তোমার নিকট থেকে সর্বদাই বিদায়ের কথা ছিলো
    সব চেয়ে আগে; জানি আমি।
    সে-দিনও তোমার সাথে মুখ-চেনা হয় নাই।
    তুমি যে এ-পৃথিবীতে র’য়ে গেছো।
    আমাকে বলেনি কেউ।
    কোথাও জল্কে ঘিরে পৃথিবীর অফুরান জল
    র’য়ে গেছে;–
    যে যার নিজের কাজে আছে, এই অনুভবে চ’লে
    শিয়রে নিয়ত স্ফীত সুর্যকে চেনে তারা;
    আকাশের সপ্রতিভ নক্ষত্রকে চিনে উদীচীর
    কোনো জল কী ক’রে অপর জল চিনে নেবে অন্য নির্ঝরের?
    তবুও জীবন ছুঁ’য়ে গেলে তুমি;-
    আমার চোখের থেকে নিমেষ নিহত
    সূর্যকে সরায়ে দিয়ে।
    স’রে যেতো; তবুও আয়ুর দিন ফুরোবার আগে।
    নব-নব সূর্যকে কে নারীর বদলে
    ছেড়ে দেয়; কেন দেব? সকল প্রতীতি উৎসবের
    চেয়ে তবু বড়ো
    স্থিরতর প্রিয় তুমি;- নিঃসূর্য নির্জন
    ক’রে দিতে এলে।
    মিলন ও বিদায়ের প্রয়োজনে আমি যদি মিলিত হতাম
    তোমার উৎসের সাথে, তবে আমি অন্য সব প্রেমিকের মতো
    বিরাট পৃথিবী আর সুবিশাল সময়কে সেবা ক’রে আত্মস্থ হতাম।
    তুমি তা জানো না, তবু, আমি জানি, একবার তোমাকে দেখেছি;-
    পিছনের পটভূমিকায় সময়ের
    শেষনাগ ছিলো, নেই;- বিজ্ঞানের ক্লান্ত নক্ষত্রেরা
    নিভে যায়;- মানুষ অপ্রিজ্ঞাত সে-আমায়; তবুও তাদের একজন
    গভীর মানুষী কেন নিজেকে চেনায়!
    আহা, তাকে অন্ধকার অনন্তের মতো আমি জেনে নিয়ে, তবু,
    অল্পায়ু রঙিন রৌদ্রে মানবের ইতিহাসে কে না জেনে কোথায় চলেছি!
    দুই
    চারিদিকে সৃজনের অন্ধকার র’য়ে গেছে, নারী,
    অবতীর্ণ শরীরের অনুভূতি ছাড়া আরো ভালো
    কোথাও দ্বিতীয় সূর্য নেই, যা জ্বালালে
    তোমার শরীর সব অলোকিত ক’রে দিয়ে স্পষ্ট ক’রে দেবে কোনো কালে
    শরীর যা র’য়ে গেছে।
    এই সব ঐশী কাল ভেঙে ফেলে দিয়ে
    নতুন সময় গ’ড়ে নিজেকে না গ’ড়ে তবু তুমি
    ব্রহ্মান্ডের অন্ধকারে একবার জন্মাবার হেতু
    অনুভব করেছিলে;-
    জন্ম-জন্মান্তের মৃত স্মরণের সাঁকো
    তোমার হৃদয় স্পর্শ করে ব’লে আজ
    আমাকে ইসারাপাত ক’রে গেলে তারি;-
    অপার কালের স্রোত না পেলে কী ক’রে তবু, নারী
    তুচ্ছ, খন্ড, অল্প সময়ের স্বত্ব কাটায়ে অঋণী তোমাকে কাছে পাবে-
    তোমার নিবিড় নিজ চোখ এসে নিজের বিষয় নিয়ে যাবে?
    সময়ের কক্ষ থেকে দূর কক্ষে চাবি
    খুলে ফেলে তুমি অন্য সব মেয়েদের
    আত্ম অন্তরঙ্গতার দান
    দেখায়ে অনন্তকাল ভেঙ্গে গেলে পরে,
    যে-দেশে নক্ষত্র নেই- কোথাও সময় নেই আর-
    আমারো হৃদয়ে নেই বিভা-
    দেখাবো নিজের হাতে- অবশেষে কী মকরকেতনে প্রতিভা।
    তিন
    তুমি আছো জেনে আমি অন্ধকার ভালো ভেবে যে-অতীত আর
    যেই শীত ক্লান্তিহীন কাটায়েছিলাম;
    তাই শুধু কাটায়েছি।
    কাটায়ে জানেছি এই-ই শূন্যে, তবু হৃদয়ের কাছে ছিল অন্য-কোন নাম।
    অন্তহীন অপেক্ষার চেয়ে তবে ভালো
    দ্বীপাতীত লক্ষ্যে অবিরাম চ’লে যাওয়া
    শোককে স্বীকার ক’রে অবশেষে তবে
    নিমেষের শরীরের উজ্জলতায়-অনন্তের জ্ঞানপাপ মুছে দিতে হবে।
    আজ এই ধ্বংসমত্ত অন্ধকার ভেদ ক’রে বিদ্যুতের মতো
    তুমি যে শরীর নিয়ে র’য়ে গেছো, সেই কথা সময়ের মনে
    জানাবার আশার কি একজন পুরুষের নির্জন শরীরে
    একটি পলক শুধু- হৃদয়বিহীন সব অপার আলোকবর্ষ ঘিরে?
    অধঃপতিত এই অসময়ে কে-বা সেই উপচার পুরুষ মানুষ?-
    ভাবি আমি;- জানি আমি,তবু
    সে-কথা আমাকে জানাবার
    হৃদয় আমার নেই;–
    যে-কোনো প্রেমিক আজ এখন আমার
    দেহের প্রতিভূ হয়ে নিজের নারীকে নিয়ে পৃথিবীর পথে
    একটি মুহূর্তে যদি আমার অনন্ত হয় মহিলার জ্যোতিষ্ক জগতে।

    টীকা