জয়, তরুণের জয়!
    জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, জয় জয় চিন্ময়!
    স্পর্শে তোমার নিশা টুটেছিল, উষা উঠেছিল জেগে
    পূর্ব তোরণে, বাংলা আকাশে , অরুণ-রঙিন মেঘে;
    আলোকে তোমার ভারত, ইশয়া-জগৎ গেছিল রেঙে।
    হে যুবক মুসাফের,
    স্থবিরের বুকে ধ্বনিলে শ্‌ঙ্খ জাগরণপর্বের!
    জিঞ্জির-বাঁধা ভীত চকিতেরে অভয় দানিলে আসি,
    সুপ্তের বুকে বাজালে তোমার বিষাণ হে সন্ন্যাসী,
    রক্ষের বুকে বাজালে তোমার কালীয়দমন বাঁশি!
    আসিলে সবসাচী,
    কোদন্ডে তব নব উল্লাসে নাচিয়া উঠিল প্রাচী!
    টঙ্কারে তব দিকে দিকে শুধু রণিয়া উঠিল জয়,
    ডঙ্কা তোমার উঠিল বাজিয়া মাভৈঃ মন্ত্রময়;
    শঙ্কাহরণ ওহে সৈনিক, নাহিক তোমার ক্ষয়!
    তৃতীয় নয়ন তব
    ম্লান বাসনার মনসিজ নাশি জ্বালাইত উৎসব!
    কলুষ-পাতকে, ধূর্জটি, তব পিনাক উঠিত রুখে,
    হানিতে আঘাত দিবানিশি তুমি ক্লেদ-কামনার বুকে,
    অসুর-আলয়ে শিব-সন্ন্যাসী বেড়াতে শঙ্খ ফুঁকে!
    কৃষ্ণচক্র সম
    ক্লৈব্যের হৃদে এসেছিলে তুমি ওগো পুরুষোত্তম,
    এসেছিলে তুমি ভিখারির দেশে ভিখারির ধর মাগি
    নেমেছিলে তুমি বাউলের দলে, হে তরুণ বৈরাগী!
    মর্মে তোমার বাজিত বেদনা আর্ত জীবের লাগি।
    হে প্রেমিক মহাজন,
    তোমার পানেতে তাকাইল কোটি দরিদ্রনারায়ণ;
    অনাথের বেশে ভগবান এসে তোমার তোরণতলে
    বারবার যবে কেঁদে কেঁদে গেল কাতর আঁখির জলে,
    অর্পিলে তব প্রীতি-উপায়ন প্রাণের কুসুমদলে।
    কোথা পাপী? তাপী কোথা?
    ওগো ধ্যানী. তুমি পতিত পাবন যজ্ঞে সাজিলে হোতা!
    শিব-সুন্দর-সত্যের লাগি শুরু করে দিলে হোম,
    কোটি পঞ্চমা আতুরের তরে কাঁপায়ে তুলিলে ব্যোম,
    মন্ত্রে তোমার বাজিল বিপুল শানি- স্বসি- ওঁ!
    সোনার মুকুট ভেঙে
    ললাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে!
    স্বার্থ লালসা পাসরি ধরিলে আত্মাহুতির ডালি,
    যঞ্জের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি,
    বিভাতি তোমার তাই তো অটুট রহিল অংশুমালী!
    দরিয়ার দেশে নদী!
    বোধিসত্ত্বের আলয়ে তুমি গো নবীন শ্যামল বোধি!
    হিংসার রণে আসিলে পথিক প্রেম-খঞ্জর হাতে,
    আসিলে করুণাপ্রদীপ হসে- হিংসার অমারাতে,
    ব্যাধি মন্বন্তরে এলে তুমি সুধাজলধরি সংঘাতে!
    মহামারী ক্রন্দন
    ঘুটাইলে তুমি শীতল পরশে, ওগো সুকোমল চন্দন!
    বজ্রকঠোর, কুসুমদুল, আসিলে লোকোত্তর;
    হানিলে কুলিশ কখন ও ঢালিলে নির্মল নির্ঝর,
    নাশিলে পাতক, পাতকীর তুমি অর্পিলে নির্ভর।
    চক্রগদার সাথে
    এনেছিলে তুমি শঙ্খ পদ্ম, হে ঋষি, তোমার হাতে;
    এনেছিলে তুমি ঝড় বিদ্যুৎ পেয়েছিলে তুমি সাম,
    এনেছিলে তুমি রণ-বিপ্লব-শানি- কুসুমদাম;
    মাভৈঃ শঙ্খে জাগিছে তোমার নরনারায়ণ-নাম!
    জয়, তরুণের জয়!
    আত্মহুতির রক্ত কখনও আঁধারে হয় না লয়!
    তাপসের হাড় বজ্রের মতো বেজে উঠে বারবার!
    নাহি রে মরণে বিনাশ, শ্মশানে নাহি তার সংহার,
    দেশে দেশে তার বীণা বাজে-বাজে কালে কালে ঝঙ্কার!

    টীকা