তোমার শরীর —
    তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর — মানুষের ভিড়
    রাত্রি আর দিন
    তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্‌ দিকে জানি নি তা — মানুষের ভিড়
    রাত্রি আর দিন
    তোমারে নিয়েছে ডেকে কোনদিকে জানি নি তা — হয়েছে মলিন
    চক্ষু এই — ছিঁড়ে গেছি — ফেঁড়ে গেছি — পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
    কত দিন — রাত্রি গেছে কেটে!
    কত দেহ এল, গেল, হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
    দিয়েছি ফিরায়ে সব — সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
    নক্ষত্রের তলে
    বসে আছি — সমুদ্রের জলে
    দেহ ধুয়ে নিয়া
    তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!
    তোমার শরীর —
    তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর — মানুষের ভিড়
    রাত্রি আর দিন
    তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্‌দিকে — ফলে গেছে কতবার,
    ঝরে গেছে তৃণ!
    *
    আমারে চাও না তুমি আজ আর, জানি;
    তোমার শরীর ছানি
    মিটায় পিপাসা
    কে সে আজ! — তোমার রক্তের ভালোবাসা
    দিয়েছ কাহারে!
    কে বা সেই! — আমি এই সমুদ্রের পারে
    বসে আছি একা আজ — ঐ দূর নক্ষত্রের কাছে
    আজ আর প্রশ্ন নাই — মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে
    চক্ষে তার — এলোমেলো রয়েছে আকাশ!
    উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা! — তারই তলে পৃথিবীর ঘাস
    ফলে ওঠে — পৃথিবীর তৃণ
    ঝড়ে পড়ে — পৃথিবীর রাত্রি আর দিন
    কেটে যায়!
    উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা — তারই তলে হায়!
    *
    জানি আমি — আমি যাব চলে
    তোমার অনেক আগে;
    তারপর, সমুদ্র গাহিবে গান বহুদিন —
    আকাশে আকাশে যাবে জ্বলে
    নক্ষত্র অনেক রাত আরো,
    নক্ষত্র অনেক রাত আরো,
    (যদিও তোমারও
    রাত্রি আর দিন শেষ হবে
    একদিন কবে!)
    আমি চলে যাব, তবু, সমুদ্রের ভাষা
    রয়ে যাবে — তোমার পিপাসা
    ফুরাবে না পৃথিবীর ধুলো মাটি তৃণ
    রহিবে তোমার তরে — রাত্রি আর দিন
    রয়ে যাবে রয়ে যাবে তোমার শরীর,
    আর এই পৃথিবীর মানুষের ভিড়।
    *
    আমারে খুজিয়াছিলে তুমি একদিন —
    কখন হারায়ে যাই — এই ভয়ে নয়ন মলিন
    করেছিলে তুমি! —
    জানি আমি; তবু, এই পৃথিবীর ফসলের ভূমি
    আকাশের তারার মতন
    ফলিয়া ওঠে না রোজ — দেহ ঝরে — ঝরে যায় মন
    তার আগে!
    এই বর্তমান — তার দু — পায়ের দাগে
    মুছে যায় পৃথিবীর পর,
    একদিন হয়েছে যা তার রেখা, ধূলার অক্ষর!
    আমারে হারায়ে আজ চোখ ম্লান করিবে না তুমি —
    জানি আমি; পৃথিবীর ফসলের ভূমি
    আকাশের তারার মতন
    ফলিয়া ওঠে না রোজ —
    দেহ ঝরে, তার আগে আমাদের ঝরে যায় মন!
    *
    আমার পায়ের তলে ঝরে যায় তৃণ —
    তার আগে এই রাত্রি — দিন
    পড়িতেছে ঝরে!
    এই রাত্রি, এই দিন রেখেছিলে ভরে
    তোমার পায়ের শব্দে, শুনেছি তা আমি!
    কখন গিয়েছে তবু থামি
    সেই শব্দে! — গেছ তুমি চলে
    সেই দিন সেই রাত্রি ফুরায়েছে বলে!
    আমার পায়ের তলে ঝরে নাই তৃণ —
    তবু সেই রাত্রি আর দিন
    পড়ে গেল ঝ’রে।
    সেই রাত্রি — সেই দিন — তোমার পায়ের শব্দে রেখেছিলে ভরে!
    *
    জানি আমি, খুঁজিবে না আজিকে আমারে
    তুমি আর; নক্ষত্রের পারে
    যদি আমি চলে যাই,
    পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
    যদি আমি —
    আমারে খুঁজিতে তবু আসিবে না আজ;
    তোমার পায়ের শব্দ গেল কবে থামি
    আমার এ নক্ষত্রের তলে! —
    জানি তবু, নদীর জলের মতো পা তোমার চলে —
    তোমার শরীর আজ ঝরে
    রাত্রির ঢেউয়ের মতো কোনো এক ঢেউয়ের উপরে!
    যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
    যদি আমি চলে যাই
    নক্ষত্রের পারে —
    জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!
    *
    তুমি যদি রহিতে দাঁড়ায়ে!
    নক্ষত্র সরিয়া যায়, তবু যদি তোমার দু — পায়ে
    হারায়ে ফেলিতে পথ — চলার পিপাসা! —
    একবারে ভালোবেসে — যদি ভালোবাসিতে চাহিতে তুমি সেই ভালোবাসা।
    আমার এখানে এসে যেতে যদি থামি! —
    কিন্তু তুমি চলে গেছ, তবু কেন আমি
    রয়েছি দাঁড়ায়ে!
    নক্ষত্র সরিয়া যায় — তবু কেন আমার এ পায়ে
    হারায়ে ফেলেছি পথ চলার পিপাসা!
    একবার ভালোবেসে কেন আমি ভালোবাসি সেই ভালোবাসা!
    *
    চলিতে চাহিয়াছিলে তুমি একদিন
    আমার এ পথে — কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন।
    জানি আমি, আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই।
    তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি! — তাই আস নাই
    আমার এখানে তুমি আর!
    একদিন কত কথা বলেছিলে, তবু বলিবার
    সেইদিনও ছিল না তো কিছু — তবু বলিবার
    আমার এ পথে তুমি এসেছিলে — বলেছিলে কত কথা —
    কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন;
    আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই;
    তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি — তাই আস নাই!
    *
    তোমার দু চোখ দিয়ে একদিন কতবার চেয়েছ আমারে।
    আলো অন্ধকারে
    তোমার পায়ের শব্দ কতবার শুনিয়াছি আমি!
    নিকটে নিকটে আমি ছিলাম তোমার তবু সেইদিন —
    আজ রাত্রে আসিয়াছি নামি
    এই দূর সমুদ্রের জলে!
    যে নক্ষত্র দেখ নাই কোনোদিন, দাঁড়ায়েছি আজ তার তলে!
    সারাদিন হাঁটিয়াছি আমি পায়ে পায়ে
    বালকের মতো এক — তারপর, গিয়েছি হারায়ে
    সমুদ্রের জলে,
    নক্ষত্রের তলে!
    রাত্রে, অন্ধকারে!
    তোমার পায়ের শব্দ শুনিব না তবু আজ — জানি আমি,
    আজ তবু আসিবে না খুঁজিতে আমারে!
    *
    তোমার শরীর —
    তাই নিয়ে এসেছিলে একবার — তারপর, মানুষের ভিড়
    রাত্রি আর দিন।
    তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্‌দিকে জানি নি তা — হয়েছে মলিন
    চক্ষু এই — ছিঁড়ে গেছি — ফেঁড়ে গেছি — পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
    কত দিন — রাত্রি গেছে কেটে
    কত দেহ এল, গেল — হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
    দিয়েছি ফিরায়ে সব — সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
    নক্ষত্রের তলে
    বসে আছি — সমুদ্রের জলে
    দেহ ধুয়ে নিয়া
    তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!

    টীকা