যাত্রী
    মনে হয় প্রাণ এক দূর স্বচ্ছ সাগরের কূলে
    জন্ম নিয়েছিল কবে;
    পিছে মৃত্যুহীন জন্মহীন চিহ্নহীন
    কুয়াশার যে-ইঙ্গিত ছিল–
    সেই সব ধীরে ধীরে ভুলে গিয়ে অন্য এক মানে
    পেয়েছিল এখানে ভূমিষ্ঠ হয়ে—আলো জল আকাশের টানে;
    কেন যেন কাকে ভালোবেসে।
    মৃত্যু আর জীবনের কালো আর শাদা
    হৃদয়ে জড়িয়ে নিয়ে যাত্রী মানুষ
    এসেছে এ-পৃথিবীর দেশে;
    কঙ্কাল অঙ্গার কালি–চারি দিকে রক্তের ভিতরে
    অন্তহীন করুণ ইচ্ছার চিহ্ন দেখে
    পথ চিনে এ-ধুলোয় নিজের জন্মের চিহ্ন চেনাতে এলাম;
    কাকে তবু?
    পৃথিবীকে? আকাশকে? আকাশে যে-সূর্য জ্বলে তাকে?
    ধুলোর কণিকা অণুপরমাণু ছায়া বৃষ্টি জলকণিকাকে?
    নগর বন্দর রাষ্ট্র জ্ঞান অজ্ঞানের পৃথিবীকে?
    যেই কুজ্বটিকা ছিল জন্মসৃষ্টির আগে, আর
    যে-সব কুয়াশা রবে শেষে একদিন
    তার অন্ধকার আজ আলোর বলয়ে এসে পড়ে পলে-পলে;
    নীলিমার দিকে মন যেতে চায় প্রেমে;
    সনাতন কালো মহাসাগরের দিকে যেতে বলে।
    তবু আলো পৃথিবীর দিকে
    সূর্য রোজ সঙ্গে করে আনে
    যেই ঋতু যেই তিথি যে-জীবন যেই মৃত্যুরীতি
    মহাইতিহাস এসে এখনও জানে নি যার মানে;
    সেদিকে যেতেছে লোক গ্রানি প্ৰেম ক্ষয়
    নিত্য পদচিহ্নের মতো সঙ্গে করে;
    নদী আর মানুষের ধাবমান ধূসর হৃদয়
    রাত্ৰি পোহালো ভোরে—কাহিনীর কত শত ভোরে
    নব সূর্য নব পাখি নব চিহ্ন নগরে নিবাসে;
    নব-নব যাত্রীদের সাথে মিশে যায়
    প্ৰাণলোকযাত্রীদের ভিড়;
    হৃদয়ে চলার গতি গান আলো রয়েছে, অকূলে
    মানুষের পটভূমি হয়তো বা শাশ্বত যাত্রীর।
    আনন্দবাজার পত্রিকা। শারদীয় ১৩৬০

    টীকা