তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে-
    আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!
    যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে,
    পথের পাতার মতো তুমিও তখন
    আমার বুকের ‘পরে শুয়ে রবে?
    অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
    সেদিন তোমার!
    তোমার এ জীবনের ধার
    ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?
    আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল,
    তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই!-
    শুধু তার স্বাদ
    তোমারে কি শান্তি দেবে!
    আমি ঝরে যাব, তবু জীবন অগাধ
    তোমারে রাখিবে ধরে সেইদিন পৃথিবীর’ পরে-
    আমার সকল গান ও তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!
    রয়েছি সবুজ মাঠে-ঘাসে-
    আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশে।
    জীবনের রঙ তবু ফলানো কি হয়
    এই সব ছুঁয়ে ছেনে!-সে এক বিস্ময়
    পৃথিবীতে নাই তাহা – আকাশেও নাই তার স্থল-
    চেনে নাই তারে অই সমুদ্রের জল!
    রাতে রাতে হেঁটে হেঁটে নক্ষত্রের সনে
    তারে আমি পাই নাই, কোনো এক মানুষীর মনে
    কোনো এক মানুষের তরে
    যে জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে!-
    নক্ষত্রের চেয়ে আরো নিঃশব্দে আসনে
    কোনো এক মানুষের তরে এক মানুষীর মনে!
    একবার এথা ক’য়ে দেশ আর দিকের দেবতা
    বোবা হয়ে পড়ে থাকে–ভুলে যায় কথা!
    যে-আগুন উঠেছিল তাদের চোখের তলে জ্ব’লে
    নিভে যায় — ডুবে যায় — তারা যায় স্খ’লে!
    নতুন আকাঙক্ষা আসে — চলে আসে নতুন সময়
    পুরনো সে নক্ষত্রের দিন শেষ হয়,
    নতুনেরা আসিতেছে ব’লে!–
    আমার বুকের থেকে তবুও কি পড়িয়াছে স্খ’লে
    কোনো এক মানুষীর তরে
    যেই প্রেম জ্বালায়েছি পুরোহিত হ’য়ে তার বুকের উপরে!
    আমি সেই পুরোহিত– সেই পুরোহিত!–
    যে নক্ষত্র মরে যায়, তাহার বুকের শীত
    লাগিতেছে আমার শরীরে–
    যেই তারা জেগে আছে, তার দিকে ফিরে
    তুমি আছো জেগে–
    যে আকাশে জ্বলিতেছে, তার মতো মনের আবেগে
    জেগে আছো–
    জানিয়াছে তুমি এক নিশ্চয়তা — হয়েছ নিশ্চয়!
    হয়ে যায় আকাশের তলে কত আলো-কত আগুনের ক্ষয়;
    কতবার বর্তমান হ’য়ে গেছে ব্যথিত অতীত–
    তবুও তোমার বুকে লাগে নাই শীত
    যে নক্ষত্র ঝরে যায় তার!
    যে পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস– আকাশ তোমার!
    জীবনের স্বাদ লয়ে জেগে আছ– তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে
    পার তুমি;
    তোমার আকাশের তুমি উষ্ণ হয়ে আছ, তবু–
    বাহিরের আকাশের শীতে
    নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,
    নক্ষত্রের মতন হৃদয়
    পড়িতেছে ঝ’রে–
    ক্লান্ত হয়ে– শিশিরের মতো শব্দ ক’রে!
    জানো নাকো তুমি তার স্বাদ,
    তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,
    জীবন অগাধ!
    হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন–
    পথের পাতার মতো তুমিও তখন
    আমার বুকে পরে শুয়ে রবে? — অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
    সেদিন তোমার!
    তোমার আকাশ — আলো — জীবনের ধার
    ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?
    আমার বুকের পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল
    তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই! শুধু তার স্বাদ
    তোমারে কি শান্তি দেবে!
    আমি চ’লে যাব — তবু জীবন অগাধ
    তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর ‘পরে;–
    আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!

    টীকা