দু-এক মুহুর্তে শুধু রৌদ্রের সিন্ধুর কোলে তুমি আর আমি
    হে সিন্ধুসারস,
    মালাবার পাহাড়ের কোল ছেড়ে অতি দূর তরঙ্গের জানালায় নামি
    নাচিতেছ টারানটেলা-রহস্যের; আমি এই সমুদ্রের পারে চুপে থামি
    চেয়ে দেখি বরফের মতো শাদা ডানা-দুটি আকাশের গায়
    ধবল ফেনার মতো নেচে উঠে পৃথিবীরে আনন্দ জানায়।
    মুছে যায় পাহাড়ের শিঙে শিঙে গৃধিনীর অন্ধকার গান,
    আবার ফুরায় রাত্রি. হতাশ্বাস. আবার তোমার গান করিছে নির্মাণ
    নতুন সমুদ্র এক, শাদা রৌদ্র, সবুজ ঘাসের মতো প্রাণ
    পৃথিবীর ক্লান্ত বুকে; আবার তোমার গান
    শৈলের গহবর থেকে অন্ধকার তরঙ্গেরে করিছে আহবান।
    জানো কি অনেক যুগ চলে গেছে? মরে গেছে অনেক নৃপতি?
    অনেক সোনার ধান ঝরে গেছে জানো না কি? অনেক গহন ক্ষতি
    আমাদের ক্লান্ত করে দিয়ে গেছে-হারায়াছি আনন্দের গতি;
    ইচ্ছা, চিন্তা স্বপ্ন, ব্যথা, ভবিষ্যৎ, বর্তমান-এই বর্তমান
    হৃদয়ে বিরস গান গাহিতেছে আমাদের বেদনার আমরা সন্তান?
    জানি পাখি, শাদা পাখি, মালাবার ফেনার সন্তান,
    তুমি পিছে চাহো নাকো, তোমার অতীত নেই, স্মৃতি নেই, বুকে নেই আকীর্ণ ধূসর
    পান্ডুলিপি; পৃথিবীর পাখিদের মতো এই শীতরাতে ব্যথা আর কুয়াশার ঘর।
    যে রক্ত ঝরেছে তারে স্বপ্নে বেঁধে কল্পনার নিঃসঙ্গ প্রভাত
    নেই তব; নেই নিম্নভূমি-নেই আনন্দের অন্তরালে প্রশ্ন আর চিন্তার আঘাত।
    স্বপ্ন তুমি দেখি নি তো- পৃথিবীর সব পথ সব সিন্ধু ছেড়ে দিয়ে একা
    বিপরীত দ্বীপে দূরে মায়াবীর আরশিতে হয় শুধু দেখা
    রূপসীর সাথে এক; সন্ধ্যার নদীর ঢেউরে আসন্ন গল্পের মতো রেখা
    প্রাণে তার ম্লান চুল, চোখ তার হিজল বনের মতো কালো;
    একবার স্বপ্নে তারে দেখে ফেলে পৃথিবীর সব স্পষ্ট আলো
    নিভে গেছে; যেখানে সোনার মধু পুরারেছে, করে না বুনন
    মাছি আর; হলুদ পাতার গন্ধে ভরে ওঠে অবিচল শালিকের মন
    মেঘের দুপুর ভাসে-সোনালি চিলের বুক হয় উন্মন
    মেঘের দুপুরে, আহা, ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে;
    সেখানে আকাশে কেউ নেই আর, নেই আর পৃথিবীর ঘাসে।
    তুমি সেই নিস্তব্ধতা চেনো নাকো; অথবা রক্তের পথে
    পৃথিবীর ধূলির ভিতরে
    জানো নাকো আজও কাঞ্চী বিদিশার মুখশ্রী মাছির মতো ঝরে;
    সৌন্দর্য রাখিছে হাত অন্ধকার ক্ষুধার বিবরে;
    গভীর নীলাভতম ইচ্ছা চেষ্টা মানুষের-ইন্দ্রধনু ধরিবার ক্লান্ত আয়োজন
    হেমন্তের কুয়াশায় ফুরাতেছে অল্পপ্রাণ দিনের মতন।
    এই সব জানো নাকো প্রবালপঞ্জর ঘিরে ডানার উল্লাসে;
    রৌদ্রে ঝিলমিল করে শাদা ডানা, শাদা ফেনা-শিশুদের পাশে।
    হেলিওট্রোপের মতো দুপুরের অসীম আকাশে।
    ঝিকমিক করে রৌদ্রে বরফের মতো শাদা ডানা,
    যদিও এ পৃথিবীর স্বপ্ন চিন্তা সব তার অচেনা অজানা।
    চঞ্চল শরের নীড়ে কবে তুমি-জন্ম তুমি নিয়েছিলে কবে,
    বিষন্ন পৃথিবী ছেড়ে দলে দলে নেমেছিলে সবে
    আরব সমুদ্রে, আর চীনের সাগরে- দূর ভারতের সিন্ধুর উৎসবে।
    শীতার্ত এ পৃথিবীর আমরণ চেষ্টা ক্লান্তি বিহবলতা ছিড়ে
    নেমেছিলে কবে নীল সমুদ্রের নীড়ে।
    ধানের রসের গল্প পৃথিবীর-পৃথিবীর নরম অঘ্রান
    পৃথিবীর শঙ্খমালা নারী সেই-আর তার প্রেমিকেরা ম্লান
    নিঃসঙ্গ মুখের রূপ, বিশুদ্ধ তৃণের মতো প্রাণ,
    জানিবে না,কোনোদিন জানিবে না; কলরব করে উড়ে যায়
    শত স্নিগ্ধ সূর্য ওরা শাশ্বত সূর্যের তীব্রতায়।

    টীকা