Chapter Index

    মানুষের চেহারা—তার আকৃতি, গঠন এবং তার মুখের গড়ন দেখে কি একটা
    মানুষকে চেনা যায়- চেনা যেতে পারে?

    আমার প্রশ্নের উত্তরে কিরীটী মৃদু কণ্ঠে বলে, তোর কি মনে হয়
    সুব্রত?

    আমি তো জিজ্ঞাসা করছি তোমাকে কিরীটী!

    না!

    চেনা যায় না—বোঝা যায় না?

    না।

    তবে যে অনেকে বলে মানুষের মনের ছবিই হচ্ছে তার মুখ?

    আমি বিশ্বাস করি না।

    কেন?

    কারণ মানুষের মনটা এমন একটা বিচিত্র বস্তু যে, বিশেষ কোন একটা
    formula-র মধ্যে ফেলে তাকে বিচার করতে গেলে আমার মনে হয় ঠিক বিচার করা হবে না। হতে
    পারে না।

    কিন্তু তুই তো অনেক সময় মানুষের বাইরের চেহারাটা দেখেই তার
    চরিত্রের analysis করেছিস!

    করেছি, কিন্তু তাই বলে সেটা যে সর্বক্ষেত্রেই অবধারিত সত্য তাও তো
    নয়।

    কিন্তু আমার মনে হয়—

     কি মনে হয় সুব্রত? কিরীটী
    প্রশ্ন করে আমার মুখের দিকে তাকাল। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি তার।

    চেহারা-মানে বলতে চাই আমি, কারও চেহারা বিশেষভাবে খুঁটিয়ে দেখলে
    সবটা না হলেও তার চরিত্রের কিছুটা আভাস-বলতে পার মোটামুটি আভাস আমরা পেতে পারি।

    কথাটা আমি বলেছিলাম অদূরে একজন লোককে সাগর-সৈকত ধরে আমাদেরই দিকে
    এগিয়ে আসতে দেখে।

    কিরীটীর সেটা নজর এড়ায়নি। বলে, ঐ যে ভদ্রলোকটি এদিকে আসছে, ওকে
    দেখে তোর কি মনে হয় সুব্রত? নিশ্চয়ই একজন মার্ডারার, নয়?

    যদি বলি তাই!

    কিরীটী আমার কথায় হো হো করে হেসে ওঠে।

    হাসছিস? বললাম আমি, কিন্তু লোকটার দিকে ভাল করে চেয়ে দেখ তো
    কিরীটী-ওর চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় না কি, লোকটা কোল্ড ব্লডে মার্ডার করতে
    পারে? অত্যন্ত শান্ত ও নির্বিকার ভাবে একজনের পিঠে ছুরি বসাতে পারে, গুলি চালাতে
    পারে বা চায়ের বা খাদ্যের সঙ্গে কোন তীব্র বিষ মিশিয়ে দিতে পারে?

    যেহেতু লোকটার চেহারাটা তোর নয়নতৃপ্তিকর হয়নি। প্রথম দৃষ্টিতেই লোকটার
    চেহারা তোর বিচ্ছিরি লেগেছে, এটাই তো তোর একমাত্র যুক্তি সুব্রত।

    আমি কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, না, না, ঠিক তা নয়–

    তাই-অবিশ্যি অস্বীকার করব না যে, এমন চেহারা কারও কারও আছে যার
    দিকে তাকানো মাত্র মনে হয়, লোকটা বুঝি যে-কোন ক্রাইম অনায়াসেই করতে পারে। এমন কি হত্যাও।
    মন ঘিনঘিন করে ওঠে। অথচ মজা হচ্ছে, খোঁজ নিলে হয়ত দেখা যাবে-সম্পূর্ণ বিপরীত। যা মনে হয়েছে আদৌ তা নয়।
    প্রকৃতিতে লোকটা হয়তো যেমন শান্ত, তেমনি নিরীহ, তেমনি ভীতু।

    কিন্তু—

    কিরীটী আমাকে বাধা দিয়ে বলে, ঠিক তাই সুব্রত। মানুষের চরিত্র বড়
    বিচিত্র, বড় দুর্বোধ্য। চেহারার ফরমূলায় ফেলে সেই দুর্বোধ্যকে solveকরা যায় না।
    তারপরই একটু থেমে বলে, ঐ যে ভদ্রলোকটি—যাকে দেখে তোর মনে হচ্ছে কোও নাড়ে লোকটা
    মার্ডার করতে পারে, মনে হচ্ছে ওকে আমি চিনি–

    চিনিস?

    হ্যাঁ।

    ভদ্রলোক তখন আরও এগিয়ে এসেছেন হাঁটতে হাঁটতে আমাদের দিকে।

    কিরীটী তার দিকে চেয়েই বলতে থাকে, ওঁর নাম কালীপ্রসাদ সরকার।
    নামকরা একজন জুয়েলার বংশের ছেলে। অমন নিরীহ, অমন গোবেচারা লোক বড় একটা দেখা যায়
    না। তাছাড়া লোকটা পরম বৈষ্ণব। মানুষ মারা তো দূরে থাক, একটা মাছিও কোনদিন মারতে
    পারবে কিনা সন্দেহ।

    আমি আর কোন জবাব দিই না।

    কারণ জানি, জবাব দিলেও কিরীটীর মতের এতটুকু পরিবর্তন তো হবেই না,
    উপরন্তু সে তার থিয়োরি আরো জোরালো কণ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করবে। আমাকে
    নস্যাৎ করে দেবে।

    তার চাইতে সামনে সাগরের দিকে চেয়ে থাকতে বেশ লাগছে।

    পুরীর সাগর-সৈকতে স্বর্গদ্বারের কাছাকাছি দুজনে বসে ছিলাম।

    সূর্য অনেকক্ষণ অত গিয়েছে, কিন্তু অন্ত গেলেও সাগরের বুক থেকেও
    আকাশ থেকে আলোটা যেন মুছেও মুছে যায়নি। সমস্ত প্রকৃতি জুড়ে তখনও যেন একটা আলোর রেশ
    থেমে যাওয়া শীতের রেশের মতই শেষ হয়েও শেষ হয়নি।

    একজন নয় দুজন-কালী সরকার ও অন্য একজন। ভদ্রলোকরা আরও এগিয়ে এসেছেন
    ইতিমধ্যে এবং কিরীটীকে দেখে কালী সরকার হঠাৎ বলে ওঠে, কিরীটী না?

    হ্যাঁ তারপর
    কালী, তুই এখানে এসময়ে?

    এলাম। মাঝে মাঝে তো পুরীতে আসি-ঐ যে হোটেলটায়—

    একটা হোটেল দেখায় কালী সরকার আঙুল তুলে। হোটেলটা নতুন এবং
    চোখ-ঝলসানো।

     কালী জিজ্ঞাসা করে, উনি?

    আমার বন্ধু-সুহৃদ—একমেবাদ্বিতীয় সুব্রত রায়—

    নমস্কার। কালী সরকার হাত তোলে।

    আমিও হাত তুলে নমস্কার জানাই। অন্য ভদ্রলোকটি কিন্তু আলাপ করলেন
    না আমাদের সঙ্গে, কেমন যেন অনিচ্ছুক ভাবে আমাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রইলেন
    সর্বক্ষণ।

    অতঃপর দুজনে বালুবেলা দিয়ে এগিয়ে গেল। একসময় দূরে মিলিয়ে গেল।

    .

    ক্রমে ক্রমে সেই আলোর শেষ রেশটকু আকাশ থেকে, প্রকৃতি থেকে মুছে যায়।

    অন্ধকার নামে চারিদিকে। অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেডলোর মাথায় খেত ফেনার
    পুঞ্জ যেন হিংস্র জন্তুর ধারালো দাঁতের মত মনে হয়।
    একটানা গর্জনে মনে হয় যেন কোন অবরুদ্ধ জন্তু প্রচণ্ড আক্রোশে ফুঁসছে।

    কিরীটীর দিকে তাকালাম। মনে হল সে যেন কেমন একটু অন্যমনস্ক। মনে হল
    সে বুঝি কিছু ভাবছে। সমুদ্রের হাওয়ায় চুরোটটা বোধ হয় একসময় নিভে গিয়েছিল—কিরীটী
    ঘুরে বসে নিভে যাওয়া চুরোটটায় আবার অগ্নিসংযোগে তৎপর হয়।

    হঠাৎ কিরীটীই আবার কথা বলে, সুত! কি?

    কালী সরকার লোকটা নিঃসন্দেহে কোন্ড ব্লডে কাউকে মার্ডার করতে না
    পারলেও, সঙ্গের ভদ্রলোকটির চোখের চাউনি কেন যেন আমার ভাল লাগল না।

    ভাল লাগল না মানে? প্রশ্ন করলাম আমি।

    চোখের দৃষ্টিটা দেখলি না ভদ্রলোকের, বেশ যেন বিরক্ত অপ্রসন্ন—মনে
    হল যেন কালীর আমাদের সঙ্গে আলাপ করাটা আদৌ তার মনঃপুত হয়নি।

    হয়তো—

    কি?

    হয়তো দুজনের মধ্যে বিশেষ কোন জরুরী কথা হচ্ছিল, হঠাৎ সেই সময় আমরা
    সামনে পড়ায় এবং কালী সরকার আমাদের সঙ্গে কথা বলায় সে বিরক্ত বোধ করছিল–

    স্বাভাবিক।

    শুধু স্বাভাবিক নয়, তার চাইতে হয়তো—

    কি?

    কিছু বেশী। যাক গে, মরুক গে কালী সরকার আর তার সঙ্গে সেই অপ্রসন্ন
    লোকটি–

    বলতে বলতে কিরীটী বালুবেলার উপরে টান-টান হয়ে শুয়ে পড়ে, শিথিল অলস
    ভঙ্গীতে।

    কিরীটী যাই বলুক, যাই তার থিয়োরি হোক-কি
    জানি কেন, লোক-দুটোর চেহারা কিন্তু মন থেকে কোনমতেই আমি মুছে ফেলতে পারি না।

    কালীপ্রসাদ সরকার, আর সেই অপ্রসন্ন ভদ্রলোকটি।

    সে-সময় সমুদ্র-সৈকতে বায়ুসেনার্থী অনেক বয়সের অনেক স্ত্রী-পুরুষ
    ছিল এবং আশ্র সেই ভিড়ের মধ্যেও ওদের দুজনকে দূর থেকে দেখেই ওদের দিক থেকে চট করে
    দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারিনি, বিশেষ করে কালী সরকারের দিক থেকে।

    দুজনেরই পরিধানে সুট ছিল। একজনের দামী সুট, কোনো নামকরা টেইলার্স
    শপের তৈরী। অন্যজনের বোধ করি সাধারণ কোন দোকান থেকে কেনা রেডিমেড সুট। একটু ঢিলে,
    ঝলমলে।

    পরনে সামী সুট ছিল কালীপ্রসাদ সরকারের।

    লোকটার বয়স পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে হবে বলেই মনে হয়। বেশ মোটা
    চর্বিযুক্ত ভারী দেহের গড়ন। রীতিমত কালো গায়ের বর্ণ। ভারী ঈষৎ চৌকো মুখ। মোটা রোমশ
    ভু। কান দুটো বেশ বড় এবং কান-ভর্তি চুল। সুট পরা থাকলেও টাই না থাকায় খোলা শার্টের
    ফাঁক দিয়ে বুকের যে অংশটুকু দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল সেটা রীতিমত রোমবহুল। বোঝা যায়
    মানুষটা রোমশ। গায়ে খুব বেশী লোম। হাসলেই উপরের মাড়ির অনেকটা বেরহয়ে পড়ে ও সেই
    সঙ্গে প্রকাশ পায় ঝকঝকে মোটা মোটা একসারি এলোমেলো দাঁত।

    আর হাতের থাবা ও আঙুলগুলোই বা কি-যেমন চওড়া তেমনি মোটা মোটা ও
    বলাই বাহুল্য রোমশ।

    লম্বায় লোকটা কিন্তু খুব বেশী নয়, পাঁচ ফুট দুই থেকে তিন ইঞ্চির
    বেশী কিছুতেই হবে না—অর্থাৎ পুরুষের পক্ষে বেঁটেই লোকটা। দূরে থেকে মনে হচ্ছিল,
    যেন ঠিক এক ভল্লুক থপথপ করে হাঁটছিল।

    আর তার সঙ্গী! সেই অপ্রসন্ন ভদ্রলোকটি! কম দামের ঢিলে ঝলমলে পোশাকের
    মধ্য দিয়েও যেন তার রূপ, তার সৌন্দর্য ফুটে বের হচ্ছিল। সত্যিই লোকটা সুন্দর।
    মাঝামাঝি লম্বা। গায়ের রং বেশ ফর্সা। চকিতের জন্য দেখেছিলাম, তবু মনে পড়ে, বেশ
    ভাসা-ভাসা পিঙ্গল চোখ। মাথার চুল সামান্য কটা।

    কিরীটীর দিকে তাকালাম। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে।

    সন্ধ্যার আকাশে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কতকগুলো তারা। সমুদ্রতীরে বায়ুসেবনার্থীদের
    ভিড় একটু একটু করে পাতলা হয়ে আসছে। দূরে চোখে পড়ে সী সাইড হোটেলের আলোগুলো
    জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।

    আমিই প্রথমে কথা বলি, মনে হচ্ছে তুই যেন কিছু ভাবছিস কিরীটী!

    অ্যাঁ! কিরীটী যেন চমকে ওঠে।

    কি ভাবছিস?

    ঐ কালী সরকারের কথাই ভাবছিলাম রে—

    কালী সরকারের কথা!

    হ্যাঁ,
    প্রেসিডেন্সীতে একসঙ্গে দুজনে বছর-তিনেক পড়েছিলাম। সেই সময়ই আলাপ। মনে আছে আজও,
    ম্যাথেমেটিকসে ওর ব্রেন ছিল অদ্ভুত। ডাঃ সাহা বলতেন, একসেপসন্যাল। অথচ—

    থামলি কেন, বল?

    কিরীটী আবার বলতে থাকে, কলকাতা শহরের বিখ্যাত ধনী জুয়েলার সরকার
    ফ্যামিলির ছেলে, যাদের বাড়ির কোনদিন কোন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চৌকাঠটিও ডিঙিয়েছে
    কিনা সন্দেহ, সেই বাড়ির ছেলে ম্যাথেমেটিয়ে দুটো লেটার ও রেকর্ড মাকর্স নিয়ে
    ম্যাট্রিক পাস করে আই-এস-সি পড়তে এল প্রেসিডেন্সীতে। বিরাট ঝকঝকে ওয়েলার ঘোড়া-বাহিত
    জুড়িগাড়ি করে আসত কলেজে। পরনে গিলে-করা আদ্দির পাঞ্জাবি, হীরের বোম আংটি, চকচকে
    তৈরী ঝকঝকে ডার্বি সু পায়ে—যেন জামাইটি। কিন্তু যেমনি লাজুক তেমনি নিরীহ শান্ত গোবেচারা
    টাইপের। প্রথম প্রথম তো কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকায়নি। কিন্তু ডাঃ সাহার স্তুতির পর
    হঠাৎ যেন ক্লাসের সবার নজর গিয়ে কালীর উপর পড়ল—সার্চলাইটের মত। ও যেন সর্বসমক্ষে
    আবিষ্কৃত হয়ে গেল।

    তারপর?

    ইন্টারমিডিয়েটে ফিজিক্স, কেমিস্ত্রী ও ম্যাথেমেটিকস্ তিনটেতেই ও
    লেটার পেয়েছিল মনে আছে এবং ম্যাথেমেটিকসে রেকর্ড মার্ক। বি-এস-সি পড়তে শুরু করল
    ম্যাথেমেটিকস্ নিয়ে এবং থার্ড ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ারে ওঠার মাসখানেক পর–

    কি?

    হঠাৎ কলেজে আসা বন্ধ করলে।

    কেন?

    কে জানে?

    তারপর?

    তারপর দীর্ঘ দশ বছর পরে একবার একটা একজিবিশনে দেখা হয়েছিল। তারপর
    আর ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। বলতে গেলে ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ-আরও কত বছর
    বাদে হঠাৎ আজ দেখা হল আবার। মনে মনে হিসাব করছিলাম, আরো দশ বছর পরে দেখা হল আজ।

    বলিস কি!

    তাই ভাবছিলাম। আমি ওকে চিনেছি যেহেতু ওর মুখের গঠনে কিছু
    peculiarities ছিল—যা আজো
    আমার মনে আছে, ভুলিনি এবং যে জন্য আজ দেখেই ওকে চিনতে পেরেছিলাম, কিন্তু ও আমায়
    সঙ্গে সঙ্গে চিনল কি করে তাই ভাবছি। ও বিশেষ তেমন বদলায়নি চেহারায়, কিন্তু আমি

    কিরীটীর কথা শেষ হয় না, হঠাৎ কালী সরকারের কণ্ঠস্বর শোনা যায়,
    কিরীটী!

    কে?

    আমি কালী।

    ফিরে চেয়ে দেখি একা কালী সরকার, সঙ্গের সেই ভদ্রলোকটি নেই।

    আয়, বস্। কিরীটী আহ্বান জানায়।

    ভাই, বসব না। হোটেলে ফিরব।

    আচ্ছা কালী–

    কি?

    তুই আমাকে চিনলি কি করে বল তো, এত বছর পরেও?

    বিলক্ষণ! তোকে চিনব না কি রে? দুর্জনেরা যে যাই বলুক, কিন্তু তোকে
    আজ অস্বীকার করবার ক্ষমতা কার বল্। তা তুই এখানে?

    কাজ-কর্ম নেই হাতে। বসে বসে গাঁটে গাঁটে বাত ধরছিল, তাই—

    সমুদ্র-সৈকতে! তা বেশ। বাত সারবে হয়তো নোনা হাওয়ায়!

    হুঁ,
    সেই আশাতেই তো এলাম।

    কিরীটী এবারে জিজ্ঞাসা করে, তোর সঙ্গে সেই তিনি কে? তাকে তো
    চিনলাম না?

    আমার বিশেষ পরিচিত বন্ধু-নামকরা মুক্তার ব্যবসায়ী,
    পার্ল-মার্চেন্ট দোলগোবিন্দ শিকদার। হঠাৎ বেড়াতে বেড়াতে সমুদ্রের ধারে এই কিছুক্ষণ
    আগে এখানে দেখা হয়ে গেল।

    তারপর কি করছিস? কিরীটীই কালীপ্রসাদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা
    করে, বলতে গেলে একটা যুগ পরে দেখা।

    বিজনেস মানে ব্যবসা।

    কিসের ব্যবসা?

    জুয়েলারী-হীরাজহরতের!

    তাহলে শেষ পর্যন্ত অঙ্কশাস্ত্র-মাথেমেটিকস্ ছেড়ে ঐ জুয়েলারীর
    ব্যবসাই করতে গেলি?

    উপায় কি বল? আমাদের তিন-জেনারেশন ধরে ঐ জুয়েলারীর ব্যবসা, তুই তো
    জানতিস ভাই!

    তা জানতাম। কিরীটী মৃদু কণ্ঠে বলে।

    হঠাৎ কিরীটীই প্রশ্ন করে, তা হা রে, তুই তো ঐ সী-সাইড হোটেলটাতেই
    উঠেছিস, তাই না?

    হুঁ।
    ওই হোটেলের ব্যবস্থাটা দেখলাম বেশ ভাল, তাই ওখানেই উঠলাম। তা তুই কোথায় উঠেছিস?

    মিহিরবাবুর পুরী ভিউ হোটেলে।

    ঐ যে সামনের হোটেলটা?

    হ্যাঁ।

    আচ্ছা চলি ভাই—

    আহা বস্ না। কতদিন পরে দেখা হল—

    তুই তো আছিস, পরে দেখা হবে। আজ উঠি ভাই।

    কালী সরকার উঠে পড়ে এবং অন্ধকারে বালুবেলার উপর দিয়ে হোটেলের দিকে
    এগিয়ে যায়।

    মনে হল ভদ্রলোক একটু অন্যমনস্ক।

    টীকা