তা হতেই পারে না?
    মাত্ৰ বারো ঘণ্টা সময়। এর মধ্যেই সন্তুকে আমি ফেরত চাই। কোনও কুঁকি নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শোনো, আমি দুটো উপায় ভেবেছি। এক হচ্ছে, আমাকে ফেরত পাঠানো। আল মামুন তার চিঠিতে শুধু আমাকেই ফেরত দিতে বলেছে। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও
    মিঃ রায়চৌধুরী, তোমাকে আমি সাহসী মানুষ বলে ভেবেছিলুম। আল মামুনের হুমকি তুমি মেনে নেবে? তুমি কি ওর ক্রীতদাস? তোমাকে ও হাফ মিলিয়ান ইন্ডিয়ান টাকা দিতে চেয়েছিল, তুমি তা নাওনি, সে খবরও আমি জানি?
    শোনো হানি আলকাদি। ঐ সন্তু ছেলেটাকে আমি বড় ভালবাসি। ওর কোনও ক্ষতি হলে আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না। তোমার দলের এত শক্তি, তবু তোমরা আমার ভাইপাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করতে পারলে না, মাঝপথ থেকে ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। ওকে বাঁচাবার জন্য আমাকে ফিরে যেতে হবে।
    যদি আমরা তোমাকে না ছাড়ি? আল মামুনের হুকুম আমি কিছুতেই মানব না!
    তোমাদের দুই দলের ঝগড়ার জন্য আমার ভাইপোেটা মারা যাবে? হানি আলকাদি, তোমাকে দেখে আমি যা বুঝেছি, তুমি বীর, তুমি লড়াই করতে ভালবাস, কিন্তু কোনও ছোট ছেলেকে নিশ্চয়ই তুমি কোনওদিন মারতে পারবে না! কিন্তু আল মামুন তা পারে।
    তুমি দুটো উপায়ের কথা বলছিলে। দ্বিতীয়টা কী?
    আল মামুনকে তুমি একটা চিঠি লেখো। সে যেমন তোমাকে ধমকিয়েছে। আর গালাগালি দিয়েছে, সেই রকম তুমি যত খুশি ধমক আর গালাগালি দাও। সেই সঙ্গে লেখো যে, সন্তুকে আজ রাতের মধ্যেই এখানে ফেরত পাঠাতে হবে। মুফতি মহম্মদের শেষ ইচ্ছে। যাচাই করতে গিয়ে যদি আমি কোনও ধন-সম্পদের সন্ধান পাই, তা হলে তুমি তার অর্ধেক আল মামুনকে দেবে! তুমি আরব যোদ্ধা, তোমার কথার দাম আছে। তুমি কথা দিলে নিশ্চয়ই তা রাখবে।
    অসম্ভব! অসম্ভব! অসম্ভব! মুফতি মহম্মদ বিপ্লবী নেতা ছিলেন। বিপ্লবী দলের জন্যই তিনি টাকাপয়সা সংগ্ৰহ করেছিলেন। তাঁর সেইসব জিনিস এখানকার বিপ্লবী দলই পাবে। আল মামুনটা কে? একটা অৰ্থলোভী শয়তান।
    হয়তো টাকা পয়সা কিছুই নেই। তোমরা এমনি-এমনি ঝগড়া করছ!
    নিশ্চয়ই আছে। থাকতে বাধ্য!
    শোনো, আমার সাহায্য যদি চাও, তা হলে আমার কথা মানতেই হবে। তুমি কি এটা বোঝোনি যে, আমি যদি নিজে থেকে বলতে না চাই, তা হলে আমাকে খুন করে ফেললেও আমি মুখ খুলব না।
    আল মামুনকে টাকাপয়সার ভাগ দিলে আমার দলের লোকরা রেগে যাবে।
    দলের লোকদের বোঝাও! সন্তুকে যদি বাঁচাতে না পারো, তা হলে তোমরা কিছুই পাবে না! সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডাগো আবদাল্লার হাতে এক্ষুনি চিঠি লিখে স্টেপ পিরামিডের কাছে পাঠাও
    হানি আলকাদির মুখখানা কুঁকড়ে গেছে। আল মামুনকে হত্যা করার বদলে তাকে টাকা পয়সার ভাগ দিতে হবে, এই ব্যাপারটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তার মনের মধ্যে অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে।
    কাকাবাবু তার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, শূন্যকে যদি দুভাগ করা যায়? মনে করে, মুফতি মহম্মদের ধনসম্পদ শূন্য। তার অর্ধেক আল মামুনকে দিতে তুমি আপত্তি করছ, কেন?
    হানি আলকাদি পাশ ফিরে তার দলের একজন লোককে বলল, এই চিঠি লেখার কাগজ আর কলম নিয়ে এসো।

    টীকা