আমাকে
    তুমি দেখিয়েছিলে একদিন;
    মস্ত বড় ময়দান — দেবদারু পামের নিবিড় মাথা — মাইলের পর মাইল;
    দুপুরবেলার জনবিরল গভীর বাতাস
    দূর শূন্যে চিলের পাটকিলে ডানার ভিতর অস্পষ্ট হয়ে হারিয়ে যায়;
    জোয়ারের মতো ফিরে আসে আবার;
    জানালায় জানালায় অনেক ক্ষণ ধরে কথা বলে:
    পৃথিবীকে মায়াবী নদীর পারের দেশ বলে মনে হয়।
    তারপর
    দূরে
    অনেক দূরে
    খররৌদ্রে পা ছড়িয়ে বর্ষীয়সী রূপসীর মাতা ধান ভানে — গান গায় — গান গায়
    এই দুপুরের বাতাস।
    এক-একটা দুপুরে এক-একটা পরিপুর্ণ জীবন অতিবাহিত হয়ে যায় যেন।
    বিকেলে নরম মুহুর্ত;
    নদীর জলের ভিতর শম্বর, নীলগাই, হরিণের ছায়ার আসা যাওয়া;
    একটা ধবর চিতল-হরিণীর ছায়া
    আতার ধূসর ক্ষীরে গড়া মুর্তির মতো
    নদীর জলে
    সমস্ত বিকেলবেলা ধরে
    স্থির!
    মাঝে মাঝে অনেক দূর থেকে শ্মশানের চন্দনকাঠের চিতার গন্ধ
    আগুণের — ঘিয়ের ঘ্রাণ;
    বিকেলে
    অসম্ভব বিষন্নতা।
    ঝাউ হরিতকী শাল, নিভস্ত সূর্যে
    পিয়াশাল পিয়াল আমলকী দেবদারু–
    বাতাসের বুকে স্পৃহা, উৎসাহ, জীবনের ফেনা;
    শাদা শাদাছিট কালো পায়রার ওড়াওড়ি জোছনায়–ছায়ায়,
    রাত্রি;
    নক্ষত্র ও নক্ষত্রের
    অতীত নিস্তব্ধতা!
    মরণের পরপারে বড়ো অন্ধকার
    এই সব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো।

    টীকা