Chapter Index

    পরের
    দিন সত্যজিতের ঘুম ভাঙল অনেক বেলায় সবিতার ডাকে।

    সত্যজিৎবাবু
    উঠুন!
    নায়েব কাকা নিচে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন, দারোগাবাবু,
    নাকি এসেছেন!

    লজ্জিত সত্যজিৎ চোখ রগড়াতে রগড়াতে শয্যা হতে উঠে নেমে দাঁড়াল। খোলা
    জানালা-পথে প্রভাতী রৌদ্র এসে সমস্ত কক্ষটা আলোয় ঝলমল করছে।

    সবিতার পরিধানে একটা সাধারণ
    মিলের কালোপাড় শাড়ি। রুক্ষ
    তৈলহীন চুলের
    রাশ বুকে পিঠে ছড়িয়ে আছে।

    যেন একখানি পরিপূর্ণ বিষাদের সকরুণ প্রতিচ্ছবি।

    কানাইয়ের মাকে এই ঘরে আপনার চা দিতে বলেছি। দোতলার বাথরুমেই জল
    আছে, হাত মুখ ধুয়ে আসুন।

    পায়ে জুতোটা গলাতে গলাতে সত্যজিৎ বললে, আপনি চা খাবেন না!

    না।

    কেন, আপনার কি চা খাওয়া অভ্যাস নেই?

    আছে। তবে—

    সকরুণ বিষণ্ণ হাসি সবিতার ওঠপ্রান্তে জেগে ওঠে।

    সহসা সত্যজিতের মনে পড়ে যায়, তিনদিন পিতার মৃত্যুতে সবিতাকে নিয়মপালন
    করতে হবে।

    গত প্রত্যুষেও ট্রেনে চা-পান করেনি।

    লজ্জিত সত্যজিৎ তাড়াতাড়ি বাইরে বাথরুমের দিকে চলে যায়—যেন
    ঘটনাটাকে কতকটা সহজ করে দেবার জন্যই।

    নায়েব বসন্তবাবু
    ওদের অপেক্ষাতেই বাইরের ঘরে একটা চেয়ারের ওপর বসে অন্য একটি চেয়ারের পাশ্বে
    উপবিষ্ট থানার দারোগা লক্ষ্মীকান্তবাবুর
    সঙ্গে নিম্নস্বরে কি সব কথাবার্তা বলছিলেন।

    দারোগা লক্ষ্মীকান্ত
    সাহার বয়স চল্লিশের ঊর্ধ্বে
    নয়; বয়স যাই হোক মাথার সবটুকু জুড়ে বিস্তীর্ণ একটি টাক। কেবল পশ্চাতে ঘাড়ের দিকে
    সামান্য যা চুল
    আছে তার মধ্যে বেশীর ভাগই পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে।

    নাদুসনুদুস নাড়ুগোপাল প্যাটার্নের
    চেহারা। মুখখানা
    বর্তুলাকার,
    ছড়ানো নাসিকা, ওপরের ওষ্ঠটি
    স্বাভাবিক রকমের পুরু।

    লক্ষ্মীকান্তর
    মস্তকের চুলের অপ্রতুলতার সঙ্গে একটা সামঞ্জস্য রক্ষা করবার জন্যই হয়ত সর্বাঙ্গে লোমের
    প্রাচুর্য।

    লক্ষ্মীকান্ত
    দারোগা সবিতার একেবারে অপরিচিত নয়, কারণ
    ইতিপূর্বে দু-একবার এই বাড়িতেই চৌধুরী মশাই বেঁচে থাকতে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে।

    সবিতা ও সত্যজিৎকে কক্ষে প্রবেশ করতে দেখে বসন্তবাবুই সর্বপ্রথমে সবিতাকে আহ্বান জানালেন, এস মা। ঐ চেয়ারটায়
    বস। লক্ষ্মীকান্তবাবু
    অনেকক্ষণ তোমার জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছেন—তিনদিন হয়ে গেল, আর তো বাসি মড়া এমনি
    করে রাখা যায় না—

    কথাটা শেষ করলেন লক্ষ্মীকান্ত
    দারোগা, হ্যাঁ সবিতা দেবী, কেবল আপনি যাতে আপনার পিতাঠাকুরকে একটিবার
    শেষবারের মত—

    তার আর কোন প্রয়োজন নেই নায়েব কাকা। মৃতদেহ সৎকারের আয়োজন করুন।

    কিন্তু তুমি একবার

    সে সৎকারের সময়েই হবে। আপনি আর দেরি করবেন না।

    সবিতার কণ্ঠস্বর ক্লান্ত ও নিস্তেজ হলেও যেন একটা দৃঢ়তায় সুস্পষ্ট মনে হয়।

    বেশ। তাহলে আমি সব ওদিককার যোগাড়যন্ত্র করি গে। আচ্ছা লক্ষ্মীকান্তবাবু,
    আমি তাহলে –

    হ্যাঁ আসুন।
    সবিতা দেবীর সঙ্গে আমার গোটাকতক কথা আছে, সেগুলো ইতিমধ্যে সেরে নিই।

    বসন্তবাবু
    আর অপেক্ষা করলেন না, কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।

    বসন্তবাবু
    কক্ষ হতে চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ ধরে যেন ঘরের মধ্যে একটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করে।

    লক্ষ্মীকান্তবাবু,
    সবিতা ও সত্যজিৎ কারো মুখেই কোন কথা নেই।

    ঠিক কি ভাবে বক্তব্যটা শুরু করলে নেহাত অশোভন বা পীড়াদায়ক হবে না
    সেই কথাটাই লক্ষ্মীকান্ত
    চিন্তা করতে থাকেন বোধ হয়।

    এমন সময় সবিতাই শুরু করে, ইনি সত্যজিৎ রায়, বাবার ছোটবেলার বন্ধুর
    ছেলে। আমাদের আত্মীয়ের মতই। বাবাই ওঁকে আসবার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এর
    উপস্থিতিতে আমরা সকল প্রকার আলোচনাই করতে পারি লক্ষ্মীকান্তবাবু।

    ও। মৃদুভাবে
    প্রত্যুত্তর দিলেন লক্ষ্মীকান্ত।

    হ্যাঁ, এবারে আপনি আপনার আমাকে যে প্রশ্ন তা করতে পরেন।

    একসকিউজ মি ফর এ মিনিট লক্ষ্মীকান্তবাবু ইফ ইউ ডোন্ট মাইণ্ড,
    সহসা কথার মাঝখানে লক্ষ্মীকান্তকে
    কোন কথা বলবার অবকাশ না দিয়েই সত্যজিৎ বলে ওঠে, আপনাকে আমি দু-একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি
    কি?

    নিশ্চয়ই। বলুন
    কি জিজ্ঞাসা করতে চান?

    লক্ষ্মীকান্ত পূর্ণ
    দৃষ্টিতে সকৌতুকে তাকালেন প্রশ্নকারী সত্যজিতের মুখের দিকে।

    আপনাদের ধারণাও বটে এবং শুনলাম ময়না তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে,
    চৌধুরী মশাইকে কেউ না কেউ হত্যাই করেছে, তাই না?

    হ্যাঁ। শ্বাসরোধ
    করে হত্যা করা হয়েছে।

    আচ্ছা যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল তার আশেপাশে বা চৌধুরী মশায়ের
    দেহে ও জামাকাপড়ে এমন কোন চিহ্ন কি পাওয়া গিয়েছে—অবশ্য একমাত্র ময়না-তদন্তের ফলাফল
    ছাড়া যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাঁকে শ্বাসরোধ
    করেই হত্যা করা হয়েছে?

    লক্ষ্মীকান্ত
    দারোগা এই সব খুন-জখমের তদন্ত কুড়ি বছর ধরে করছেন।

    বিভিন্ন প্রকৃতির লোকের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় ও কথাবার্তা হয়েছে,
    কিন্তু সত্যজিৎ যেভাবে তাঁকে প্রশ্নটা করল ঠিক এই ধরণের প্রশ্ন যে ঐরকম জায়গা থেকে
    শুনতে পাবেন এ যেন তাঁর স্বপ্নেরও অতীত ছিল।

    বিস্মিত লক্ষ্মীকান্ত
    কিছুক্ষণ প্রশ্নকারীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনি ঠিক কি জানতে চান
    সত্যজিৎবাবু?

    জানতে চাই কি কি কারণে আপনারা এক্ষেত্রে যে চৌধুরী মশাইকে শ্বাসরোধ করেই হত্যা করা হয়েছে
    বলে স্থিরসিদ্ধান্ত
    হয়েছেন, অবশ্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া

    ময়না-তদন্তে
    যখন শ্বাসরোধ করা হয়েছে বলেই প্রমাণিত হয়েছে, তখন আবার কি প্রয়োজন বলুন?

    তা বটে! আচ্ছা চৌধুরী মশাইয়ের গলায় কোন দাগ বা চিহ্ন কি ছিল যার
    দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাঁকে

    না,
    এমন কোন চিহ্নই তাঁর গলায় ছিল না।

    মৃতদেহের গায়ে কোন জামা ছিল না শুনেছি

    না,
    একটা চাদর
    জড়ানো ছিল মাত্র।

    কোন struggle বা ধস্তাধস্তির চিহ্ন তাঁর গায়ে পরিধেয় বস্ত্রে ছিল
    না?

    না।

    যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যায় সেই আশেপাশের জমিতে কোন চিহ্ন বা

    না,
    তাও ছিল না।

    কোন পদচিহ্ন?

    না।

    আচ্ছা শুনেছি একপাটি জুতো মৃতদেহের পায়েই ছিল, আর অন্য পাটি জুতো
    কিছুদূরে
    ঘাসের উপরে পড়েছিল?

    তাই।

    হুঁ।
    আচ্ছা মনে করনে শ্বাসরোধ করেই যদি তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে সেই শ্বাসরোধের ব্যাপারটা কোথায়
    সংঘটিত হয়েছিল?
    মানে সেইখানেই যেখানে মৃতদেহ
    পাওয়া যায়, না অন্য কোথায়ও বলে আপনাদের ধারণা?

    এ তো সহজেই অনুমান করা যায়, নিশ্চয়ই সেই নন্দনকাননেই!

    কেন বলুন তো?

    লক্ষীকান্ত
    এবারে যেন সত্যজিতের প্রশ্নে বেশ একটু
    বিরক্তই হয়েছেন তাঁর কণ্ঠস্বরেই বোঝা গেল, তা ছাড়া আর কি! নইলে কি আপনার ধারণা। শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করে,
    হত্যাকারী শেষে মৃতদেহটা
    ঐ দীর্ঘ পথ বহন
    করে নিয়ে গিয়েছে বোকার মত!

    সম্ভবত সেটা হয়ত হত্যাকারী করেনি, কারণ সেটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনাদের
    রিপোর্ট শুনে মনে হচ্ছে সেই নন্দনকাননেই যে চৌধুরী মশাইকে হত্যা করা হয়েছে সেটাও
    বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।

    কেন বলুন তো? একটা ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্য-মিশ্রিত কৌতূহলের সঙ্গেই
    যেন লক্ষ্মীকান্ত
    সত্যজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেন।

    কারণটা
    হয়ত চট করে আপনাকে এখনি বুঝিয়ে বলতে পারছি না লক্ষ্মীকান্তবাবু, তবে সাধারণ বুদ্ধি যাকে আমরা common
    sense বলি তা থেকে মনে হয় মৃতদেহ
    ও তার আশপাশের যে বর্ণনা আপনারা দিচ্ছেন তাতে করে বরং উল্টোটাই মনে হয়—হত্যা করবার
    পর মৃতদেহ
    সেখানে নিয়ে গিয়ে ফেলে
    রাখা হয়েছে।

    এবারে লক্ষ্মীকান্ত
    হেসে ফেললেন, চমৎকার যুক্তি আপনার মশাই! কে এমন আহাম্মক আছে বলুন যে হত্যা করবার পর মৃতদেহটাকে অতখানি risk নিয়ে ঐ নন্দনকাননের মধ্যে
    গিয়ে ফেলে রেখে আসবে? কাজ হাসিল করবার পর অকুস্থান থেকে খুনী যত তাড়াতাড়ি গা-ঢাকা
    দিয়ে সরে যেতে পারে তাই সে যায় এবং সেটাই এযাবৎকাল স্বাভাবিক বলে জেনে এসেছি মশাই।
    এ লাইনে একটা জীবনই তো কেটে গেল।

    আপনার ও-কথার মধ্যে যুক্তি আছে বৈকি লক্ষ্মীকান্তবাবু, তবে কি জানেন, আপনিও হয়ত
    শুনে থাকবেন, এমনও বহু
    ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যে ধরনের risk-এর কথা আপনি বলছেন সেই ধরনের প্রচার risk
    থাকা সত্ত্বেও বিশেষ কোন উদ্দেশ্যেরই বশবর্তী
    হয়ে অনেক সময় হত্যাকারী হত্যা করবার পর অকুস্থান হতে মৃতদেহ টেনে বা বহন করে নিয়ে গিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে ফেলে রেখে
    এসেছে।

    দেখুন মশাই, আপনার সঙ্গে অত চুলচেরা তর্ক-বিচার করবার মত পর্যাপ্ত সময়
    আমার হাতে বর্তমানে নেই। আমি case-এর investigation-এর জন্য সবিতা দেবীকে কয়েকটা
    কথা জিজ্ঞেস করতে চাই একটু
    private-এ

    সুস্পষ্ট বিরক্তি ও কতকটা তাচ্ছিল্যই যেন ঝরে পড়ল লক্ষ্মীকান্তর কণ্ঠস্বরে এবারে।

    কিন্তু সত্যজিৎ কোন জবাব
    দেবার পূর্বেই সবিতা বলে উঠল, আমাকে যা আপনি জিজ্ঞাসা করতে চান লক্ষ্মীকান্তবাবু ওঁর
    সামনেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনাকে তো একটু
    আগেই আমি বলেছি উনি বাবার বন্ধুপুত্র
    ও আমাদের আত্মীয়েরই মত।

    না না—তার
    কোন প্রয়োজন নেই সবিতা দেবী। বেশ তো, উনি যখন বিশেষ করে private-এ আপনাকে কিছু
    জিজ্ঞাসা করতে চান, আমি না হয় পাশের ঘরেই কিছুক্ষণের জন্য

    সত্যজিৎ উঠে দাঁড়াল।

    কিন্তু সবিতার দৃঢ়
    সংযত কণ্ঠস্বরে সহসা ও ফিরে দাঁড়াল, না, আপনি যাবেন না মিঃ রায়। এই ঘরেই থাকুন।
    ওঁকে জিজ্ঞাসা করতে দিন আপনার উপস্থিতিতেই উনি কি জানতে চান—

    সত্যজিৎ ও লক্ষ্মীকান্তবাবু,
    দুজনেই যেন বেশ একটু
    সবিতার আচরণে ও কণ্ঠস্বরে বিস্মিত হয়ে একই সময়ে যুগপৎ সবিতার মুখের দিকে তাকায়।

    সবিতা তার অর্ধসমাপ্ত
    কথাটা শেষ করে বলে, হ্যাঁ, যেহেতু বাবার এই হত্যা-রহস্যের মীমাংসার জন্য ওঁর
    সাহায্য ও সহানুভূতিও যেমন আমার প্রয়োজন তেমনি আপনার সাহায্য ও সহানুভূতিও আমার
    প্রয়োজন এবং সেই কারণেই আমি চাই গোড়া থেকেই যেন আমাদের তিনজনের মধ্যে একটা সহজ বোঝাপড়া
    থাকে।

    ওঃ! তা বেশ। সত্যজিৎবাবু,
    আপনিও তাহলে বসুন।

    পূর্বের
    মতই বিরক্তি-মিশ্রিত কণ্ঠে লক্ষ্মীকান্ত
    বলে ওঠেন।

    সত্যজিৎ আবার পূর্বের
    আসনটিতে
    বসে পড়ল।

    শুনুন লক্ষ্মীকান্তবাবু,
    আপনি জানেন আমার টাকার অভাব নেই। বাবার এই হত্যা-রহস্যের মীমাংসার জন্য আপনাদের
    ব্রাঞ্চের কোন বিশেষ অভিজ্ঞ ও নামকরা ব্যক্তিকেও যদি চান আনতে পারেন, তার
    যাবতীয় খরচও আমি দেব।

    বেশ তো। আনন্দের কথা। তবে এক্ষেত্রে তাতেও কোন সুরাহা হবে বলে তো
    আমার মনে হয় না!

    কেন বলুন তো? প্রশ্নটা করে সত্যজিৎ।

    আমারও তো মশাই বিশ বছরের অভিজ্ঞতা এ লাইনে। খুনীর ধরাছোঁয়াও পাবেন
    না।

    ধরা-ছোঁয়াও পাব না?

    পাবেন কি করে! আমার যতদূর
    মনে হয় খুনী এক্ষেত্রে কোন বাইরের লোক। এ বাড়ির তো কেউ নয়ই, এ শহরেরও কেউ নয়। এ
    বিষয়ে আমি একেবারে স্থির সিদ্ধান্ত

    কেন বলুন তো?

    কারণ
    আগাগোড়া সমস্ত ব্যাপারটা পর্যালোচনা করে যাবতীয় সকলের জবানবন্দি নিয়ে এটা অন্ততঃ বুঝতে পেরেছি,
    হত্যাকারী এখানকার কেউ নয়।

    আপনি তাহলে বলতে চান বাইরের কেউ প্রশ্ন করে সত্যজিৎ।

    নিশ্চয়ই।

    কিন্তু উদ্দেশ্য?

    তা উদ্দেশ্যও একটা আছে বৈকি। গম্ভীর স্বরে প্রত্যুত্তর দেন লক্ষীকান্তবাবু।

    আপনি ধরতে পেরেছেন নাকি কিছু?

    সেটা অবশ্য ভেবে দেখতে হবে।

    বিশ বছরের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে লক্ষ্মীকান্তর অকাট্য যুক্তির বহুর শুনে সত্যজিৎ মনে মনে
    কৌতুক অনুভব না করে পারে না। কিন্তু মুখে কিছু
    বলে না। সকৌতুকে চেয়ে থাকে লক্ষীকান্তর
    মুখের দিকে।

    অতঃপর লক্ষ্মীকান্ত
    সবিতাকে জিজ্ঞাস্য প্রশ্নগুলি করতে লাগলেন।

    আচ্ছা সবিতা দেবী, আপনি বলতে পারেন, আপনার পিতার আত্মীয়স্বজনের
    মধ্যে এমন কেউ আছে কিনা যার সঙ্গে আপনার বাবার শত্রুতা ছিল?

    না।

    কেন বলুন
    তো

    কারণ
    বাবার পিতৃবংশের দিক থেকে তাঁর কোন আত্মীয়-স্বজন ছিল বলে জানি না। বাবা ঠাকুর্দার
    একমাত্র ছেলে।

    আপনার পিতার একটি ভগ্নী ছিলেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা—

    পিসিমা আমার জন্মের পূর্বেই মারা যান শুনেছি। তাঁর একমাত্র পুত্র
    শুনেছি বর্মা না মালয় কোথায় ডাক্তারী করেন। তাঁকে জীবনে দেখিওনি কখনো, তাঁর সঙ্গে
    আমার পরিচয় হবারও কোন সৌভাগ্য হয়নি। আর বাবার মাতৃবংশে শুনেছি বাবার দুই মামা বাবার চাইতে বয়সে
    ছোট, এখনও বেঁচে
    আছেন, বিক্রমপুরের ওদিকে কোথায় জমিদার। তাঁদের সঙ্গেও আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

    হুঁ।
    আচ্ছা দেখুন, জমিদারী ও ব্যবসা চালাতে গেলে বহু, লোকের সঙ্গে শত্রুতা ইচ্ছা না থাকলেও হয়ে যায় জানি তো—এখন
    ব্যক্তিবিশেষের কথা

    না,
    সেরকম শত্রুও
    বাবার কেউ কোন দিন ছিল বলে জানি না।

    ভাল করে ভেবে বলুন
    সবিতা দেবী, এমনও হতে পারে আপনি জানেন
    না!

    আমার বাবাকে আমি খুব ভালভাবেই জানতাম।

    কিন্তু আমি তো শুনেছি আপনি আপনার সাত বছর বয়স থেকেই বিদেশে। কেবল
    মধ্যে মধ্যে ছুটিতে
    যা এখানে আসতেন।

    তাহলেও আমি তাঁকে খুব ভাল করেই জানতাম।

    ও! তাহলে এবারে আমি উঠব।

    আসুন।

    লক্ষ্মীকান্ত
    বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

    টীকা