বসন্ত বালক মুখ-ভরা হাসিটি,
    বাতাস ব’য়ে ওড়ে চুল—
    শীত চলে যায়, মারে তার গায়
    মোটা মোটা গোটা ফুল।
    আঁচল ভরে গেছে শত ফুলের মেলা,
    গোলাপ ছুঁড়ে মারে টগর চাঁপা বেলা—
    শীত বলে, ‘ভাই, এ কেমন খেলা,
    যাবার বেলা হল, আসি। ‘
    বসন্ত হাসিয়ে বসন ধ’রে টানে,
    পাগল করে দেয় কুহু কুহু গানে,
    ফুলের গন্ধ নিয়ে প্রাণের ‘পরে হানে—
    হাসির ‘পরে হানে হাসি।
    ওড়ে ফুলের রেণু, ফুলের পরিমল,
    ফুলের পাপড়ি উড়ে করে যে বিকল—
    কুসুমিত শাখা, বনপথ ঢাকা,
    ফুলের ‘পরে পড়ে ফুল।
    দক্ষিনে বাতাসে ওড়ে শীতের বেশ,
    উড়ে উড়ে পড়ে শীতের শুভ্র কেশ;
    কোন্‌ পথে যাবে না পায় উদ্দেশ,
    হয়ে যায় দিক ভুল।
    বসন্ত বালক হেসেই কুটিকুটি,
    টলমল করে রাঙা চরণ দুটি,
    গান গেয়ে পিছে ধায় ছুটিছুটি—
    বনে লুটোপুটি যায়।
    নদী তালি দেয় শত হাত তুলি,
    বলাবলি করে ডালপালাগুলি,
    লতায় লতায় হেসে কোলাকুলি—
    অঙ্গুলি তুলি চায়।
    রঙ্গ দেখে হাসে মল্লিকা মালতী,
    আশেপাশে হাসে কতই জাতী যূথী,
    মুখে বসন দিয়ে হাসে লজ্জাবতী—
    বনফুলবধূগুলি।
    কত পাখি ডাকে কত পাখি গায়,
    কিচিমিচিকিচি কত উড়ে যায়,
    এ পাশে ও পাশে মাথাটি হেলায়—
    নাচে পুচ্ছখানি তুলি।
    শীত চলে যায়, ফিরে ফিরে চায়,
    মনে মনে ভাবে ‘এ কেমন বিদায়’—
    হাসির জ্বালায় কাঁদিয়ে পালায়,
    ফুলঘায় হার মানে।
    শুকনো পাতা তার সঙ্গে উড়ে যায়,
    উত্তরে বাতাস করে হায়-হায়—
    আপাদমস্তক ঢেকে কুয়াশায়
    শীত গেল কোন্‌খানে।

    টীকা