এখন সে কতো রাত;
    এখন অনেক লোক দেশ-মহাদেশের সব নগরীর গুঞ্জরণ হ’তে
    ঘুমের ভিতরে গিয়ে ছুটি চায়।
    পরস্পরের পাশে নগরীর ঘ্রাণের মতন
    নগরী ছড়ায়ে আছে।
    কোনো ঘুম নিঃসাড় মৃত্যুর নামান্তর।
    অনেকেরই ঘুম
    জেগে থাকা।
    নগরীর রাত্রি কোনো হৃদয়ের প্রেয়সীর মতো হ’তে গিয়ে
    নটীরও মতন তবু নয়–
    প্রেম নেই–প্রেমব্যসনেরও দিন শেষ হয়ে গেছে;
    একটি অমেয় সিঁড়ি মাটির উপর থেকে নক্ষত্রের
    আকাশে উঠেছে;
    উঠে ভেঙে গেছে।
    কোথাও মহান কিছু নেই আর তারপর।
    ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণের প্রয়াস রয়ে গেছে;
    তুচ্ছ নদী-সমুদ্রের চোরাগলি ঘিরে
    র’য়ে গেছে মাইন, ম্যাগ্নেটিক মাইন, অনন্ত কন্‌ভয়–
    মানবিকদের ক্লান্ত সাঁকো;
    এর চেয়ে মহীয়ান আজ কিছু নেই জেনে নিয়ে
    আমাদের প্রাণের উত্তরণ আসে নাকো।
    সূর্য অনেক দিন জ্ব’লে গেছে মিশরের মতো নীলিমায়।
    নক্ষত্র অনেক দিন জেগে আছে চীন, কুরুবর্ষের আকাশে।
    তারপর ঢের যুগ কেটে গেলে পর
    পরস্পরের কাছে মানুষ সফল হতে গিয়ে এক অস্পষ্ট রাত্রির
    অন্তর্যামী যাত্রীদের মতো
    জীবনের মানে বার ক’রে তবু জীবনের নিকট ব্যাহত
    হ’য়ে আরো চেতনার ব্যথায় চলেছে।
    মাঝে মাঝে থেমে চেয়ে দেখে
    মাটির উপর থেকে মানুষের আকাশে প্রয়াণ
    হ’লো তাই মানুষের ইতিহাসবিবর্ণ হৃদয়
    নগরে নগরে গ্রামে নিষ্প্রদীপ হয়।
    হেমন্তের রাতের আকাশে আজ কোনো তারা নেই।
    নগরীর–পৃথিবীর মানুষের চোখ থেকে ঘুম
    তবুও কেবলি ভেঙে যায়
    স্‌প্লিন্টারের অনন্ত নক্ষত্রে।
    পশ্চিমে প্রেতের মতন ইউরোপ;
    পূব দিকে প্রেতায়িত এশিয়ার মাথা;
    আফ্রিকার দেবতাত্মা জন্তুর মতন ঘনঘটাচ্ছন্নতা;
    ইয়াঙ্কির লেন-দেন ডলারে প্রত্যয়–
    এই সব মৃত হাত তবে
    নব নব ইতিহার-উন্মেষের না কি?–
    ভেবে কারু রক্তে স্থির প্রীতি নেই–নেই–
    অগণন তাপী সাধারণ প্রাচী অবাচীর উদীচীর মতন একাকী
    আজ নেই–কোথাও দিৎসা নেই–জেনে
    তবু রাত্রিকরোজ্জ্বল সমুদ্রের পাখি।

    টীকা