Chapter Index

    পরের দিনই দ্বিপ্রহরে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেল।

    কিরীটীর অনুমান মিথ্যা নয়। শ্বাস-বন্ধ করেই কালী সরকারের মৃত্যু
    ঘটানো হয়েছে-জলে ড়ুবে তার মৃত্যু হয়নি।

    রিপোর্টটা নিয়ে এসেছিল মহান্তিই।

    সে বলে, শেষ পর্যন্ত মনের মধ্যে সত্যিই কিন্তু একটু সন্দেহ ছিল
    মিঃ রায়। হয়ত স্ট্যাঙ্গুলেশান নয়। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি আপনার অনুমানটা একেবারে
    নির্ভুল। এবং আরও একটা সংবাদ আছে মিঃ রায়

    কী? কিরীটী মহান্তির মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।

    লতিকা গুঁই নিরুদ্দেশ হয়েছে।

    আমি বলি, সে কি! কোথায় গেল জানতে পারলেন না কিছু?

    না। আজ সকাল থেকে তার কোন পাত্তা নেই। কাল রাত্রেও এগারটার সময় হোটেলের
    চাকর তাকে তার ঘরে দেখেছিল। আজ সকালে আর তাকে নাকি দেখা যায়নি। সুটকেস আর বিছানাটা
    ঘরের মধ্যে আছে এবং ঘরের বাইরে থেকে তালা দেওয়া।

    কিরীটী এবারে কথা বলে, রাত এগারটা পর্যন্ত তাহলে সে হোটেলে ছিল?

    হ্যাঁ। রাত দশটার সময় নাকি রেণুকা বিশ্বাস তার সঙ্গে দেখা করতে যায়
    ঐ হোটেলে।

    কে কে গিয়েছিল দেখা করতে? কিরীটী উদগ্রীব হয়ে ওঠে।

    রেণুকা বিশ্বাস।

    হুঁ। তাহলে রেণুকা বিশ্বাস নিশ্চয় জানে লতিকা গুঁই কোথায়। চলুন,
    এখনি একবার সী-সাইড হোটেলে যাব।

    এখুনি যাবেন?

    আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। খবরটা আপনি কখন জানতে পারেন যে লতিকা
    গুঁই চলে গিয়েছে?

    সকালেই। যে লোকটা হোটেলের সামনে প্রহরায় ছিল তার কাছে।

    রাত্রে সেই হোটেলের সামনে কেউ প্রহরায় ছিল না। ছিল।

    কিন্তু সে বলছে একমাত্র রেণুকা বিশ্বাস ছাড়া রাত দশটার পর কাউকে হোটেলে
    যেতে বা আসতে দেখেনি।

    হোটেল থেকে বেরুবার অন্য কোন রাস্তা নেই?

    আছে। পিছনের দিকে মেথরদের যাতায়াতের রাস্তা।

    তাহলে সেই রাস্তা দিয়েই সে সরে পড়েছে।

    আপনার কোনো রকম কিছু সন্দেহ হয় মিঃ রায়?

    সী-সাইড হোটেলের দিকে যেতে যেতে মহান্তি কিরীটীকে প্রশ্নটা করে।
    কিরীটী চলতে চলতেই বলে, কি সন্দেহ?

    ঐ লতিকা গুঁই কালী সরকারের হত্যার ব্যাপারে

    সন্দেহের তালিকার মধ্যে লতিকা গুঁই তো অন্যতমা, কথাটা ভুলে
    যাচ্ছেন কেন মিঃ মহান্তি?

    .

    হরডন বিশ্বাস হোটেলে ছিল না, বাজারে গিয়েছিল।

    তবে রেণুকা বিশ্বাস ছিল।

    সে তার ঘরের মধ্যে একটা চেয়ারে বসে কাঁটা দিয়ে লেসের মত কি একটা
    বুনছিল আর তার পাশে বসেছিল ছাব্বিশ-সাতাশ বৎসরের একটি সুশ্রী যুবক।

    মহান্তিই দরজার বাইরে থেকে গলার সাড়া দেয়, ভিতরে আসতে পারি? কে?

    আমি মহান্তি।

    কে?

    আসুন।

    আমরা ভিতরে ঢুকতেই যুবকটি উঠে দাঁড়ায়।

    এই ছেলেটি কে মিসেস বিশ্বাস? মহান্তিই প্রশ্ন করে।

    রেণুকা বিশ্বাস বলে, সাধন সরকার। কালী সরকারের ভাইপো। আমাদের
    টেলিফোন পেয়ে আজই সকালের এক্সপ্রেসে এসেছে। তুমি যাও সাধন, তোমার ঘরে যাও।

    কিরীটী তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, সাধনবাবু, হোটেলের বাইরে যাবেন না কিন্তু
    আপনি, ঘরেই থাকবেন। আপনার সঙ্গে আমাদের কথা আছে। আমরা আপনার ঘরে আসছি একটু পরেই।

    সাধন সরকার কোন জবাব দিল না। নিঃশব্দে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    সাধন সরকার ঘর ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেণুকা বিশ্বাসও উঠে দাঁড়ায়
    এবং বলে, তাহলে আপনারা একটু বসুন মহাতি সাহেব, আপনাদের চায়ের কথাটা বলি

    কিন্তু কিরীটী রেণুকাকে কথাটা শেষ করতে দেয় না, তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে
    বলে ওঠে, মিসেস বিশ্বাস, ব্যস্ত হবেন না। চায়ের আপাততঃ আমাদের কোন প্রয়োজন নেই।

    কিরীটীর কণ্ঠস্বরে একটা যেন চমকেই রেণুকা বিশ্বাস কিরীটীর মুখের
    দিকে তাকাল। আপনি বরং ঘরের দরজা ভেজিয়ে দিন। আপনার সঙ্গে আমাদের কিছু কথা আছে।
    কথা? আমার সঙ্গে? রেণুকার গলার স্বরে বিস্ময়।

    হ্যাঁ।

    বলুন?

    আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আজ সকাল থেকে লতিকা দেবী নিখোঁজ।

    না তো—

    জানেন না?

    না। তাছাড়া লতিকার সঙ্গে আমার সম্পর্কই বা কি? সে নিখোঁজ হল কি না
    হল সে খবর রাখতে যাব–

    কিন্তু একটা খবর আমরা যে পেয়েছি মিসেস বিশ্বাস—

    কি খবর পেয়েছেন?

    আপনি নাকি কাল লতিকা দেবীর হোটেলে রাত দশটার পর তার সঙ্গে দেখা
    করতে গিয়েছিলেন। কেন গিয়েছিলেন?

    কি বলছেন আবোল-তাবোল? লতিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি আমি কাল
    রাত্রে দশটার পর?

    যাননি আপনি?

    নিশ্চয়ই না।

    কিন্তু আপনাকে আমাদের লোক দেখেছে। মহান্তি বলে এবারে।

    মাথা খারাপ! কাকে দেখতে কাকে দেখেছে আপনার লোক।

    কিরীটী কথা বলে, আপনি তাহলে যাননি?

    নিশ্চয়ই না।

    আর ইউ সিয়ের?

    নিশ্চয়ই।

    কাল রাত্রে তবে ঐ সময় কোথায় ছিলেন?

    কেন, এখানে আমার নিজের হোটলে! রাত আটটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত
    বোর্ডারদের খাওয়া-দাওয়ার পাট না চোকা পর্যন্ত আমার কি নিঃশ্বাস ফেলবারও সময় থাকে।

    সাড়ে দশটার পর?

    হোটেলেই ছিলাম।

    হঠাৎ এবারে কিরীটী তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে, একটা কথা আপনার জানা দরকার
    মিসেস বিশ্বাস, কালী সরকারকে সত্যি সত্যিই শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।

    তাই নাকি!

    হ্যাঁ,
    কিন্তু সে কথা যাক। আপনাকে আরো আমার জিজ্ঞাস্য আছে।

    বলুন?

    কালী সরকারের ঘরে রোজ রাত্রে স্টেকে ব্রীজ খেলা হত- কে কে খেলত
    জানেন?

    কালী সরকার ব্রীজ খেলতেন, কথাটা আপনার কাছেই এই প্রথম শুনছি!

    তাই নাকি?

    কিরীটী মিসেস রেণুকা বিশ্বাসের দিকে তাকাল। আমি তো তাকিয়েই ছিলাম
    রেণুকার মুখের দিকে। একান্ত নির্বিকার ভাবলেশশূন্য মুখ। কোন একটা রেখার কুঞ্চন বা
    কম্প মাত্রও সেখানে যেন নেই। কিরীটী একটু থেমে বলে, তাহলে আপনি বলতে চান মিসেস
    বিশ্বাস, কালী সরকার ব্রীজ কোনদিনই খেলেনি বা জানত না খেলতে?

    তা তো আমি বলিনি মিঃ রায়, আমি বলেছি তাকে হোটেলে কখনও খেলতে
    দেখিনি।

    কি করে বুঝলেন? তাকে কি দিবারাত্র সদাসর্বদা পাহারায় রাখতেন নাকি
    আপনি মিসেস বিশ্বাস যে তিনি হোটেলে তার ঘরে খেলতেন না সে বিষয়ে আপনি এত definite হলেন?

    এবারে যেন মিসেস বিশ্বাসকে একটু কেমন ব্রিত বলে মনে হয়। কেমন যেন
    একটু থমকে গিয়েছেন।

    কিরীটী আবার বলে, শুনুন মিসেস বিশ্বাস, সত্যকে গায়ের জোরে কখনও উড়িয়ে
    দেওয়া যায় না। জানি না বলে আপনি ভান করতে পারেন, কিন্তু জানবেন সত্য যা একদিন তা প্রকাশ পাবেই।
    যাক, আপনি তার ব্রিজ খেলা সম্পর্কে জ্ঞাত না হলেও একটা কথা কিন্তু সেদিন সত্য
    বলেননি–

    সত্য বলিনি? কী কথা?

    একসময় যে আপনার ঐ কালী সরকারের সঙ্গে যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল সেই
    কথাটা–

    কে বললে?

    কেন, দুজন বলেছেন!

    দুজন?

    হ্যাঁ, লতিকা গুঁই ও আপনার হাজব্যাণ্ড মিঃ হরডন বিশ্বাস।

    কিরীটীর মুখ থেকে কথাটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেণুকা
    বিশ্বাস ওর মুখের দিকে তাকায় এবং কয়েক মুহূর্ত নিঃশব্দে তাকিয়ে থেকে বলে, কি জানতে
    চান আপনি মিঃ রায়, বলুন তো? হোয়াট আর ইউ ড্রাইভিং অ্যাট?

    আমার কথাটা তো অস্পষ্ট নয় মিসেস বিশ্বাস। আপনার সঙ্গে একসময় তার
    যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। এবং ছিল কিনা সেটাই আমি জানতে চাইছি।

    দেখুন প্রশ্নটা আপনার অত্যন্ত ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্ছে না, মিঃ রায়।
    মিসেস বিশ্বাসের কণ্ঠস্বরে যেন বেশ বিরক্তির সুর।

    নিশ্চয়ই হচ্ছে। কিন্তু এটাও নিশ্চয় ভুলে যাবেন না আপনি মিসেস
    বিশ্বাস, আমরা একটা মার্ডার কেসের তদন্ত করছি। এবং সেই মার্ডারটা আপনারই এই হোটেলের
    মধ্যে একটা ঘরে হয়েছে। কিরীটীর কণ্ঠস্বরটাও যেন কঠিন বলে মনে হয়।

    কি বলতে চান আপনি? আমার হোটেলে মার্ডার হয়েছে মানে?

    আপনার হোটেলেই মার্ডারড হয়েছে কালী সরকার সেরাত্রে। তারপর তাকে
    হত্যা করে মৃতদেহটা সুইসাইড প্রমাণ করবার জন্য সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

    না, না। আপনি–

    শুনুন মিসেস বিশ্বাস, সেরাত্রে ঠিক যা ঘটেছে তাই বললাম। এবং আপনিও যে সেটা জানেন না তাও
    নয়।

    আমি–

    হ্যাঁ, আপনিও সেটা জানেন। শুনুন, যে রাত্রে কালী সরকার মার্ডার হয়,
    অনুমান রাত একটায় এবং সম্ভবতঃ তাকে নিদ্রার ঘোরে ফাস দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল—

    গলায় ফাঁস দিয়ে?

    হ্যাঁ। এবং খুব সম্ভবত তাকে পূর্বেই চায়ের সঙ্গে কোন কড়া ঘুমের
    ঔষধ পান করানো। হয়েছিল, যেটা প্রমাণিত সহজেই হবে হয়ত তার স্টমাক কনটেন্ট-এর
    কেমিক্যাল। অ্যানালিসিসটা হলেই!

    এ-এসব আপনি কি বলছেন?

    মিসেস বিশ্বাসের কণ্ঠস্বরে এবার যেন কাঁপুনি টের পাওয়া যায়।

    যা বলছি
    জানবেন তার একটি বর্ণও মিথ্যা নয়। নির্মম সত্য। এবারে আপনি বলুন, সে রাত্রে রাত বারোটা
    থেকে দুটো—এই দু ঘণ্টা আপনি কি করছিলেন?

    কেন-রাত বারোটা থেকে দুটো তো আমি ঘুমোচ্ছিলাম।

    ঘুমোচ্ছিলেন?

    হ্যাঁ।

    বেশ। সেরাত্রে শেষ কখন আপনি কালী সরকারের ঘরে যান?

    সেরাত্রে আমি আদৌ যাইনি তার ঘরে।

    কিন্তু আমি জানি আপনি গিয়েছিলেন।

    না।

    ইয়েস, গিয়েছিলেন। বলুন, কখন গিয়েছিলেন এবং কতক্ষণ ছিলেন?

    আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আপনার ঐ কথায়, মিঃ রায়! সহসা হরডন
    বিশ্বাসের কণ্ঠস্বর শোনা গেল!

    চমকে আমরা ফিরে তাকালাম দরজার দিকে।

    হরডন বিশ্বাস ঠিক দরজার উপর দীড়িয়ে। সে যে ইতিমধ্যে কখন ওখানে এসে
    দাঁড়িয়েছে আমরা টেরও পাইনি।

    আপনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কিরীটী বলে হরডনের দিকে তাকিয়ে।

    হ্যাঁ।
    অত্যন্ত আপত্তিকর কথা।

    কিন্তু আপত্তিকর হলেও কথাটা সত্য জানবেন মিঃ বিশ্বাস। কিরীটী
    শান্তকণ্ঠে জবাব দেয়।

    অসম্ভব। কারণ আমি জানি ঐ সময় সে রাত্রে আমার স্ত্রী আমার পাশে শুয়েই
    নিদ্রা যাচ্ছিল।

    কিন্তু আমি যদি বলি মিঃ বিশ্বাস, আপনার স্ত্রী কালী সরকারের ঘরে
    সে রাত্রে গিয়েছিলেন? আপনি নেশার নিদ্রায় টের পাননি? টের পাবার মত আপনার সে সময়
    অবস্থাও ছিল না?

    রাবিশ!

    রাবিশ! আপনি ড্রিঙ্ক করেন না?

    করব না কেন? করি। কিন্তু তাই বলে–

    মিঃ বিশ্বাস, বিশ্বাস করা না করা ব্যাপারটা আপনার ইচ্ছে। তাছাড়া
    আপনার স্ত্রীর উপরে কোন রিফ্লেকশন আনবার চেষ্টা করিনি। যা ঘটেছিল সেরাত্রে তাই বলেছি। Mere facts–

    আপনি কি বলতে চান মিঃ রায়, আমার স্ত্রী রাতদুপুরে হোটেলের একজন বোর্ডারের
    ঘরে গেল আমার অজ্ঞাতে আর তার চরিত্রের ওপর সেটা একটা রিফ্লেকশন নয়?

    কিন্তু আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন, একসময় আপনার স্ত্রীর সঙ্গে ঐ কালী
    সরকারের যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল?

    অল ট্র্যাস! আমি ওকে দীর্ঘ দশ বছর ধরে জানি। তবে হ্যাঁ, একসময় ঐ
    কালী সরকারের স্কুলে আমার স্ত্রী কিছুদিন কাজ করেছিল। সে সময় একটু আধটু পরিচয় হয়ত
    ওর সঙ্গে হয়েছিল। কারণ আমি শুনেছিলাম সেক্রেটারী হলেও উনি প্রায়ই স্কুলে আসতেন এবং–

    বলুন, থামলেন কেন? কি বলছেন বলুন?

     ওঁর নারী সম্পর্কে বরাবরই
    একটা দুর্বলতা ছিল।

    আপনি তাহলে জানতেন ব্যাপারটা মিঃ বিশ্বাস?

    জানতাম বৈকি।

    বেশ। মিসেস বিশ্বাস, এবারে আপনি বলুন তো সেরাত্রে শেষ কখন চা দিয়ে
    আসা হয় কালী সরকারকে? কারণ আমি জানি, সে ঘন ঘন চা-পান করত এবং আপনিও সেই কথা
    বলেছেন।

    আমি জানি—হরডন বিশ্বাস বলে ওঠে, রাত তখন পৌনে এগারটা হবে। ও রান্নাঘরে
    একটু ব্যস্ত ছিল। রামানুজ এসে চায়ের কথা বলায় আমিই নিজে এক কাপ চা তৈরী করে তাকে
    দিয়ে আসতে বলি ঘরে।

    তৈরী করেছিল কে চা-টা? আপনি নিজে?

    না। মানে আমার স্ত্রীই করে দিয়েছিল।

    নিশ্চয়ই চা-পানের পর খালি চায়ের কাপটা তার ঘর থেকে রামানুজ
    সেরাত্রে নিয়ে আসেননি?

    না। আমি যতদূর জানি চা-টা দিয়েই চলে এসেছিল সে।

    তাই যদি হয়, নিশ্চয়ই অত রাত্রে চা খাবার পর আপনারা কেউ কাপটা নিয়ে
    আসেননি। কাপটা সেখানেই থাকার কথা, কিন্তু আমি পরদিন সকালে গিয়ে তার ঘরেতে কোন কাপ
    দেখিনি। তবে কে সেই কাপটা নিয়ে এল ঘর থেকে? মিসেস বিশ্বাস, আপনি?

    আ-মি–না–আমি কেন আনব। হয়ত কোন চাকর-বাকরই—

    কোন্ চাকর সাধারণতঃ তার ঘরে যেত?

    রঘুয়া।

    ডাকুন তাকে।

    সে তো নেই।

    কোথায় সে?

    কালই তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছি। হরডন বিশ্বাস বলে।

    চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। কেন?

    সে আমার ঘর থেকে পঞ্চাশটা টাকা চুরি করেছিল।

    থানায় রিপোর্ট করেছিলেন?

    না।

    কেন?

    গোলমাল হবার ভয়ে। তাছাড়া হোটেলের চাকর চোর-ব্যাপারটা বোর্ডারেরা
    জানতে পারলে খারাপ হবে তাই।

    মিসেস বিশ্বাস, আপনি যখন পরের দিন সকালবেলা আট নম্বর ঘরে যান, চায়ের
    কাপটা দেখেছিলেন? কিরীটী আবার মিসেস বিশ্বাসকেই প্রশ্ন করে।

    না।

    হুঁ,
    আপনার ভাই রামানুজ কোথায়?

    ওর মাছ ধরার বাতিক আছে। এ সময়টা প্রায়ই ও নুলিয়াদের সঙ্গে নৌকোয়
    চেপে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। আজও গিয়েছে হয়তো।

    রামানুজ আপনার নিজের ভাই?

    হ্যাঁ।

    আপন মায়ের পেটের?

    হ্যাঁ, হ্যাঁ।

    আপনার চেয়ে বয়সে কত ছোট?

    তা অনেক হবে।

    কত?

    পনের-ষোল তো হবেই।

    আপনার এখন বয়স কত?

    বিয়াল্লিশ হবে।

    ফরটি-টু?

    ঐ রকমই হবে। বলে মাথাটা নীচু করল রেণুকা।

    টীকা